ভ্রমণ/ দেশে দেশে
কৃষ্ণা বসু
২৫০.০০, আনন্দ পাবলিশার্স
১৯৩৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বর মাস অস্ট্রিয়ার বাদগাস্টাইনে কাটান সুভাষচন্দ্র এবং সেই কয়েক সপ্তাহে লিখেছিলেন তাঁর দ্বিতীয় বই (অসমাপ্ত) ‘ইন্ডিয়ান পিলগ্রিম’। সঙ্গে ছিলেন এমিলিয়ে। সাত দশক বাদে তাঁদের পরের প্রজন্ম দেখে এলেন সেই বাড়ি। আবার সিঙ্গাপুরে গিয়ে মন খারাপ লেগেছে, কেন সেখানে ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ‘ফ্রিডম ট্রেল’ নেই আজও! মায়ার রোডে নেতাজি যে বাড়িতে ছিলেন, আজ তা ভেঙে বহুতল। ভারত সরকার কি এ বাড়ি রক্ষার চেষ্টা করতে পারতেন না? কার্শিয়াঙের গিধা পাহাড়ে শরৎচন্দ্র বসুর বাংলোয় অন্তরিন ছিলেন নেতাজি, সেখানেও ষাট-সত্তরের দশকে অনেক বার থেকেছেন কৃষ্ণা বসু, শিশির বসুর কাছে নেতাজির কথা শুনতে শুনতে পৌঁছে যেতেন স্বাধীনতা সংগ্রামের দিনগুলিতে। এমনকি পেনাঙের সঙ্গেও জড়িয়ে আছেন নেতাজি— তাঁকে আনার জন্য জাপানি সাবমেরিনটি যাত্রা করেছিল পেনাং থেকেই। পরে তিনি পেনাং এসেছেন, সেখানে ছিল আইএনএ-র গুপ্তচর বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। কিংবা পাকিস্তান, যেখানে আজ়াদ হিন্দ বাহিনীর বহু অফিসার থেকে সৈনিকের পরিবার আজও আছেন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম নেতাজির প্রতি তাঁদের বিরল আনুগত্য। সে দেশে তাঁদের আপ্যায়ন নিঃসন্দেহে সারা জীবনের সঞ্চয়। এর বাইরে চিন কি মিশর, কাশ্মীর কি বঙ্গোপসাগর, বস্টন-লন্ডন-ভিয়েতনাম তো আছেই। টুকরো টুকরো ভ্রমণকথায় ইতিহাসের অচ্ছেদ্য সূত্র।
ব্রিটিশ ভারতে শিক্ষাষড়যন্ত্র / ঔপনিবেশিক শিক্ষার ইতিবৃত্ত
পুলক চন্দ
২৫০.০০, দে’জ পাবলিশিং
‘‘যে বাস্তবতা-বিচ্যুত শিক্ষা শ্রমকে, সাধারণ মানুষকে অবজ্ঞা করতে শেখায় এবং একই সঙ্গে দেশের স্বল্প সংখ্যক মানুষকে বিশাল শ্রমজীবী জনসাধারণ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বিরুদ্ধ শিবিরে নিয়ে যায়— তাই তো হল প্রকৃত কুশিক্ষা...’’। বইটির সুর শুরুতেই স্পষ্ট করে বেঁধে দিয়েছেন লেখক, পরতে পরতে দেখিয়েছেন শিক্ষার জনবিরোধী চরিত্র তৈরির ধারাবাহিক ঔপনিবেশিক প্রয়াসের ইতিবৃত্ত। তার পরিপ্রেক্ষিতে যেমন ছিল ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের ইতিহাস, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ সেই শাসনের সহযোগী আত্মপ্রতিষ্ঠাকামী এ দেশীয় মধ্যশ্রেণির মানুষের ভূমিকা আর অন্য দিকে শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের ঔপনিবেশিকতা-বিরোধী সংগ্রামের নিরবচ্ছিন্ন প্রবাহ। যেমন, ১৮৩৫ সালের মধ্যেই জাঁকিয়ে বসেছিল হিন্দু কলেজ, শ্রীরামপুর মিশনারি ও আলেকজ়ান্ডার ডাফের স্কুল। ইংরেজিশিক্ষার ইপ্সিত প্রভাব ফুটে উঠতে লাগল বিদেশি শিক্ষায় আলোকপ্রাপ্ত তরুণদের মধ্যে। শাসক ও শাসিতের যোগসাজশে প্রমাণিত হয়ে গেল ইংরেজের মহৎ উদ্দেশ্য, ‘ভারতবাসীদের উদ্ধার করা’। অথচ, এরই মধ্যে ব্রিটিশ শোষণে জর্জরিত সাধারণ মানুষ, কৃষক সমাজ অন্তত ১২টি ভয়ঙ্কর দুর্ভিক্ষের কবলে পড়েছে, মৃত্যু হয়েছে কয়েক কোটি মানুষের। ধ্বংস হয়েছে স্বাধীন বাণিজ্য, শিল্পসম্পদ। কম করে ২৭টি ক্ষেত্রে বিদ্রোহী কৃষকরা সশস্ত্র সংগ্রামে নেমেছেন। এর পরে এসেছে মেকলের মিনিট, মুসলমান সমাজে ইংরেজি শিক্ষা, নারীশিক্ষা সংক্রান্ত নথিপত্র ইত্যাদি। দু’দশক পরে নতুন সংস্করণে এল মূল্যবান বইটি।
বাংলা প্রকাশনার সেকাল ও একাল
মুকুল গুহ
৫৫০.০০, সাহিত্যলোক
‘‘আমি আর কিছু করতে পারি না বলেই লিখি।... আমার জীবনে আমি মাত্র একজন লেখকের কাছেই আমার ঋণ স্বীকার করি। তিনি কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী।’’ এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। এমন কত লেখক নাট্যকর্মী বিজ্ঞানী চিন্তাবিদ সম্পাদক অধ্যাপক অভিনেত্রী সংগঠক প্রকাশক গীতিকারের মুখোমুখি হয়েছেন মুকুল গুহ, কথা বলেছেন সাহিত্য রচনা, বইপত্র ও প্রকাশনা নিয়ে। তাঁদের অধিকাংশই আজ প্রয়াত। বাংলা প্রকাশনার সূচনাপর্ব থেকে বিশ শতকের শেষ দিক অবধি তাঁর অবাধ যাতায়াত, শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের মতো প্রাচীন সাহিত্য থেকে ছাপাখানার বিবর্তন, বাংলা সাহিত্যে নকশা, অনুবাদের সম্ভাবনা, গুটেনবার্গ থেকে ইন্টারনেট, পুস্তক প্রকাশনা বনাম বৈদ্যুতিন মাধ্যম, শিক্ষামূলক গ্রন্থ প্রকাশনার সমস্যা, বই পড়া না-পড়া, বই রফতানি, বইমেলার ইতিকথা ইত্যাদি বহু বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি প্রায় সাড়ে চারশো পাতার বইটির অর্ধেক জুড়েই রয়েছে সাক্ষাৎকারভিত্তিক রচনা— যেখানে উঠে এসেছে লেখার অন্দর, রঙ্গমঞ্চ-নাটক ও সাহিত্য, বিজ্ঞান ও সাহিত্য, বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের কাছে পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য, সংবাদপত্রের রবিবাসর ও সাহিত্য, সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র, ভিন্ন বৃত্তিজীবীর সাহিত্যপাঠ, সংস্কৃত চর্চা ও বাংলা সাহিত্য, প্রশাসন ও সাহিত্যচর্চার মতো বিচিত্র কৌতূহল-জাগানো প্রসঙ্গ। সাহিত্য থেকে চলচ্চিত্র প্রসঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘খুব বেশি সাহিত্যগুণসম্পন্ন [রচনা] হলে অসুবিধার সৃষ্টি হতে পারে বলে আমার মনে হয়। যেমন— রবীন্দ্রনাথের অনেক সংলাপ যদি সরাসরি সিনেমায় আসে তাহলে অসুবিধা হতে পারে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy