Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

ছড়ানো চিন্তাকোষ ধরা রইল দুই মলাটে

পাঁচ দশকেরও বেশি ব্যাপ্ত নাট্যকর্মজীবন, অভিনেতা নির্দেশক নাটককার সংগঠক হিসেবে যিনি এখনও সক্রিয়, সেই বিভাস চক্রবর্তী যখন কলম ধরেন নাটকের মঞ্চায়ন নিয়ে আলোচনার জন্যে, তখন থিয়েটারের শিল্পরীতি নিয়ে নতুন ভাবনার খোরাক পায় বাঙালি।

শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০১৫ ০০:০১
Share: Save:

পাঁচ দশকেরও বেশি ব্যাপ্ত নাট্যকর্মজীবন, অভিনেতা নির্দেশক নাটককার সংগঠক হিসেবে যিনি এখনও সক্রিয়, সেই বিভাস চক্রবর্তী যখন কলম ধরেন নাটকের মঞ্চায়ন নিয়ে আলোচনার জন্যে, তখন থিয়েটারের শিল্পরীতি নিয়ে নতুন ভাবনার খোরাক পায় বাঙালি। তাঁর থিয়েটার যা দেখা তা নিয়ে লেখা-র (প্রতিভাস, ৩০০.০০) ভূমিকা-য় পবিত্র সরকার জানিয়েছেন ‘এ বইটি পড়ে তরুণ নাট্যশিক্ষার্থীরা নাটক কীভাবে করতে হয় তা যেমন জানবেন তেমনই ভাবী দর্শক ও নাট্যসমালোচকরা নাটক কীভাবে দেখতে হয় তাও শিখবেন।’ গত তিন দশকের বাংলা তথা ভারতীয় থিয়েটারের আলোচনা বইটিতে।

ব্রাত্যজন নাট্যপত্র-এ গত ছ’বছরে ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত প্রবন্ধাদি থেকে বাছাই করে বেরিয়েছে ব্রাত্যজন নাট্যপত্র/ নির্বাচিত প্রবন্ধ সংকলন (কালিন্দী ব্রাত্যজন, ৩০০.০০)। সম্পাদক ব্রাত্য বসু ভূমিকা-য় জানিয়েছেন ‘নাট্যপত্রগুলির মধ্যে ছড়ানো চিন্তাকোষগুলি ছেঁকে এই বইয়ের দুমলাটের মধ্যে তুলে ধরলাম আমরা।’ প্রভাতকুমার দাসের ‘বাংলা নাট্যপত্রের নানা পর্যায়’, বা বিজয় ভট্টাচার্যের ‘জেলা থিয়েটার: ছয় দশক’ বাঙালির নাট্যচর্চার প্রত্যন্তে পৌঁছে দেয় পাঠককে, আর এ পরিক্রমণের চেহারাটা কেমন, তার একটা আন্দাজ দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘থিয়েটার ও অর্থনীতি’তে। বাংলা নাট্যচর্চা মাটির কাছাকাছি কতটা পৌঁছতে পারছে তারও একটা আন্দাজ জয় গোস্বামীর ‘মঞ্চের বাইরে, মাটিতে’। ‘বাংলামঞ্চের অভিনেত্রী: একটি অসম্পূর্ণ প্রতিবেদন’ রচনাটিতে অভিনেত্রীদের সম্পর্কে রুশতী সেনের মনে হয়েছে, ‘নিজের জীবনের শৃঙ্খল-স্বাধীনতার আখ্যানটা তাঁরা কমই রেখে যান...। তাঁর সামাজিক ব্রাত্যতার পোড় নিয়েও হয়তো কেতকী দত্ত অতটা পারতেন না, যদি না থাকত শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো সম্পাদকের ক্রমাগত প্রশ্ন!’ চিন্ময় গুহর মন্তব্য ‘শেকসপিয়ার পাঠের সঙ্গে সঙ্গে ঔপনিবেশিক ভারতবর্ষের যে নিজস্ব শেকড় খোঁজার লড়াই চলছিল তা বুঝতে অসুবিধে হয় না।’ (‘শেকসপিয়ার ও আমরা’)

শেক্সপিয়র সম্পর্কে শিশিরকুমার ভাদুড়ীর মত: ‘পাপ ও পুণ্য, সুখ ও দুঃখ, প্রেম ও বিরক্তি, আনন্দ বিষাদ সমানভাবেই মানুষের মনকে আলোড়িত করে। শেক্‌স্‌পীয়র সর্বদেশে সর্বকালে আদৃত, কেননা মানবমনের চিরন্তনী বৃত্তিগুলিকে আশ্রয় করেই তাঁর প্রতিভার বিকাশ।’ শিশিরকুমার রচিত শেক্‌স্‌পীয়র (৮০.০০) পুস্তিকাকারে প্রকাশ করল সূত্রধর, সত্যজিৎ রায়ের প্রচ্ছদসহ। সূত্রধর-সংস্করণ বেরল বাংলা রঙ্গালয় ও শিশিরকুমার-এরও (২৫০.০০), হেমেন্দ্রকুমার রায়ের রচনা। মলয় রক্ষিত এ-বইয়ের সযত্ন সম্পাদনায় জানিয়েছেন ‘হেমেন্দ্রকুমার রায়ের শিশির-চর্চাকে আমরা একটি প্রকল্প হিসেবেই দেখতে পারি। এই প্রকল্প গিরিশযুগের মোহ আর অন্ধতা থেকে, তার অনুর্বর অজন্মা ভূমি থেকে বাংলা থিয়েটারকে মুক্তি দিতেই নবযুগসূচক শিশিরকুমারের আবির্ভাব— এমনই এক বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠা দেয়।’ প্রাসঙ্গিক পরিচিতি, শিশিরকুমার অভিনীত চরিত্রাদির ফর্দ ঋদ্ধ করেছে বইটিকে।

অর্ধশতক ধরে উৎপল দত্ত ফাউন্ডেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার স্টাডিজ্-এর মুখপত্র এপিক থিয়েটার-এ প্রকাশিত হয়েছে কবি প্রাবন্ধিক চলচ্চিত্রকার ঐতিহাসিক শিল্পসমালোচক নাট্যকারদের প্রবন্ধ। নাটক নিয়ে মৌলিক ভাবনার পাশাপাশি এ-পত্র মনস্ক থেকেছে নিরন্তর জাতীয়-আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পালাবদল নিয়ে। অরূপ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় তিন খণ্ডে প্রকাশ পেল এপিক থিয়েটার/ সুবর্ণজয়ন্তী সংকলন (দীপ। প্রথম দু’টি খণ্ড ৩০০.০০, তৃতীয়টি ৪০০.০০)। প্রচ্ছদ ও চিত্রাঙ্কন সত্যজিৎ রায়ের। সম্পাদক উল্লেখ করেছেন: ‘উৎপল দত্তের অনেক সাড়াজাগানো বিদগ্ধ প্রবন্ধ, স্বরচিত ও অনুবাদ নাটক এবং চিত্তাকর্ষক সাক্ষাৎকারে সমৃদ্ধ এই পত্রিকা।’ এমনই একটি রচনা উৎপল দত্তের, ‘বের্টল্ট ব্রেশ্‌ট কমরেড’, বেরিয়েছিল প্রথম সংখ্যায়, ১৯৬৪-তে: ‘ইংরেজরা যখন শুধুমাত্র ট্র্যাজিক দিকটায় আবেগের দিকটায় আবদ্ধ হয়ে আছেন তখন ব্রেশ্‌ট শেক্সপিয়ার-এর এপিক দিকটা উন্মুক্ত করছেন... হ্যামলেট নাটকের সুবিশাল রাজনৈতিক পটভূমিকাটা, যার জন্য হ্যামলেট এপিক নায়ক, যাকে বাদ দিয়ে হ্যামলেট-কে মাত্র এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি করে রাখা হয়েছে এতকাল...’’।

ষাট দশকের উত্তাল থিয়েটারি আবহে ১৯৬৬-তে প্রকাশিত হয় নাট্যপাক্ষিক থিয়েটার। সম্পাদক ছিলেন পবিত্র সরকার ও শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়; প্রেরণা, সাংগঠনিক সহায়তায় অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। মাত্র এক বছর আয়ু ছিল পত্রিকাটির, তবু আজও এটি দর্শনগত বৈশিষ্ট্য বা স্বাতন্ত্র্যে সমকালীন। মলয় রক্ষিতের সংকলন-সম্পাদনায় প্রকাশ পেয়েছে থিয়েটার/ একটি ব্যতিক্রমী নাট্যপাক্ষিক (দে’জ, ৫০০.০০)। পূর্ণাঙ্গ সূচি, প্রচ্ছদ, দুর্লভ ছবির সঙ্গে অনূদিত রচনা সে সময়ের বাংলা থিয়েটারের গমগমে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক আবহটা খেয়াল করিয়ে দেয়। দীর্ঘ ভূমিকা লেখার সঙ্গে মলয় গুরুত্বপূর্ণ একটি সাক্ষাৎকারও নিয়েছেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

সায়ক নাট্যপত্র-এর সাক্ষাৎকার সংখ্যাটি গুরুত্বপূর্ণ: ‘সমান্তরাল থিয়েটারের ৬ নাট্যব্যক্তিত্ব’ (সম্পা: প্রভাতকুমার দাস। ১০০.০০)। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত অরুণ মুখোপাধ্যায় বিভাস চক্রবর্তী মনোজ মিত্র হরিমাধব মুখোপাধ্যায়ের কথোপকথন নাট্যকর্মী এবং দর্শক উভয়কেই আগ্রহী করবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE