Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

রবিবাসরীয় ম্যাগাজিন

শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৫ ০১:৫৭
Share: Save:

ছবি: মোবিয়াস

দেশ: দক্ষিণ কোরিয়া

পরিচালক: কিম কি-দুক

সাল: ২০১৩

শান্তনু চক্রবর্তী

সম্পর্ক নিয়ে লোফালুফি

ছবির শুরুতেই লোকটার মোবাইলে ওর বান্ধবীর ফোন আসে। বউটা মোবাইল কেড়ে নিয়ে সেই রসের সংলাপ ভেস্তে দিতে চায়। মেঝেতে শুয়ে-গড়িয়ে এমন ভাবে দুজনের কাড়াকাড়ি-জাপটাজাপটি-ঝটাপটি চলে, আচমকা মনে হবে, ওরা বোধহয় সঙ্গম করছে! কিশোর ছেলেটা ঘরের কোণে দাঁড়িয়ে শুধু দেখে। আবার বাবা যখন তার রক্ষিতাকে একেবারে বাড়িতে এনে তোলে, শোওয়ার ঘরের দরজা না ভেজিয়েই খুল্লমখুল্লা শরীর-খেলায় মেতে যায়, তখনও স্কুলফেরত ছেলেটা হাঁ করে দেখে! তবে শুধু ছেলেটা নয়, বাড়ির ভেতর ‘অন্য’ মেয়ের যাতায়াত, বউটাও টের পায়। আর তাদের শোওয়ার ঘর থেকে ওই মেয়েটাকে যে দিন সে স্বচক্ষে বেরোতে দেখে, বউটার আর মাথার ঠিক থাকে না। সে একটা ছুরি নিয়ে বরের ঘরে ঢোকে, ওর পুরুষাঙ্গটা কেটে নেবে বলে। কিন্তু গায়ের জোরে এঁটে উঠতে না পেরে, প্রতিশোধের গনগনে জ্বালায় পাশের ঘরে ঘুমন্ত ছেলেটারই লিঙ্গচ্ছেদ করে বসে মা!

রক্তাক্ত ছেলেটা আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া বাবাটাকে ফেলে রেখে, চোখের জলে থইথই মা চলে যায়। আর এখান থেকেই অনেকটা গ্রিক নাটকের গড়নে সাজানো ছবিটা দ্বিতীয় অঙ্কে ঢুকে পড়ে। সেখানে পাপ, অনুশোচনা, প্রায়শ্চিত্ত আর কহানি-মে-টুইস্ট লাগানো নিয়তির খেলা। অপরাধবোধে জ্বলেপুড়ে খাক বাবা, ছেলেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে চায়। কিন্তু ইস্কুলের টয়লেটে হিসি করতে গিয়েই তো ছেলেটা ধরা পড়ে যায়। ক্লাসের বজ্জাত ধেড়ে দস্যিগুলো রাস্তার ওপরেই প্যান্ট নামিয়ে তার লজ্জার জায়গাটা পরখ করে দেখতে চায়। ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে বাবাও ওদের হাতে মার খায়। মরিয়া লোকটা ইন্টারনেট তোলপাড় করে লিঙ্গ প্রতিস্থাপনের খবর খোঁজে। বেচারা ছেলেটা তার লিঙ্গহীনতা ঢাকতে প্রাণপণে ‘পুরুষ’ হওয়ার চেষ্টা করে। যে গুন্ডারা তার বাবার রক্ষিতা, মুদিখানার সেল্সগার্ল মেয়েটাকে গণধর্ষণ করে, তাদের দলে ভিড়ে গিয়ে ছেলেটা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। ‘ধর্ষণের আসামি’ ছেলেকে উদ্ধার করতে থানায় এসে বাবা যত বার পুলিশের সামনে তাকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণ করার চেষ্টা করে, ছেলেটা তত বারই তীব্র আক্রোশে বাবাকে আঘাত করে, লাথি মারে। কারণ, এখানে ‘ও কিছু করেনি’ প্রমাণ হয়ে যাওয়া মানেই তো ‘ও কিছু পারে না’-র গায়ে সিলমোহর!

বাবা নেট ঘেঁটে ছেলের জন্য লিঙ্গহীন যৌনসুখের নানান টোটকা খুঁজে দেয়। হাত-পায়ের চেটোয় খরখরে ইট-পাথর ঘষে ছালচামড়া তুলে, বা কাঁধে-পিঠে ছুরি বিঁধিয়ে, সে এক মারাত্মক মর্ষকাম! শেষ অবধি বাবা নিজের পুরুষাঙ্গ দিয়ে ছেলের লিঙ্গ-প্রতিস্থাপনের সার্জারি করায়। আর ট্র্যাজেডির তৃতীয় অঙ্ক শুরু হয়। বাবা-ছেলের সংসারে হঠাৎ ফিরে আসে উধাও হয়ে যাওয়া মা। লিঙ্গহীন বাবাকে দেখিয়ে দেখিয়ে মা ছেলের ঘরে যায়। তার পুরুষাঙ্গ ছুঁয়ে আদর করে। ছেলে প্রথমটায় বাধা দিলেও তার পর মেনেও নেয়। আর পুরুষাঙ্গ খয়রাত-করা বাড়ির পুরুষসিংহটি অসহায় আক্রোশ, ঈর্ষা আর যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকে। গ্রিক ট্র্যাজেডির মতোই ছবির রক্তাক্ত ক্লাইম্যাক্সটাও অনিবার্য ভাবেই ঘনিয়ে আসে।

এ ছবিতে ‘ইডিপাল’ মনোবিকলনের সমস্ত আয়োজন উপাদান যত্নে সাজানো হয়েছে, এমনকী মা এবং অন্য মেয়েটির ভূমিকাতে এক জনই অভিনেত্রীকে দেখা গেছে। এ-ও যেন কোথাও বধূ ও বেশ্যার দ্বৈত সত্তার তত্ত্বকে একেবারে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। আসলে ইডিপাস নয়, এখানে ফ্রয়েডীয় বিকলন আর লিঙ্গচ্ছেদের তত্ত্ব নিয়ে মনোবিদদের আদিখ্যেতাকেই বোধহয় ঠাট্টা করা হয়েছে। দুনিয়াভর পর্নো-শিল্পে পুরুষের যৌনাঙ্গের যে ভয়ানক দাপট, সেটা নিয়েও কোথাও কোথাও স্পুফ করা হয়েছে। গোটা ছবিতে একটাও সংলাপ নেই। তবু ব্যর্থ শীৎকার, বুকফাটা গোঙানি আর জমা রাগের চাপা দাঁত-ঘষটানিতে চরিত্রগুলোকে চেনা আর জ্যান্ত লাগে। তখন চিত্রনাট্যে ছড়ানো-ছেটানো অসহ্য ভয়ংকর ভায়োলেন্সের মুহূর্তগুলোও বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।

sanajkol@gmail.com

সারা রাজ্য জুড়ে বিপুল উন্মাদনার সঙ্গে ‘নিষ্ঠীবন নিক্ষেপ উৎসব’ পালন করা হল। থুতু, গুটখা ও পানের পিক ফেলাকে কেন্দ্র করে এত বড় অনুষ্ঠান সফল ভাবে আয়োজন করে সব‌ রাজ‌্যের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পশ্চিমবঙ্গের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগ। প্রসঙ্গত, এটি রাজ‌্য সরকারের ‘উৎসব কি কিছু কম পড়িয়াছে?’ প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। জনগণের বিপুল সমর্থনে এটি ‘গঙ্গা বাঁচাও’ প্রকল্পটিকে হারিয়ে সব থেকে বেশি অনুদানও ছিনিয়ে নিয়েছিল। শহর-গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা এই নতুন হোলিতে অংশ নিয়েছেন। গুটখা ও অন‌্যান‌্য পানমশলা বিক্রি মাঝে বন্ধ হয়ে গেলেও গত ১০ বছরে রাজ‌্যে এর রেকর্ড চাহিদাকে সম্মান জানাতে এটি আবার বৈধ ঘোষিত হয়। প‌্যাকেট পিছু ৫০% ছাড়ও দেওয়া হয়। উৎসবের কয়েক দিন আগে থাকতেই মহাকরণের বাইরের দেওয়াল সাদা চুনকাম করা হয়, যাতে দূর-দূরান্তের মানুষ এসে পান ও গুটখার পিকে দেওয়াল রাঙিয়ে উৎসবে শামিল হতে পারেন। সপ্তাহ জুড়ে প্রতিটি ট্রাফিক সিগনালে রবীন্দ্রনাথের ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও’ গানটি ক্রমাগত বাজানো হয়। গুটখা মুখে নিয়ে কথা বলার অভ‌্যাসকে বাহবা দিয়ে মুখ‌্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই ভাবেই শৈশবে ফিরে যেতে হয়। গুটখা মুখে থাকলে বড়দের কথাও কেমন আধো আধো শোনায় বলুন তো!’ উৎসব উপলক্ষে অ‌্যাকাডেমিতে একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। তাতে ক্যানভাসের ওপর পানের পিক ফেলে ভারতবর্ষের মানচিত্র, বিভিন্ন মনীষীর ‌ছবি আঁকা হয়। পিকশিল্পীরা জানালেন, সরকার বহুমূল‌্যে তাঁদের পিকচিত্রগুলি কিনে নিচ্ছেন। ওগুলি রাজ‌্যের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে সাজানো হবে। যেমন মহাকরণ, ভিক্টোরিয়া, ইডেন গার্ডেনস, দমদম িবমানবন্দর, হাজারদুয়ারি, পাঁচতারা হোটেল। এ ছাড়া জোড়াসাঁকো ও শান্তিনিকেতনে কবিগুরুর বাড়ি ও কর্মক্ষেত্র পিকশোভিত করার জন‌্য ভিনরাজ‌্য থেকে বিখ‌্যাত পিক-ওস্তাদদের বায়না দেওয়া হয়েছে।

পদ্মনাভ মজুমদার, শ্রীরামপুর, হুগলি

লিখে পাঠাতে চান ভবিষ্যতের রিপোর্ট? ঠিকানা:
টাইম মেশিন, রবিবাসরীয়, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০০১।
অথবা pdf করে পাঠান এই মেল-ঠিকানায়: robi@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE