Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস: পর্ব ১৮

শেষ নাহি যে

বান্ধবীকে দেখে রাগে হাড়পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে দরিয়ার। মেয়েটা স্কুলে পড়ার সময়ে এত গায়ে পড়া ছিল না।

ছবি: শুভম দে সরকার

ছবি: শুভম দে সরকার

ইন্দ্রনীল সান্যাল
শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১০
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: দরিয়া ও বিহানের একসঙ্গে সিনেমা দেখতে যাওয়ার প্ল্যান ছিল। কিন্তু বিহান আসে না। দরিয়া বিহানের ফোনও বন্ধ পায়। দরিয়া ভেবে নেয়, বিহান তার জীবন থেকে চলে গিয়েছে। এ দিকে মেয়ের কোনও খবর না পেয়ে চিন্তিত সীমা ফোন করেন সাম্যব্রতকে।

পরের দিন রবিবার। মণিদীপার সঙ্গে দেখা হওয়ার কোনও সুযোগ নেই। মোবাইল সুইচ্‌ড অফ। দরিয়া পড়ার বই আর নোটস নিয়ে বসেছে। এমন সময়ে মণিদীপা এসে হাজির।

বান্ধবীকে দেখে রাগে হাড়পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে দরিয়ার। মেয়েটা স্কুলে পড়ার সময়ে এত গায়ে পড়া ছিল না। কলেজে ভর্তি হওয়ার পরে আজেবাজে ছেলেদের সঙ্গে মিশে খেলুড়ে টাইপের হয়ে গিয়েছে।

মণিদীপা প্রথমে দরিয়ার কাছে এলই না। সীমার শরীরের খবর নিল আধ ঘণ্টা ধরে। সাম্যব্রতর কাছে কাঁদুনি গাইল যে কলেজে লেখাপড়া ভাল হচ্ছে না। যেটুকু করার সেটা একমাত্র দরিয়াই করছে। কলেজের প্রিন্সি থেকে বিএস ম্যাডাম সবাই দরিয়ার কথা বলতে অজ্ঞান! সবার শেষে দরিয়ার কাছে এসে বলল, “ওঠ লা! আমার সঙ্গে বেরুতে হবে।”

“কেন লা?” পরিবেশ হালকা করার জন্য কলেজি বুলিতে ফিরে গিয়েছে দরিয়া, “নতুন কোনও মরদ জুটিয়েচিস?”

মণিদীপা কিছুক্ষণ আগুনচোখে দরিয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। তার পরে বলল, “মাথায় একফোঁটা বুদ্ধি নেই! ছেলেটার ওপরে ওই রকম অত্যাচার করার আগে এক বার কথা বলতে পারলি না? ও সে দিন কেন সিনেমা দেখতে যেতে পারেনি, সেটা জানলে এটা করতিস না। ফাঁসি দেওয়ার আগে আসামিকে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে দেওয়া হয়।”

মণিদীপার ছলোছলো চোখ দেখেও দরিয়ার মন গলেনি। সে কঠিন গলায় বলল, “কী হয়েছিল?”

“সনৎ হারামি জানতে পেরে গিয়েছিল যে বিহান তোর সঙ্গে সিনেমা যাবে। ও বিহানকে পোস্টার লেখার কাজ ধরায়। সামনেই কলেজ ইলেকশন, বিহান ‘না’ বলতে পারেনি। ইউনিয়ন রুমে বসে একশোটা পোস্টার লিখেছিল সেই দিন। তোর ফোন ধরতে যেতেই সনৎ মোবাইল কেড়ে নিয়ে সুইচ অফ করে দেয়। পোস্টার লেখার কাজ শেষ করে বিহান ফোন ফেরত পেয়েছিল। তখন তোর মোবাইল সুইচ্‌ড অফ! পরদিন ও কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল তোর সঙ্গে কথা বলার জন্য। তুই কথা বলিসনি। না সকালে না বিকেলে। ওই ঠান্ডা আর বৃষ্টিতে ও তিন দিন বাড়ি ফেরেনি। মাকে ফোন করে বলে দিয়েছিল বিশেষ কাজে দুর্গাপুর যাচ্ছে। সুলভ কমপ্লেক্সে বাথরুম সেরে নিত। ফুটপাথের দোকান থেকে খাবার খেয়ে নিত। কালকেও দাঁড়িয়ে ছিল। তোর সঙ্গে কথা বলার পরে কলেজের দারোয়ান ওকে লাঠি মেরে

ভাগিয়ে দিয়েছে।”

দরিয়া এক ঝটকায় খাট থেকে উঠেছে। দ্রুত বাড়িতে পরার ম্যাক্সি বদলে বাইরে বেরোনোর সালোয়ার কামিজ গলিয়ে নিচ্ছে। মোবাইলের সুইচ অন করছে। দেখে নিচ্ছে মানিব্যাগে টাকাপয়সা আছে কি না। তাকে এখনই বেরোতে হবে।

“কোথায় যাবি?” মণিদীপার গলা থেকে অ্যাসিড বৃষ্টি হচ্ছে।

“বিহানের বাড়ি,” ঘর থেকে বেরিয়ে দরিয়া বলল। সীমাকে বলল, “আমি একটু বেরোচ্ছি। ফিরতে দেরি হবে।” সীমার উত্তরের অপেক্ষা না করে বসবাস থেকে বেরোল ও।

মণিদীপা এত ক্ষণ চুপ করে ছিল। বাইরে বেরোনো মাত্র প্রশ্ন করল, “কোথায় যাচ্ছিস?”

“বললাম তো! বিহানের বাড়ি।” অটো স্ট্যান্ডের দিকে এগোচ্ছে দরিয়া।

“বিহানের নিউমোনিয়া হয়েছে। খুব খারাপ অবস্থা,” দরিয়ার পাশে হাঁটছে মণিদীপা, “গতকাল রাতে ওর মা ওকে বঙ্গবাসী হাসপাতালে ভর্তি করেছে। অক্সিজেন আর স্যালাইন চলছে।”

দরিয়া কাঁদছে। অটোয় উঠে শালকিয়ায় পৌঁছচ্ছে। সেখান থেকে অটো বদলে হাওড়া ময়দান। ছুটতে ছুটতে বঙ্গবাসী হাসপাতাল। মণিদীপা আর একটাও কথা বলেনি। কিন্তু সে দরিয়ার পাশে পাশেই আছে।

মেডিসিন বিভাগের বেডে শুয়ে থাকা বিহানকে দেখে কেঁদে ফেলছে দরিয়া। ছেলেটা রোগা হয়ে গিয়েছে। চোখের নীচে কালি, হাতে স্যালাইনের সুচ, নাকে অক্সিজেনের নল। অতিরিক্ত বাতাস শুষে নেওয়ার জন্য বুকটা হারমোনিয়ামের বেলোর মতো নড়াচড়া করছে। বিহানের বিছানার পাশে দাঁড়িয়েছে দরিয়া, বিহানের হাত ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলছে, “প্লিজ় আমাকে ক্ষমা করে দাও। আর কখনও এই রকম করব না। প্লিজ় ক্ষমা করে দাও!”

মণিদীপা তার কনুই খামচে ধরে হিসহিস করে বলল, “নাটক পরে করবি বকুলফুল! এখানে বিহানের মা রয়েচেন। তেনার সামনে কেন মুক পোড়াচ্চিস লা?’’

মণিদীপার কথা শুনে নিজেকে সামলে নিচ্ছে দরিয়া। চোখের জল মুছে শ্রীরূপার মুখোমুখি হচ্ছে।

শ্রীরূপা দরিয়ার দিকে ফিরেও তাকালেন না। ছেলের বুকে হাত বোলাতে বোলাতে বললেন, “বিহান আমার একমাত্র ছেলে। একটু বোকা। একটু নরম মনের। একটু অভিমানী। আমি জানি যে ও জীবনে বড় কিছু করতে পারবে না। সাধারণ একটা চাকরি করবে। ডালভাত খেয়ে জীবন কাটিয়ে দেবে। আমি বা আমার ছেলে খুব সাধারণ। আমাদের একমাত্র সম্পদ আমাদের মানসিক শান্তি। সেটা কেড়ে নিও না।” দরিয়া কথা না বলে মণিদীপার হাত ধরে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে এসেছিল।

এইবার বুঝতে পেরেছেন সাম্যব্রত। এঁরা দরিয়াকে রেফার করে দিতে চাইছেন। ‘হেথা নয়, হেথা নয় অন্য কোথা, অন্য কোনওখানে।’ নিউ লাইফ মেটারনিটি ক্লিনিক থেকে বঙ্গবাসী হাসপাতাল। এখান থেকে কোথায় যেতে হবে? কর্পোরেট হাসপাতাল? বাড়ি বিক্রি করেও টাকা জোগাড় করতে পারবেন না সাম্যব্রত। উল্টে মেয়েটা মরে যাবে। উত্তেজিত হয়ে তিনি বললেন, “এই অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে আমি কোথায় যাব?”

সাম্যব্রত রাগে ফুটছেন। সেটা বুঝতে পেরে ডক্টর সেন বললেন, “দুনিয়ার কোনও গাইনি আপনার মেয়ের নর্মাল ডেলিভারির রিস্ক নেবেন না। সিজ়ার করতেই হবে। পাশাপাশি এটাও সত্যি, ওকে অজ্ঞান করার মধ্যে অনেক ঝুঁকি। অপারেশন টেবিলে খারাপ কিছু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ ছাড়া অন্য কোথাও ওর সিজ়ার সেকশান হবে না।”

বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ বা বিএমসি। বাংলার সেরা মেডিক্যাল কলেজ। খুব একটা দূরেও নয়। ফোরশোর রোড ধরে খানিকটা গেলেই দ্বিতীয় হুগলি সেতু। সেটা পেরোলেই বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ। যেতে মিনিট পনেরোর বেশি লাগবে না।

সাম্যব্রতর রাগ কমেনি। সারা দিন মেয়েকে নিয়ে পাগলের মতো দৌড়োদৌড়ি করেছেন। আবার মেয়েকে নিয়ে দৌড়তে হবে। এটা হ্যারাসমেন্ট নয়? তিনি উত্তেজিত হয়ে বললেন, “সবই বুঝলাম। কিন্তু সত্যিটা হল এই যে এক জন প্রেগন্যান্ট মাদারের ডেলিভারি বঙ্গবাসী হাসপাতালে হল না।”

“আমি আপনার সঙ্গে একমত। তবে সেই মাদারের পায়ে বোমার টুকরো লেগে হেভি ব্লাড লস হয়েছে। মাথায় চোট আছে। লেবার প্রগ্রেস করছে না। এগুলোও মাথায় রাখতে হবে।”

সাম্যব্রত বললেন, “রাস্তায় মানুষ খুন হচ্ছে। পুলিশি টহলদারি সত্ত্বেও গন্ডগোল বাড়ছে। এই অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে কী ভাবে যাব বলবেন? তা ছাড়া বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজ ভিআইপিদের হাসপাতাল। ওখানে আমার মতো চুনোপুঁটিকে কেউ পাত্তা দেবে না।”

ডক্টর সেন বললেন, “বিএমসির গাইনিকলজির হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্টকে আমি ফোনে জানিয়ে দিচ্ছি। রেফার কার্ডও ফিল আপ করে দিচ্ছি। মেয়েকে নিয়ে গেলেই ভর্তি করে নেবে।”

সাম্যব্রত যে কথাটা বলতে চাননি, সেটা এ বার বলেই দিলেন। “ম্যাডাম, মেয়েকে বঙ্গবাসী হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য ছ’হাজার টাকা দিয়েছি। সেটা তা হলে ফেরত পাব?”

সাম্যব্রতর কথা শুনে ডক্টর সেনের ভুরু কুঁচকে গিয়েছে। তিনি বললেন, “ছ’হাজার টাকা কাকে দিয়েছেন?”

দরিয়া বেডে শুয়ে ইশারায় সাম্যব্রতকে বলছে মুখ না খুলতে। সেটা দেখতে পেয়ে ডক্টর সেন বললেন, “তোমার ঘাবড়ানোর কিছু নেই। তুমি নিশ্চিন্ত থাকো।”

সাম্যব্রত বললেন, “এমার্জেন্সির ডক্টর ঘোষ নিয়েছেন তিন হাজার টাকা, ওয়ার্ড মাস্টার নিয়েছেন দু’হাজার টাকা, আর ট্রলি বয় মন্টুদা নিয়েছে হাজার টাকা। মন্টুদা তাও তো আমাদের জন্য এই ওয়ার্ড থেকে ওই ওয়ার্ড দৌড়ে বেড়িয়েছে...” চুপ করে গেলেন সাম্যব্রত। যা বললেন না, তা হল ডক্টর ঘোষ আর ওয়ার্ড মাস্টার তো কিছুই করেননি।

ডক্টর সেন মৃদু হেসে বললেন, “আপনি সবার হাতে টাকা দিয়েছেন?”

“তা কেন?” আপত্তি করলেন সাম্যব্রত, “আমি মন্টুদাকে ছ’হাজার টাকা দিয়েছি। ও সবাইকে ভাগ করে দিয়েছে।”

ডক্টর সেন মুখ ঘুরিয়ে সিস্টারকে বললেন, “সিস্টার, পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে ঘোষণা করে মন্টুদা আর ওয়ার্ড মাস্টারকে এখানে ডেকে পাঠান।” তার পর হৃষীকেশ বক্‌সিকে বললেন, “তুই এমার্জেন্সিটা পাঁচ মিনিটের জন্য সামলে দে। আর ডক্টর ঘোষকে এখানে পাঠিয়ে দে।”

ডক্টর বক্‌সি কথা না বাড়িয়ে এমার্জেন্সির দিকে চলে গেলেন। পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে সিস্টারের ঘোষণা শুরু হল।

বেডে শুয়ে দরিয়ার ভয় করছে। একে তো সে জেনে গিয়েছে, অন্য হাসপাতালে যেতে হবে।

এখন সাম্যব্রত যদি হাসপাতালের স্টাফ এবং সুপারের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন, তা হলে অশান্তি বাড়বে।

সবার আগে এলেন ওয়ার্ড মাস্টার। তার পরে ডক্টর ঘোষ। তিনি এসেই বললেন, “বলুন মহারানি। কী অন্যায় করেছি যে তলব করেছেন! গর্দান না হয় দেব, কিন্তু কারণটা জানলে ভাল হয়।”

ডক্টর সেন হেসে ফেলেছেন। “তোর সব সময় ফক্কুড়ি। এমার্জেন্সি সামলানো মানে শুধু পেশেন্ট দেখা নয়। হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজ করাও বটে।”

“কী হয়েছে?” জানতে চাইলেন ওয়ার্ড মাস্টার।

“মন্টুদা আসুক। ওর সামনে বলছি।” সংক্ষিপ্ত জবাব ডক্টর সেনের।

কিছু ক্ষণের মধ্যেই মন্টু হাজির। ডক্টর সেনকে নমস্কার করে মিহি গলায় বলল, “ডেকেছিলেন ম্যাডাম?”

“আপনি বলুন,” সাম্যব্রতকে বললেন

ডক্টর সেন।

সাম্যব্রত বুঝতে পারছেন, কোথাও একটা গন্ডগোল আছে। সেটা কী, ধরতে পারছেন না। তিনি বললেন, “মন্টুদা বলেছিল মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হলে ছ’হাজার টাকা দিতে হবে।”

মন্টুর হাবভাব বদলে গিয়েছে। সে আর আগের মতো দরিয়ার দিকে স্নেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে নেই। ডক্টর সেনের দিকে তাকিয়ে বলল, “পেশেন্ট পার্টির কথায় একদম বিশ্বাস করবেন না ম্যাডাম। লোকটা খুব হারামি।”

সাম্যব্রত খেলাটা বুঝে গিয়েছেন। হিস্‌সার টাকা কে কত পাবে সেটা আর এক বার শুনিয়ে দিলেন। শুনে ডক্টর ঘোষ বললেন, “মন্টুদা! আমার ভাগের টাকাটা দিয়ে দাও! টাকাও দেবে না, আবার ঘুষখোর প্রমাণ করবে... দুটো একসঙ্গে কী করে হয়?”

মন্টু উত্তেজিত হয়ে বলল, “লোকটা মিথ্যে কথা বলছে স্যর! বিশ্বাস করুন, ওর সঙ্গে টাকা নিয়ে কোনও কথাই হয়নি।”

ওয়ার্ড মাস্টার সাম্যব্রতর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘এখন হাসপাতালের সব জায়গায় সিসিটিভি বসে গিয়েছে। আপনি কোন জায়গায় টাকাটা দিয়েছিলেন? এমার্জেন্সির করিডরে? আমি দেখে নিচ্ছি।”

এই কথাটা শুনে মন্টুর হাবভাব বদলে গেল। সে সোজা ডক্টর সেনের পায়ে ডাইভ মেরে বলল, “মাফ করে দিন ম্যাডাম। আর কোনও দিনও হবে না। ভুল হয়ে গেছে।”

ক্রমশ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Novel Indranil Sanyal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE