নির্বাচিত ভাষণমালা
শঙ্খ ঘোষ
৩৫০.০০
যুক্ত
ভাষণ হতে পারে দু’রকম। কোনও রচনা সামনে না রেখেই কথা বলে যাওয়া, এ হল এক রকম। অন্য রকমটা হল, শ্রোতাদের সামনে লিপিবদ্ধ রচনাটি পড়ে শোনানো। এ বইয়ের শুরুতেই শঙ্খ ঘোষ সম্ভাব্য পাঠকদের অনুরোধ করেছেন: “তাঁরা যেন মনে রাখেন যে এ-বইয়ের সবকটি লেখা রচিত আকারে পড়া হয়েছিল শ্রোতাদের সামনে।” আর বাংলাদেশের প্রকাশক নিশাত জাহান রানা, ভাষণগুলির একটি ছাড়া বাকিগুলি কোন কোন বইয়ে গ্রন্থিত তা জানিয়ে লিখেছেন, “তাঁর এই ভাষণগুলিও আমার কাছে প্রায় কবিতার মতই আনন্দপাঠ।” বস্তুত, কবি শঙ্খ ঘোষের বৈশিষ্ট্য ছাপিয়েও গদ্যকার, এবং বক্তা শঙ্খ ঘোষের যে স্বতন্ত্র পরিচিতি বেরিয়ে আসে, মনোযোগী পাঠকের কাছে তা সততই এক বিশেষ সম্পদ হয়ে দাঁড়ায়। এই বক্তৃতামালাতেও তা সুস্পষ্ট।
রবীন্দ্রনাথকে কী ভাবে পড়তে হবে তা প্রতি মুহূর্তে শেখান যিনি, সেই শঙ্খ ঘোষের এ বইয়ের প্রথম প্রবন্ধটিই (বা ভাষণ) রবীন্দ্রগান নিয়ে: “পুরোনো-সব বন্ধুরা মিলে পুনর্মিলনে বসা হলো একদিন, সন্ধ্যাবেলায়, বিদ্যুৎবিভ্রাটে সেদিন ঘর ছিল অন্ধকার।... এঁদের মধ্যে কেউ বলেছিলেন, রবীন্দ্রনাথের কাছে তিনি পান না কিছু! কেউ-বা বলেন, পড়েননি তিনি রবীন্দ্রনাথ।... যখন প্রস্তাব হলো গানের, অনিবার্যভাবে গলায় উঠে এল রবীন্দ্রনাথেরই গান।... সবারই গলায় একে একে গুন্গুনিয়ে উঠল সুর, রবীন্দ্রনাথেরই সুর:— সাম্প্রতিকের সঙ্গে তাঁর ঘোষিত ব্যবধান এক মুহূর্তে উড়ে গেল কোথায়।” রচনাটির মধ্যপর্বে মন্তব্য করেছেন তিনি: “রবীন্দ্রনাথের গান নিজেকে রচনা করে তুলবার গান। এ এক বিরামহীন আত্মজাগরণের আত্মদীক্ষার গান... ।”
এ ভাবেই আবার শেষ রচনাটিতে অল্প বয়সে জীবনানন্দ থেকে আহরণের কথা লিখেছেন তিনি: “সৃষ্টিকাজে পাওয়া যায় একাকিত্বের এক সামর্থ্য।” বইটির বাকি প্রবন্ধাদিতে বিভিন্ন বিষয়মুখ, সেখানে বিষ্ণু দে, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু প্রমুখের শিল্পযাপনের অনুষঙ্গে প্রায় ধ্রুবপদের মতো এসে পড়েন রবীন্দ্রনাথ— “তাঁর সমগ্র জীবনদৃষ্টিতে ছিল সেই দুঃখময় পথে মানুষ হয়ে উঠবার দিশাসন্ধান,” লিখেছেন শঙ্খ ঘোষ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy