Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ছবিতে ভারত

আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে একের পর এক পেশাদার ব্রিটিশ শিল্পী ভারতে আসতে শুরু করেন, হজেস ছিলেন গোড়ার দিকের দলেই। ভারতে ছ’বছর থাকার সময় হেস্টিংস ছিলেন তাঁর পোষ্টা।

পিকচারিং ইন্ডিয়া/ পিপল, প্লেসেস অ্যান্ড দি ওয়ার্লড অব দি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি

পিকচারিং ইন্ডিয়া/ পিপল, প্লেসেস অ্যান্ড দি ওয়ার্লড অব দি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি

শেষ আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০০:৪১
Share: Save:

১৭৮২ সাল। গভর্নর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস গুরুতর অসুস্থ। হেস্টিংসের স্ত্রী তাঁর কাছে পৌঁছনোর জন্য গঙ্গাপথে তিন দিন নৌকা করে আসেন। শিল্পী উইলিয়াম হজেস এই বিপজ্জনক যাত্রার একটি অসাধারণ ছবি এঁকেছিলেন। ইংল্যান্ডে ফেরার পর ছবিটি হেস্টিংসের শিল্পসংগ্রহে মুখ্য স্থান অধিকার করে। ছবিটি নিছক একটি ঘটনার চিত্ররূপ নয়, হজেস এখানে প্রকৃতিকে মানুষের বিপন্নতা ও জীবনের নানা পরীক্ষার প্রতীক করে তুলেছেন। আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে একের পর এক পেশাদার ব্রিটিশ শিল্পী ভারতে আসতে শুরু করেন, হজেস ছিলেন গোড়ার দিকের দলেই। ভারতে ছ’বছর থাকার সময় হেস্টিংস ছিলেন তাঁর পোষ্টা।

এর পর জোহান জ়োফানি, ওজ়িয়াস হামফ্রি, টমাস ও উইলিয়াম ড্যানিয়েল, চার্লস ডয়লি, উইলিয়াম প্রিন্সেপ, জর্জ চিনারি, টিলি কেট্‌ল, স্যামুয়েল ডেভিস, টমাস হিকি— এসেছেন কত শিল্পী। ছবি এঁকেছেন অপেশাদাররাও। এক দিকে ভারতীয় উপমহাদেশে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাফল্য, ক্ষমতা বিস্তারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা প্রতীকী ঘটনা বা স্থান, অন্য দিকে প্রাচীন স্থাপত্য, শহর-বাজার, মানুষজনের বৈচিত্র, নানা পেশা, প্রকৃতির রূপ, বিশিষ্ট জনের প্রতিকৃতি সবই তুলে ধরেছেন তাঁরা। জলরং, তেলরং, অ্যাকোয়াটিন্ট ইত্যাদি নানা মাধ্যমে এ সব ছবি যেমন কৌতূহলী ক্রেতার পোষকতা পেয়েছে, তেমনই ইংল্যান্ডে বহু বার প্রদর্শিত হয়ে সে দেশের মানুষের মনে ভারত সম্পর্কে ধারণা গড়ে তুলতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, সুগম করেছে কোম্পানির রাজত্ব থেকে ব্রিটিশ রাজ প্রতিষ্ঠার পথ। কোম্পানির অফিসারদের পৃষ্ঠপোষণায় ভারতীয় শিল্পীরাও সমসাময়িক নানা দৃশ্য এঁকেছেন।

ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে রক্ষিত এই সব ছবির বিপুল সংগ্রহ থেকে বেছে নিয়ে জন ম্যাকালির তুলে ধরেছেন ভারত-ব্রিটেন সম্পর্কের এক বিশেষ মাত্রা। সাম্রাজ্য, রাষ্ট্রক্ষমতার সঙ্গে এই ধরনের ছবির সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা খুব সুলভ নয়। মিলড্রেড আর্চারের বইগুলি যেমন এই আলোচনার ভিত্তি তৈরি করেছে, তেমনই রমিতা রায় প্রমুখের কাজও নতুন ভাবনার দিশা দেখিয়েছে। ম্যাকালির সে ভাবনাকে অনেকটাই চারিয়ে দিতে পেরেছেন এই বইয়ের মাধ্যমে। কিছু পরিচিত ছবির সঙ্গে অনেক কম-দেখা বা অদেখা সুমুদ্রিত ছবি নিঃসন্দেহে এই বইয়ের সম্পদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE