Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
আলোচনা

ফুটে ওঠে মনের অস্থিরতা

শিল্পী অভিষেক ভার্মার কাজের শিরোনাম ‘কালো তারারা জ্বলছে’। দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তিগত বেঁচে থাকা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেঁচে থাকার টানাপড়েনের অনিশ্চয়তার ভেতরেই তাঁর শিল্পকর্মটির জন্ম।

মূল্যায়ন: গ্যালারি ৮৮-তে তরুণ শিল্পীদের দলগত প্রদর্শনীর একটি ছবি

মূল্যায়ন: গ্যালারি ৮৮-তে তরুণ শিল্পীদের দলগত প্রদর্শনীর একটি ছবি

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

গ্যালারি ৮৮-র উদ্যোগে তরুণ শিল্পীদের নিয়ে একটি দলগত প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল,‘পারস্পেকটা ১৭’ শিরোনামে। তরুণ শিল্পীদের ঠিকমতো মূল্যায়ন করার জন্যে এই উদ্যম প্রশংসনীয়।

শিল্পী অভিষেক ভার্মার কাজের শিরোনাম ‘কালো তারারা জ্বলছে’। দৈনন্দিন জীবনে ব্যক্তিগত বেঁচে থাকা এবং সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেঁচে থাকার টানাপড়েনের অনিশ্চয়তার ভেতরেই তাঁর শিল্পকর্মটির জন্ম। শিল্পীর উদ্দেশ্য হল, তাঁর কাজের মধ্য দিয়ে মনের অস্থিরতা অনিশ্চয়তা ব্যক্ত করা। স্নেহ মেহরার কাজ নিসর্গ প্রকৃতি হলেও নিছক সেটিই নয়। তিনি বিশেষ একটি সময় এবং স্থানের গতিময়তা প্রকৃতির ওপর যে ভাবে প্রভাব বিস্তার করে, তাই নিয়ে ছবি করেছেন। উলটোপালটা বেড়ে ওঠা প্রকৃতি এবং তার পতন শিল্পী মেহরার ছবির বিষয়। তিনি কাজের তথ্য সংগ্রহ করেন খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন এবং নিজের তোলা আলোকচিত্র থেকে। যেখানে জলবায়ু সংক্রান্ত পরিবর্তন এবং পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা সাধারণ মানুষের জীবনে প্রভাব বিস্তার করে। তিনি ধরতে চান লেয়ারে লেয়ারে এই অদ্ভুত নিসর্গ প্রকৃতিকে আপন ভাষায় আপন অনুভূতি দিয়ে।

ঝাড়খণ্ডের শিল্পী অর্জুন দাস কাজ করেন কলকাতায়। গ্রামেগঞ্জে গ্রামবাসীরা বড় বড় গাছ অনেক সময়েই স্থানীয় পরিচিতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে থাকেন। সেখানে নানা লোকগাথা এবং লোকবিশ্বাস গড়ে ওঠে এবং বহু প্রজন্মের মুখে মুখে ঘুরে সেই গল্পগুচ্ছ যেন সত্যি হয়ে ওঠে। এ হেন গাছ যখন কেটে ফেলা হয় উন্নতিকে জায়গা দেওয়ার জন্য, তখন সেই গল্পগাথা কোথায় হারিয়ে যায়। এবং গল্প তৈরি হয় ক্ষমতার লড়াইয়ের, বিশাল থেকে বিশালতর মেশিনের অস্তিত্ব নিয়ে, আধিপত্য বিস্তারের কথা নিয়ে। কিন্তু কোথায় যেন এই ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাছগুলো শহুরে দানবের কাছে পুরোপুরি হেরে যায় না। এই গাছের মোটা ছালের ওপর গ্রাফিটি করে, নতুন করে তাদের কথা বলতে চেয়েছেন শিল্পী। গাছের ছালের ওপর গাড়ির চাকার ছাপ যেন হৃদয়ে মোচড় দেওয়া কষ্টের আবেদন জানায়।

শিল্পী রোশন ছাবড়িয়া মধ্যবিত্ত মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং পারিবারিক পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করেন। শিল্পীর কাজে রসিকতা আছে। তিনি তাঁর কাজের দৃশ্যগত তথ্য গ্রহণ করেন ম্যাগাজিনের চিত্রালঙ্করণ থেকে, গ্রন্থ থেকে, মহিলাদের ম্যাগাজিন থেকে। কিন্তু সব কিছুর মধ্যে এবং সব রেখাচিত্রের মধ্যে নন্দনতত্ত্ব ও উৎকর্ষের প্রশ্ন এসে পড়ে। রেখাচিত্রর সঙ্গে শিল্পী রোশনের লেখা পাঠ্যাংশ বেশ উপভোগ্য। প্রীতম সাহার বিষয়বস্তু অনেকাংশে তাঁর আশপাশের বিভিন্ন জিনিসের ছবি এবং প্রতিকৃতি। তিনি একটি গামবুট-এর ভাস্কর্য সৃষ্টি করেছেন সিমেন্টে, যার বাইরের পৃষ্ঠতল চকচকে মেঝে বা গৃহতলের মতো। চিত্তাকর্ষক কাজ।

বিভিন্ন স্তর বা পরতে কাজ করেন অনিন্দিতা ভট্টাচার্য। জালিকাজের ভেতর থেকে গল্পগুলো খুঁজে নিতে হয়। পুরনো ঘটনা, কিন্তু সোজাসুজি বলা নয়। অনবদ্য কল্পনা এবং ধ্যানধারণা।

চাণকেশভ কোফি কর্ণাটকের লোকগাথা নিয়ে ছবি করেন। মানুষ ফেরারি গাড়ির মতো ছুটছে। শহরের ব্যস্ততা না-বোঝার ভ্রম এবং ভ্রমেই পথচলা। তাঁর একটি শিল্পকর্মে এক দিকে মন্দির এবং অপর দিকে মসজিদ। যখন উদ্যোক্তারা এলেন সব জনবসতি মন্দির মসজিদ ধুলিসাৎ করতে, মানুষ নিজের নিজের বিশ্বাস নিয়ে পড়ে রইল। ফলে ধ্বংস হল না মন্দির ও মসজিদ। জনবসতি নির্মূল হল, কিন্তু থেকে গেল তাদের বিশ্বাসের প্রতীক।

শমিতা বসু

সুন্দর সুচারু রাগমাধুর্য

শাস্ত্রীয় সংগীতশিল্পী প্রয়াত কিশোরী আমোনকরের স্মৃতির উদ্দেশে শাস্ত্রীয় সংগীত-সন্ধ্যার আয়োজন করেছিল অনুবিন্দ সংগীত আশ্রম। বিড়লা অ্যাকাডেমিতে। শুরুতেই কণ্ঠ সংগীত পরিবেশন করলেন পাপড়ি চক্রবর্তী এবং সরোদে পার্থসারথি।

গোড়ায় তিনি শোনালেন গুরুর কাছে শেখা প্রথম রাগ শুদ্ধ কল্যাণ। এই রাগে বিলম্বিত এবং দ্রুত বন্দিশ পরিবেশন করলেন তিনি। তবলায় সঙ্গত করেছেন সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়। শুরুর আলাপেই সুরেলা কণ্ঠের সুচারু উপস্থাপনায় রাগমাধুর্যকে ফুটিয়ে তুললেন তিনি। দ্রুত লয়ে তানবিস্তারে তাঁর পরিশীলিত কণ্ঠের পরিচয় পাওয়া গেল। তবে শুরুর রাগালাপ একটু দীর্ঘ হলে ভাল লাগত।

অনুষ্ঠানের নির্ধারিত সংক্ষিপ্ত সময়সীমাই হয়তো এ ক্ষেত্রে শিল্পীর সুরবিহারের স্বাধীনতাকে কিছুটা খর্ব করেছে। এর পর তিনি শোনালেন রাগ মীর-মল্লারে চমৎকার একটি বন্দিশ। কানাড়া এবং মল্লার অঙ্গের সুরবিন্যাস নিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলছিলেন শিল্পী। সবশেষে শোনালেন মীরার ভজন ‘মতবারো বাদল আয়ো রে’। দ্বিতীয় পর্বে ছিল শিল্পী পার্থসারথির সরোদবাদন। শিল্পী বেছে নিয়েছিলেন বর্ষার দু’টি রাগ। তাঁর প্রথম নিবেদন ছিল রাগ মেঘ।

আলাপ-জোড়-ঝালায় রাগরূপ ফুটিয়ে তুললেন শিল্পী। তাঁর সরোদবাদনে অভিজ্ঞ হাতের ছাপ সুস্পষ্ট। কিন্তু মেঘ রাগের অঙ্গবিন্যাসে সে দিন তেমন বৈচিত্র পাওয়া গেল না। এর কারণ অবশ্যই অনুষ্ঠান-সূচনায় বিলম্ব। সময়ের অভাবে শিল্পী তাঁর সরোদবাদন সংক্ষিপ্ত করে দেন। মিঞামল্লারে ছোট একটি গৎ শুনিয়ে পার্থসারথি অনুষ্ঠান শেষ করেন। তাঁকে তবলায় সহযোগিতা করেছেন আশিস পাল।

চিত্রিতা চক্রবর্তী

অনুষ্ঠান

• বিড়লা অ্যাকাডেমিতে ঢাকুরিয়া বেদপঞ্চম আয়োজন করেছিল ‘রবি স্মরণে বর্ষা বরণ’। গানে ছিলেন অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রাবণী সেন। এ ছাড়াও ছিলেন চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত, সুছন্দা ঘোষ, শমিতা মুখোপাধ্যায়, ইন্দ্রাণী দত্ত প্রমুখ। সম্মেলক গানে শ্রাবণী সেন অ্যাকাডেমি ও আনন্দধারা।

• রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, গোলপার্ক-এ অনুষ্ঠিত হল ‘মল্লার মিউজিক ফেস্টিভ্যাল’। শিল্পীরা ছিলেন ওয়াসিম আহমেদ খান, জ্যোতি গোহ, অশোক মুখোপাধ্যায়, নিত্যানন্দ হলদিপুর ও তন্ময় বসু।

• ফণীভুষণ বিদ্যাবিনোদ মঞ্চে আবির্ভাব আয়োজন করেছিল গান ও পাঠের অনুষ্ঠান ‘এই শ্রাবণে’। গাইলেন শ্রীকুমার চট্টোপাধ্যায়, সুধীন সরকার, তাপস নাগ, সুচিন সিংহ প্রমুখ। স্বরচিত কবিতায় কেশবরঞ্জন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shows Painting Sculpture Song
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE