Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা

দেবেন্দ্রমোহন বসু, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাজ যে ইউরোপীয় প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের সমগোত্রীয়, তাঁরা কেবল পরাধীন দেশের মানুষ বলেই স্বীকৃতি পাননি, তা নিয়ে আলোচনা হয় খুব কম।

শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৭
Share: Save:

গল্পে গল্পে আকাশ চেনা
বাসুদেব ভট্টাচার্য
৩০০.০০, আনন্দ পাবলিশার্স

যে আকাশের তলায় জন্মেছি, যে আকাশের তলায় বড় হচ্ছি, যে আকাশের তলায় সারাটা জীবন কাটাব, যে আকাশের তলায় একদিন মারা যাব, সেই সারা জীবনের সঙ্গী আকাশটাকে ভাল ভাবে চিনব না? কৈশোর থেকে এই আকাশ না-চেনার বেদনাই তাড়িয়ে বেড়ায় লেখককে, সম্ভবত সে জন্যেই তাঁর জ্যোতির্বিজ্ঞান পড়া, বা কলকাতার স্কাই ওয়াচার্স অ্যাসোসিয়েশনে যোগ দেওয়া। এবং দীর্ঘকাল ধরে আকাশচর্চা ও পর্যবেক্ষণ। তাঁর এই আকাশ-আবিষ্টতার কারণটাও জানিয়েছেন ‘‘বিস্ময়ে ভরা আনন্দ পাই বলে।’’ ফলে লিখে ফেলেছেন এমন একটি বই যা সব বয়সি পাঠকেরই ভাল লাগবে। এতে আছে সৌরজগৎ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত অথচ স্বাদু আলোচনা। গ্রহ-নক্ষত্রের বিবরণ থেকে তাদের আবিষ্কারের ইতিহাস, তারামণ্ডলী নিয়ে নানা দেশের নানান পৌরাণিক কাহিনি। কী ভাবে চিনতে হয় নক্ষত্রমণ্ডলী, এবং তাদের আকৃতি আর আনাচেকানাচে লুকিয়ে থাকা বিবিধ রহস্যময় বস্তু। সর্বোপরি অজানা আকাশ কী ভাবে দেখতে হয়, সে সম্পর্কেও আগ্রহ তৈরি করে দেন লেখক। লিখছেন ‘‘সন্তানদের আকাশ চেনানোর শিক্ষার যে ধারা একদা প্রচলিত ছিল সেটা ক্রমশ বন্ধ হয়ে গেছে। পিতামাতা নিজেরা আকাশ না-চেনায় এবং জ্যোতির্বিজ্ঞানের অগ্রগতি সম্পর্কে অজ্ঞ থাকায় সন্তানও আকাশ সম্পর্কে অজ্ঞ থাকে।’’ এই ধারাবাহিক অজ্ঞতাজনিত অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মুক্তি দেবে তাঁর বইটি।

বাঙালির বিজ্ঞানচর্চা/ প্রাক্‌-স্বাধীনতা পর্ব
সম্পাদক: ধনঞ্জয় ঘোষাল
৪৫০.০০, আশাদীপ

প্রাক্‌-স্বাধীনতা পর্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখ্য বাঙালি বিজ্ঞানী, বাংলা বিজ্ঞান গ্রন্থ ও বিজ্ঞান পত্রিকা নিয়ে আলোচনার সঙ্কলন এই গ্রন্থটি। উপনিবেশে মৌলিক বিজ্ঞান গবেষণার অনুকূল পরিস্থিতি থেকে বঞ্চিত হয়েও কেবল অধ্যবসায়ের জোরে এ দেশে যে-ধরনের বিজ্ঞানচর্চা হয়েছিল তা আমাদের আজ বিস্মিত করে। দেবেন্দ্রমোহন বসু, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের কাজ যে ইউরোপীয় প্রথিতযশা বিজ্ঞানীদের সমগোত্রীয়, তাঁরা কেবল পরাধীন দেশের মানুষ বলেই স্বীকৃতি পাননি, তা নিয়ে আলোচনা হয় খুব কম। আমরা খেয়াল করি না প্রফুল্লচন্দ্রের অন্যতম অবদান তাঁর সৃজনশীল ছাত্রধারা। কুলেশচন্দ্র করও তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার একটি ছোট গোষ্ঠী বা স্কুল তৈরি করেছিলেন, তিনি তাঁর সম্পাদিত ও প্রকাশিত পত্রিকায় ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় গবেষণাপত্র ছাপতেন। উনিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে হিন্দু কলেজ স্থাপনের মধ্য দিয়ে বাংলায় ইউরোপীয় বিজ্ঞানের আসন পাতা হয়েছিল ধরে নেওয়া যেতে পারে। ঔপনিবেশিক স্বার্থ মিটিয়েও ক্রমশ স্বাধীন ও মৌলিক গবেষণার দিকে টেনে নিয়ে যাওয়ার রোমাঞ্চকর ইতিহাস, এই গ্রন্থ থেকে খণ্ডিত ভাবে কিছু কিছু আহরণ করে নেওয়াও সম্ভব। সুবীরকুমার সেন তাঁর নিবন্ধে উল্লেখ করেছেন, বিশ শতকে বাঙালি বিজ্ঞানীদের বড় অংশ দেশের নানা প্রান্তে গিয়ে বিজ্ঞান পঠনপাঠন ও বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনে ব্যস্ত ছিলেন। অঙ্গুলিমেয় কয়েকজন ছাড়া বাকি বিজ্ঞানীদের নাম আমরা ভুলতে বসেছি। এই গ্রন্থটি সেই বিস্মরণের প্রক্রিয়াটাকে সম্ভবত আর একটু পিছিয়ে দেবে।

বঙ্গে বিজ্ঞান/ উন্মেষপর্ব
আশীষ লাহিড়ী
২৫০.০০, সাহিত্য সংসদ

রবীন্দ্রনাথ মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘রাজেন্দ্রলাল (মিত্র) ছিলেন ‘ইয়োরোপীয় অর্থে পণ্ডিত’।’’ আপ্তবাক্য বা শাস্ত্রবাক্য নয়, বাস্তব ক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত ও পরীক্ষার মাধ্যমে খাঁটি বলে প্রমাণিত তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ— এই বেকনীয় পদ্ধতির সার্থক প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন রাজেন্দ্রলাল তাঁর ইতিহাস ও পুরাতত্ত্ব চর্চায়। বিজ্ঞানী তিনি ছিলেন না, কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানচেতনা প্রসারে ব্রতী ছিলেন। কাজেই বঙ্গে বিজ্ঞানের উন্মেষপর্বে মুষ্টিমেয় ক’জন বাঙালি পণ্ডিতের মধ্যে অবশ্যই রাজেন্দ্রলাল স্মরণীয়। উন্মেষ, বিকাশ ও পরিণতি— এই তিনটি পর্বে বঙ্গে বিজ্ঞানের সংক্ষিপ্ত বৃত্তান্ত রচনায় ব্রতী আশীষ লাহিড়ী, এটি তার প্রথম খণ্ড। উনিশ শতকের শুরু থেকে ঔপনিবেশিক শাসন-বাহিত আধুনিক বিজ্ঞান বাঙালি মনীষীদের কী বিপুল ভাবে এবং কতটা নাড়া দিয়েছিল, তারই কালানুক্রমিক ইতিবৃত্ত ধরা রইল এখানে, ছ’জন বিশিষ্ট বাঙালির বৈজ্ঞানিক কৃতি ও বিজ্ঞানভাবনার মধ্যে দিয়ে। আগ্রহী কিন্তু অ-বিশেষজ্ঞ পাঠক তাঁর উদ্দিষ্ট, তাই লেখাগুলি টীকা-কণ্টকিত নয়। রাজেন্দ্রলাল ছাড়াও আছেন রাধানাথ শিকদার, অক্ষয়কুমার দত্ত, ভূদেব মুখোপাধ্যায়, মহেন্দ্রলাল সরকার ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন ধারা বুঝতে গেলে আধুনিক বিজ্ঞান জানতে হবে, ১৮৭৩-এ বঙ্কিম তাঁর একটি ইংরেজি প্রবন্ধে এ কথা খুব স্পষ্ট ভাবে বলেছিলেন। সুকুমার সেনের মতে, বঙ্কিমের বিজ্ঞানরহস্য (১৮৭৫) বইটি প্রকাশের মাধ্যমেই বাংলায় ‘সায়েন্স’ অর্থে ‘বিজ্ঞান’ কথাটা পাকাপাকি ভাবে চালু হয়ে যায়। কিন্তু তিনিই আবার আউগুস্ত কোঁত-এর ‘মানবধর্ম’কে ঈশ্বরভিত্তিক ধর্মে টেনে নিয়ে এলেন, বিজ্ঞানের সঙ্গে মেলালেন ঈশ্বর ও হিন্দুধর্ম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Book Book Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE