Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
অনুভব

এক-এক সিনে লম্বা চুল, এক-এক সিনে ছোট চুল

আমার অভিনয় জীবন শুরু হয় ধারাবাহিক দিয়ে। তখন দূরদর্শনে একটা টেলিফিল্ম, যেটা হিন্দি, বাংলা— দুটো ভাষাতেই হয়েছিল, তাতে আমি অডিশন দিয়ে ঢুকেছিলাম।

শঙ্কর চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০০:৩৯
Share: Save:

আমার অভিনয় জীবন শুরু হয় ধারাবাহিক দিয়ে। তখন দূরদর্শনে একটা টেলিফিল্ম, যেটা হিন্দি, বাংলা— দুটো ভাষাতেই হয়েছিল, তাতে আমি অডিশন দিয়ে ঢুকেছিলাম। দুটো ভাষাতেই আমি অভিনয় করি। এর পর আমি প্রথম যে ছবিটা করেছিলাম, সেখানে আমি ছিলাম হিরো, নয়না দাস ছিল, আর ওরা বলেছিল কাস্টিংয়ে ভানুপ্রিয়া আছেন। ভানুপ্রিয়া অবশ্য শুটিং করেননি। আমি তিন দিন শুটিং করেছিলাম। কিন্তু ছবিটা রিলিজ করেনি। ‘মনের মধ্যে মন’ নাম ছিল ছবিটার।

আমার জীবনে প্রথম রিলিজ করা ছবি ‘ঠিকানা’। কিন্তু ‘ঠিকানা’তেও একটা ছোট্ট রোল ছিল, সে রকম কিছু না। প্রথম ভাল রোল পাই ‘অনুভব’ নামে একটা ছবিতে। সেটায় হিরো ছিলাম। সেটা ১৯৯৩। ছবিটা আমার করার কথা ছিল না। ‘বিবাহ অভিযান’ বলে তখন একটা সিরিয়াল করেছিলাম, যেটা খুব হিট করেছিল। ওই সিরিয়ালে যিনি পরিচালক ছিলেন, দেবকুমার বসু, তিনি এই ছবিটাও পরিচালনা করেছিলেন। বিখ্যাত পরিচালক দেবকীকুমার বসুর ছেলে তিনি। উনি ছবিটা যখন শুরু করেন, তখন দীপনকে হিরো হিসেবে বেছেছিলেন। ‘বিবাহ অভিযান’-এ যে পাঁচ জন আমরা কাজ করেছিলাম, তার মধ্যে এক জন ছিল দীপন। দু’দিন শুটিংও হয়ে গিয়েছিল। তার পর হঠাৎ দীপন থিয়েটারে যোগ দেয়, এ দিকে ওরা আউটডোরে যাবে পুরী, ফলে ডেট ক্ল্যাশ করে, এবং ওরা আমার কাছে আসে। আমি তখন আমতা-আমতা করছি। এক ভাবে শুরু হয়েছিল জিনিসটা, এখন আমি করব? আমাকে বলা হল, আমি না করলে ওঁরা অন্য কাউকে হিরোর জায়গায় নেবেন। আমি বললাম, ঠিক আছে। দু’দিন সময় দিন।

দীপনের বাড়ি গেলাম। বললাম, দেখ তোকে বাদ দেওয়ার কথা বলছে। তুই যদি ডেট অ্যাডজাস্ট করে করতে পারিস, তা হলে করে দে। এখন আমাদের আর্টিস্ট ফোরামের নিয়ম হয়েছে, এক জন কাজ করলে তার সম্মতি ছাড়া আর এক জন করতে পারে না। তখন তো আর্টিস্ট ফোরাম ছিল না। তা সত্ত্বেও আমি দীপনের কাছে গিয়েছিলাম। দীপন গিয়ে ওদের সঙ্গে কথা বলল। কিন্তু ডেটটা কিছুতেই ম্যানেজ হল না। আউটডোরের কাজটা ফিক্সড ছিল। তখন আমি রাজি হয়ে গেলাম।

কিন্তু কাজটা ভাল করে করতে পারিনি। হিরো হতে গেলে যে গ্রুমিংটা দরকার হয়, সেটা তখন আমার ছিল না। তার ওপর ওই শুটিংটা চলার সময়ই উৎপলেন্দু চক্রবর্তীর একটা সিরিয়ালও চলছিল। ‘চতুর্থ পানিপথের যুদ্ধ’। তাতে আমি লিড করছিলাম এক সাঁওতাল ছেলের ভূমিকায়। প্রথমে আমাকে বলা হয়েছিল বড় চুল রাখতে। আমি সেই বড় চুল নিয়েই ছবিটারও খানিকটা শুট করে ফেলেছিলাম। এর পর যখন আবার সিরিয়ালটার শুটিংয়ে গেলাম, তখন আমার চুল পেছন থেকে কেটে দেওয়া হল। প্রফেশনাল কেউ নয়, চুল কাটলেন মেক-আপ আর্টিস্ট। বিচ্ছিরি দেখতে লাগছিল। এই আউটডোর থেকে ফিরেই পুরী চলে গেলাম ‘অনুভব’-এর জন্য। যাচ্ছেতাই চুল নিয়ে কাজটা করতে বাধ্য হলাম। সে এক অদ্ভুত ব্যাপার। এক-এক সিনে আমার লম্বা চুল, এক-এক সিনে ছোট চুল।

ছবির প্রথম হোলনাইট আউটডোরটা হয়েছিল, এখন যেখানে রুবি হসপিটাল, সেখানে। রুবি তখনও হয়নি। সেখানে বিরাট মাঠ। বাইপাস তখন ছোট্ট, সরু একটা রাস্তা। সারা রাত শুটিং করে সকালে দেখলাম, দূরে কতকগুলো বাড়ি। কয়েক জন মর্নিং ওয়াক করছে। ভাবলাম, গড়িয়াহাটের এত কাছে এমন সুন্দর একটা জায়গা, এখানে একটা ফ্ল্যাট কিনব। পরে সত্যি সত্যি সেখানে ফ্ল্যাট কিনেছিলাম।

‘অনুভব’-এ নায়িকা ছিল ঋতু দাস। বুম্বাদার সঙ্গে ‘এক পশলা বৃষ্টি’ করেছিল ঋতু। সব মিলিয়ে চার-পাঁচটা ছবি করেছিল। ভাল অভিনেত্রী ছিল। ঋতু মারা গেছে ক্যানসারে। ‘অনুভব’ আমাদের দুজনেরই প্রথম দিকের ছবি। ফলে প্রাণ ঢেলে দিয়েছিলাম। ছবিতে মমতাশংকর ছিলেন আমার মায়ের চরিত্রে। তাঁর একটাই ছেলে, খুব ভাল ছেলে (এরই ভুমিকায় আমি করেছিলাম)। কিন্তু তার একটা রোগ ছিল। সে হঠাৎ হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যেত। তার পর হাইওয়েতে তার সঙ্গে এক দিন দেখা হয় এক দল ছেলেমেয়ের। ঋতুও সেখানে ছিল। তারা বিয়ার-টিয়ার খেয়ে হুল্লোড় করে। ছেলেটিও যোগ দেয়। হঠাৎ এক সময় ছেলেটি দেখে, ঋতু একা একা কোথায় বেরিয়ে যাচ্ছে। ছেলেটিও ওর সঙ্গে যায়। এবং তাকে এক রকম উদ্ধার করেই বাড়িতে দিয়ে আসে। ঋতুর বাবা হয়েছিলেন দীপংকর দে। বাবার ছেলেটিকে খুব ভাল লেগে যায়। এবং তার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে দেন। মেয়েটা কিন্তু মেনে নিতে পারে না। বড়লোকের মেয়ে, অত মধ্যবিত্ত পরিবারে বউ হয়ে আসে। সে আবার ওই বন্ধুদের কাছে ফিরে যেতে চায়। সেখানে একটি ছেলের সঙ্গে তার ভালবাসাও ছিল। কিন্তু বাবা তাকে জানিয়ে দেন, না এটাই তোমার সংসার, এ-ই তোমার উপযুক্ত ছেলে।

পুরীতে যখন শুটিংটা করেছিলাম, দারুণ মজা হত। এক দিন ঠিক হল, মন্দিরে যাব। ঋতুর পরিচিত এক পাণ্ডা আমাদের পুজোর ব্যবস্থা করে দিলেন। পুজো দিয়ে মন্দির থেকে বের হচ্ছি, তিনি বললেন, ঠান্ডাই খাবেন? আমি তখন জানিই না, ঠান্ডাই কী। ফল-টল দিয়ে বানানো। আসলে তার মধ্যে ভাং দেওয়া। এ বার রাতে ভাং-টাং খেয়ে কেউ হাসছে, কেউ গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে। আমি আবার খুব সাবধানী হয়ে গেলাম। সবাইকে বারণ করতে লাগলাম, এই, তুই এটা করিস না। কেউ হয়তো জানলার ধারে যাচ্ছে, তাকে বলছি, এই এই, তুই পড়ে যাবি। খবরদার যাস না ওখানে। যা-তা কাণ্ড!

শেষ পর্যন্ত ছবিটা রিলিজ করল ১৯৯৪ সালে। ওরা বোধহয় ফিক্সড বুকিংয়ে দিয়েছিল দু’সপ্তাহ। কারণ তার পরই ছবিটা হল থেকে উঠে যায়। কিন্তু ওই সময় আমি নিজে পদ্মশ্রী, বিজলিতে দেখেছি— হাউসফুল। পরে যখন টিভিতে ছবিটা দিয়েছে, অনেকেই আমাকে বলেছেন, বাহ্! সুন্দর ছবি। কবে রিলিজ করেছে? এখন মনে হয়, ছবিটা যদি ধরে রাখা হত, হয়তো ভালই চলত।

sankar.chakroborty2013@gmail.com

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

shankar chakraborty tollywood newcomer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE