Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

প্রাণহরা সন্দেশ

কবিতার নাম ‘থাকা’। গোটা কবিতাটাতেই যেন সন্ধে গড়িয়ে রাত্রি নামছে কোনও এক হেমন্ত শেষের শীতের মুহূর্ত। অথচ শব্দ-বাক্যে কোথাও তার উল্লেখ নেই। ‘তাকে’ কবিতাটা এ বইয়ের প্রায় সমস্ত কবিতার থেকেই আলাদা। তার চরিত্রও সম্পূর্ণ ভিন্ন।

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

প্রাণহরা সন্দেশ
জয় গোস্বামী
২০০.০০

সিগনেট প্রেস

জয় গোস্বামীর ‘প্রাণহরা সন্দেশ’ কাব্যগ্রন্থের প্রথম কবিতাগুচ্ছটির নামেই বইয়ের নাম। সেই গুচ্ছের পাঁচ নম্বর কবিতায় তিনি জানাচ্ছেন— ‘আবার দুর্বোধ্যে যাব/ যা বুঝিনি সেরকম সচল দুর্গমে।’ এ কথা উল্লেখ করার কারণ— আজ থেকে বহু কাল আগে প্রকাশিত ‘সূর্য পোড়া ছাই’-এর প্রস্তাবনা কবিতায় তিনি লিখেছিলেন, ‘সে কাব্য অনেক তার মূল ছন্দ গাছ’। সেই বইয়ের কবিতাগুচ্ছরা এক আশ্চর্য জগতের সন্ধান দিয়েছিল সে দিনের বাংলা কবিতার পাঠকদের। অবচেতনা-বিষাদ-যৌনতা পৌঁছে গিয়েছিল এক অত্যাশ্চর্য সৌভিক মায়ায়। সেই কণ্ঠস্বরই জয়ের কাছ থেকে আমরা শুনতে পাব বেশ কিছু বছর পরে ‘মৌতাত মহেশ্বর’-এ। সেখানেও শব্দবুননের এক অতীন্দ্রিয় জগৎ। যেখানে জয় জানাচ্ছেন— ‘সে ছিল গুন্ডার প্রাণে হাসি।’। সে মৌতাত এখনও বাঙালি কবিতা পাঠককে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আর তার মধ্যেই এসে পড়ল ওই দুই কাব্যগ্রন্থের স্বরেরই ‘প্রাণহরা সন্দেশ’। এ বইয়ের ‘নতুন জানালা’ অংশটি পড়তে পড়তে মোহাবিষ্ট হতে হয়। কবিতার নাম ‘থাকা’। গোটা কবিতাটাতেই যেন সন্ধে গড়িয়ে রাত্রি নামছে কোনও এক হেমন্ত শেষের শীতের মুহূর্ত। অথচ শব্দ-বাক্যে কোথাও তার উল্লেখ নেই। ‘তাকে’ কবিতাটা এ বইয়ের প্রায় সমস্ত কবিতার থেকেই আলাদা। তার চরিত্রও সম্পূর্ণ ভিন্ন।

‘কে?’ নামে কবিতায়, ‘আমারও তো ইচ্ছে হয় তাকে উষাকাল বলে ডাকি/ তাকে বলি, মাটি লেপা ঘর, খোড়ো চাল/ সে যেন উঠোন যাতে তিন-চারটে পায়রা দানা খায়/ যেমন/ সে আমার কে হয় তা বুঝিয়ে বলাই বড় দায়!’ যাকে বলে শব্দের সৌন্দর্য। এই বইয়ে জয় তাঁর অতীতের মুনশিয়ানা উপহার দিলেন। যৌবনে তিনি প্রশ্ন করেছিলেন, ‘কী করে আজ আবির দেব তোমাদের ওই বান্ধবীকে’। সেই তিনিই ‘রঙের কাহিনি’ নামের গুচ্ছে লিখছেন— ‘এতটা বয়স হল, / আজ দেখা যায়/ পথে যে আবিরটুকু পড়ে আছে/ তা কেবল উৎসবের ক্ষত’। নদীপথ বদলের মতো তাঁর কবিতার বাঁক বদল। প্রাণহরা সন্দেশ— হতে পারে খেয়ে নেওয়া যায়, কিন্তু সেই মানসিক-খাদ্যের স্মৃতি কবিতার পাঠকের কাছে থেকে যাবে দীর্ঘকাল। প্রচ্ছদ ও ভিতরের সাদা-কালো ছবিতে যোগ্য যুগলবন্দি সুব্রত চৌধুরীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE