Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ধারাবাহিক উপন্যাস পর্ব ২৯

নুড়ি পাথরের দিনগুলি

নবনী রেগে গেলেন, ‘‘হ্যাংলামো বলছ কেন? কাউকে পছন্দ হওয়াটা হ্যাংলামো? তা ছাড়া আহি যতই ওই ছেলেকে নিয়ে ঘুরে বেড়াক, আমি আমার মেয়েকে চিনি। মাথা ঠান্ডা করে ভাবলে সে অর্জকের মতো ছেলেকে নিশ্চয়ই মেনে নেবে।

ছবি: অমিতাভ চন্দ্র।

ছবি: অমিতাভ চন্দ্র।

প্রচেত গুপ্ত
শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৮ ০৭:০০
Share: Save:

পূর্বানুবৃত্তি: সৌহার্দ্য শ্রীকণাকে জানাল, সে নতুন কাজে যোগ দিচ্ছে লন্ডনে। শ্রীকণা বললেন, তিনি বিদেশে যেতে চান না। সৌহার্দ্য মা’কে বলল, সে চায় শ্রীকণা যেন তার বস-এর মেয়ে আহিরীর সঙ্গে তার বিয়ে নিয়ে কথা বলেন। কিন্তু সে বিয়ে করবে না, সব পাকা করে বিদেশ চলে যাবে।

চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়লেন শ্রীকণা। বললেন, ‘‘আমি তোর কোনও কথা শুনতে চাই না। তুই সামনে থেকে চলে গেলে আমি খুশি হব।’’

সৌহার্দ্য সামান্য হেসে বলল, ‘‘চিন্তা কোরো না, আমি অফিসে বেরিয়ে যাচ্ছি। মাথা ঠান্ডা করো। আমি সামান্য একটা প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলাম মা। তার বেশি কিছু নয়।’’

সৌহার্দ্য বেরিয়ে যাওয়ার পর, রান্নার মাসিকে সব বুঝিয়ে নিজের ঘরে এলেন শ্রীকণা। মাথাটা টলমল করছে।‌ খানিক ক্ষণ শুয়ে থাকা দরকার।

শ্রীকণা শুয়ে শুয়ে ভাবলেন, আজ সোহো যা বলল, সেই কাজ তো কমলেশ তার সঙ্গে করেছিল। কোনও খবর না পেয়ে প্রথমে খুব চিন্তা হয়েছিল। অসুখবিসুখ, দুর্ঘটনা হয়নি তো? তখন যোগাযোগের এত উপায়ও ছিল না। কমলেশ ঠিকানা, ফোন নম্বর কিছুই দেয়নি। দুশ্চিন্তায় খাওয়াদাওয়া সব ছেড়ে দিয়েছিলেন শ্রীকণা। কমলেশের কথা বাড়িতে সবাই জানত। এমনকি বাইরে যাওয়ার আগে ছেলে এক দুপুরে ফঁাকা বাড়িতে এসেছিল, সে কথাও। মা রাগের ভান করেছিল, কিন্তু চোখমুখ বলছিল, খুশি হয়েছে। আহা রে, ছেলেটা কত দিনের জন্য বাইরে যাচ্ছে, দুজনে একটু একা থাকবে না? সেই ছেলে বিদেশে গিয়ে উধাও। মেয়ের অবস্থা দেখে বাবা মা’কে বলেছিলেন, ‘‘আমি কমলেশের বাড়িতে খোঁজ নিয়ে আসছি।’’

বাবা ফিরেছিলেন থমথমে মুখে। বলেছিেলন, ভয়ঙ্কর অপমানিত হতে হয়েছে। পরিচয় শোনার পর ভাল করে কথাও বলতে চায়নি ওরা। শুধু বলেছে, ছেলের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ আছে। সে পড়তে গেছে, কেউ যেন তাকে বিরক্ত না করে।

তার পরেও অপেক্ষা করেছিলেন শ্রীকণা। এক পরিচিত লোক মারফত খবর পেয়েছিলেন, লন্ডনে কমলেশ খুব ভাল আছে। আপাতত সে দেশে ফিরছে না। বাবা সব শুনে মা’কে বললেন, ‘‘অনেক নাটক হয়েছে। এ বার বিয়ে দিয়ে দাও। আর অপেক্ষা করলে মেয়ের বেলেল্লাপনা জানাজানি হয়ে যাবে।’’

হাতের কাছে যাকে পাওয়া গেল তার সঙ্গেই কথা পাকা হল। গ্রামের স্কুলমাস্টার। শ্রীকণা ক্ষীণ আপত্তি করেছিলেন। মা ফোঁস করে উঠে বলেছিল, ‘‘তোকে যে অ্যাবরশন করাতে হয়নি এই যথেষ্ট। চুপ করে থাক।’’ অতীত গোপন রেখে বিয়ে হল। তার পরেও সৌহার্দ্যর বাবা সব জেনে গিয়েছিল।

সোহো ওর বসের মেয়ের সঙ্গে সেই একই কাজ করতে চাইছে!‌ কী যেন মেয়েটার নাম? মাহিরী? শায়েরি? নামটা সুন্দর, কিন্তু মনে পড়ছে না। কোন প্রতিশোধের কথা বলতে চাইছিল? নিশ্চয়ই অফিসের কোনও ঝামেলা। ছি ছি, অফিসের গোলমালের জন্য এত নীচে নামতে চাইছে সোহো!‌

শ্রীকণা পাশ ফিরে শুলেন। বুকে একটা চাপ অনুভব করলেন।

১৫

কমলেশ রায় অফিসে, নিজের ঘরে বসে আছেন। তার মন খারাপ। মন খারাপের নানা কারণ রয়েছে। সবটা বুঝতে পারছেন না। কিছু স্পষ্ট, কিছু অস্পষ্ট। জীবনের সবচেয়ে লম্বা পথটাই হেঁটে ফেলেছেন। কত চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন। কেরিয়ারের শীর্ষে পৌঁছেছেন। মানুষের ভালবাসা, সম্ভ্রম কম পাওয়া হল না। যেমন তাঁকে মানায়, তেমন এক জন জীবনসঙ্গিনী পেয়েছেন। কেরিয়ার তৈরির সময় নিঃশব্দে আগলে রেখেছিল সে। কাজ, ট্যুর, পার্টি নিয়ে পাগলের মতো মেতে থাকতে গিয়ে দিনের পর দিন সময় দিতে পারেননি নবনীকে। সে এক দিনের জন্যও অনুযোগ করেনি। আর? আর আহিরীর মতো চমৎকার একটা মেয়ে আছে। তার পরেও আজ কেমন ফঁাকা, ছোট লাগছে নিজেকে। কমলেশ নিজেকেই বললেন, ‘‘ব্যাক টু ইয়োর সেন্সেস। নিজের চেতনায় ফেরো।’’

অফিসে আসার পরেই ত্রিপাঠী তাঁর কাছে একটা ‘কনফিডেনশিয়াল’ ফাইল পাঠিয়েছে। তাতে লেখা, কম্পিউটার ভাইরাসের ঘটনায় যে ‘পিসি’টিকে চিহ্নিত করা গেছে, সেটি আর কারও নয়, খোদ জেনারেল ম্যানেজারের পার্সোনাল সেক্রেটারি নিলয় সান্যালের। এটা নিলয়ের দ্বিতীয় কম্পিউটার মেশিন। তার ডেস্কেই আছে। ফাইলে ত্রিপাঠী আরও লিখেছে, সৌহার্দ্য ছেলেটি ঠিকই বলেছিল, তবে মেশিন খঁুজতে কারও ব্যক্তিগত‌ কম্পিউটার ঘাঁটতে হয়নি। সার্ভার থেকেই মেশিনের নম্বর বার‌ করা গেছে। বোঝা গেছে, কোন মেশিন থেকে গোলমালটা হয়েছে। নিলয় সান্যাল এখনও জানে না, গোটা অফিসের কম্পিউটার সিস্টেম কোলাপ্‌স করার পিছনে তার মেশিন দায়ী।

কমলেশ রায়ের মনে পড়ল, বিভূতি এই ছেলেটি সম্পর্কে সতর্ক করেছিল। বাইরের যে এজেন্সি এখানে ব্র‌্যান্ড প্রোমোশনের বরাত পেয়েছে, সেখানকার কোন তরুণীর সঙ্গে নাকি নিলয়ের ভাব-ভালোবাসা হয়েছে। কাজের ব্যাপারে ব্যক্তিগত দুর্নীতির সম্ভাবনা আছে।

কমলেশ ইন্টারকমের দিকে হাত বাড়িয়েও সরিয়ে নিলেন। বাইরে থেকে নিলয় আড়ি পাতে না তো? তিনি মোবাইলে ত্রিপাঠীকে ধরলেন।

‘‘তোমার ফাইল দেখেছি।‌ ইঞ্জিনিয়াররা কি শিয়োর, এই ঘটনা ইচ্ছাকৃত?’’

ত্রিপাঠী বললেন, ‘‘এখনও পর্যন্ত নয়।’’

কমলেশ বললেন, ‘‘তা হলে কী করা উচিত?’’

ত্রিপাঠী বললেন, ‘‘বুঝতে পারছি না স্যর। নিলয় সাবোটাজ় করেছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে কিছু করা যাবে না। আবার বেনিফিট অব ডাউট দিতেও ভয় করছে স্যর। ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসে আছে। একেবারে আপনার ঘরে। স্যর, পুলিশকে ইনফর্ম করলে কেমন হয়? ওদের তো সাইবার ক্রাইম ডিপার্টমেন্ট আছে।’’

কমলেশ বললেন, ‘‘একেবারেই নয়। কেউ যেন কিছু না জানে ত্রিপাঠী। আমাদের ইন্টার্নাল ইনভেস্টিগেশন আগে শেষ হোক। আপাতত নিলয়কে ট্রান্সফার করো।’’

‘‘ও সন্দেহ করবে না?’’

কমলেশ বললেন, ‘‘না। এমন কাজ দাও যাতে খুশি হবে। অন্য কিছু নিয়ে মাথা ঘামাবে না।’’

ত্রিপাঠী অবাক হয়ে বললেন, ‘‘খুশি হবে? আপনি কি ওকে প্রোমোশন দিতে বলছেন? এত বড় অপরাধের পর.‌.‌.‌’’

কমলেশ বললেন, ‘‘অপরাধ এখনও তো প্রমাণ হয়নি ত্রিপাঠী। এমনও তো হতে পারে, দেখা গেল সবটা অ্যাক্সিডেন্টাল। আপাতত আমরা ওকে প্রোডাক্ট প্রোমোশন অ্যান্ড ব্র‌্যান্ডিং-‌এর কাজে আউটডোর পাঠিয়ে দেব। বাইরের যে এজেন্সি এ ব্যাপারে কাজ করছে তাদের সঙ্গে কোম্পানির তরফে লিয়াজ়োঁ রেখে কাজ করবে। এইচআর-কে বল, যেন আজই ওকে ডেকে কথা বলে। আমি যত দূর ওকে জানি, এই অফার ও লুফে নেবে।’’

ত্রিপাঠী বলল, ‘‘স্যর, আপনি যখন বলছেন তা-ই হবে।’’

কমলেশ গলা নামিয়ে বললেন, ‘‘আমার কাছে খবর আছে, ‌ওই এজেন্সিতে কাজ করে এমন একটি মেয়ের প্রতি নিলয় দুর্বল। রিলেশনও আছে। ওর সঙ্গে কাজ করার লোভ ও ছাড়তে পারবে না। এর মধ্যে ইনভেস্টিগেশন শেষ করা হবে। অপরাধ প্রমাণ হলে ভাল, না হলেও সমস্যা নেই। প্রোমোশন, ব্র‌্যান্ডিং-‌এর কাজে ভুল ও করবেই। পার্সোনাল কারণে বাইরের এজেন্সিকে টাকাপয়সা পাইয়ে দেওয়ার চার্জে তখন ওর বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেব। সেই অ্যাকশন মৃদু না জোরালো হবে, তখন ঠিক করা যাবে। সন্দেহ যখন হয়েছে, অ্যাকশন নিতেই হবে। কেয়ারলেস থাকাটাও একটা অপরাধ। ওর মেশিন থেকে এত বড় গোলমাল হবে কেন? ‌ তুমি দ্রুত নিলয়কে সরানোর ব্যবস্থা করো। অন্য এক জনকে আমার এখানে পাঠাও। নতুন কাউকে।’’

ত্রিপাঠী নিশ্চিন্ত গলায় বললেন, ‘‘স্যর, এ সব তো আমি জানতাম না। ‌এখুনি এইচআর হেডকে বলে নিলয়ের জন্য চিঠি তৈরির ব্যবস্থা করছি। আর আপনার প্রাইভেট সেক্রেটারির জন্য আমাদের কাছে কয়েকটা সিভি আছে। প্লেসমেন্ট এজেন্সিকেও ফোন করে দিচ্ছি।’’

ফোন ছেড়ে খানিকটা নিশ্চিন্ত বোধ করলেন কমলেশ। একটা জটিল সমস্যার আংশিক সমাধান করা গেল মনে হচ্ছে। তবে এর পরে আরও জটিল সমস্যা আসছে। জটিল এবং স্পর্শকাতর। সেই সমস্যার কোনও আধখানা সমাধান হবে না।‌ যদি হয় পুরোটাই হবে, নইলে নয়। তিনি ফাইল টেনে নিলেন। গত কয়েক মাস প্রোডাকশনের প্রতিদিনের রিপোর্ট দেখেন কমলেশ।

কাল রাতে ঘুমোনোর আগেও নবনী মেয়েকে নিয়ে অনেক ক্ষণ কথা বলেছেন। নবনী রাতে ঘুমের ওষুধ খান। বড়জোর দু–একটা কথা বলেই চোখ বোজেন। কাল ছিলেন অস্থির এবং উত্তেজিত। রিডিং ল্যাম্প জ্বালিয়ে বিছানায় আধশোয়া হয়ে বই পড়ছিলেন কমলেশ। নবনী রাতের প্রসাধন সেরে খাটে বসে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘‘মেয়ের জন্য কিছু ভাবলে? ওর সঙ্গে কথা বলেছ?’’

‌কমলেশ সংক্ষেপে উত্তর দিলেন, ‘‘ভেবেছি।’’

বিরক্ত নবনী বললেন, ‘‘শুধু ভেবে কী হবে?’’

কমলেশ ‌বইয়ের পাতা উল্টে বললেন, ‘‘কী হবে জানি না। একটা চেষ্টা তো করতে হবে।’’

নবনী বললেন, ‘‘আমার ধারণা, ওই বাজে ছেলেটার সঙ্গে আহি ঘনিষ্ঠতা আরও বাড়িয়েছে। জেদ করে বাড়িয়েছে। যেহেতু আমি অর্জকের সঙ্গে ওর বিয়ের চেষ্টা করছি, তাই। মায়ের সব কথাই তো ওর কাছে শত্রুর কথা। মেজদি সে দিন বাইপাসে আহির গাড়ি দেখেছে। পরমা আইল্যান্ডের কাছে সিগনালে দঁাড়িয়েছিল। পাশে ওই খারাপ ছেলেটা বসে আছে। মুখে দাড়ি। তুমি কি মুখের সামনে থেকে বইটা সরিয়ে আমার কথা শুনবে?’’

কমলেশ বই সরিয়ে বললেন, ‘‘মুখে দাড়ি থাকলেই খারাপ ছেলে হবে তার কোনও মানে নেই। আহির কলিগও হতে পারে।’’

নবনী বললেন, ‘‘তুমি ফালতু তর্ক করছ। অর্জকের মা সে দিন দুঃখ করছিল। আহি তার ছেলের সঙ্গে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে টুকটাক চ্যাট করে, কিন্তু আসল কথায় যায় না। আমি বলেছি, এত দিন যখন অপেক্ষা করেছে, ছেলেকে আর ক’টা দিন অপেক্ষা করতে বলো।’’

কমলেশ বললেন, ‘‘এটা তুমি বাড়াবাড়ি করছ নবনী। মেয়ের হয়ে তুমি কাউকে কথা দিতে পারো না। তার কোনও সিদ্ধান্ত যদি তোমার পছন্দ না হয়, তাকে সতর্ক করতে পারো ব্যস, তার বেশি নয়। তা ছাড়া অর্জক ছেলেটাই বা কী রকম? কোনও মেয়ে তাকে বিয়ে করতে না চাইলেও এ ভাবে হ্যাংলামো করতে হবে না কি!‌‌’’

নবনী রেগে গেলেন, ‘‘হ্যাংলামো বলছ কেন? কাউকে পছন্দ হওয়াটা হ্যাংলামো? তা ছাড়া‌ আহি যতই ওই ছেলেকে নিয়ে ঘুরে বেড়াক, আমি আমার মেয়েকে চিনি। মাথা ঠান্ডা করে ভাবলে সে অর্জকের মতো ছেলেকে নিশ্চয়ই মেনে নেবে। ও তো জীবনে সব কিছু হিসেব করে করেছে, বিয়েটাই বা করবে না ‌কেন?’’

কমলেশ হেসে বললেন, ‘‘আহি কি এখনও তোমার সেই ছোট্ট খুকি? নিজের ভালমন্দ সে বোঝে না? অন্য কেউ বলবে আর সে মেনে নেবে?’’

নবনী হিসহিসিয়ে বললেন, ‘‘না। বোঝে না। অনেক মাতব্বরকে তো দেখছি। বিয়ের রাত কাটতে না কাটতে সুটকেস টানতে টানতে ফিরে আসছে।’’

কমলেশ বললেল, ‘‘আহি এক জন শিক্ষিতা, বুদ্ধিমতী মেয়ে, আর পঁাচ জনের সঙ্গে তাকে গুলিয়ে ফেলাটা ভুল হবে নবনী।’’

ক্রমশ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Novel Series Prachet Gupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE