Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

ধর্ষণের হুমকিতেও থামেনি র‌্যাপ

মারধোর, হুমকিতে মাথা নিচু না করে মেয়েদের দল গেয়ে যাচ্ছে গান। মারধোর, হুমকিতে মাথা নিচু না করে মেয়েদের দল গেয়ে যাচ্ছে গান।

সুরকন্যা: আফগানিস্তানের ‘জোহরা’ ব্যান্ডের সদস্যরা

সুরকন্যা: আফগানিস্তানের ‘জোহরা’ ব্যান্ডের সদস্যরা

সুজিষ্ণু মাহাতো
শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ছোট ভাইয়ের হাত ধরে বাড়ি ফিরছিলেন তরুণী। হঠাৎ ছ-ছ’টা মোটরবাইকে ঘিরে ধরল জনা দশেক লোক। হাতে মোটা লাঠি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মেয়েটিকে মারতে শুরু করল সকলে। মেয়েটির দোষ, তিনি গায়িকা। তাঁর কাতর আর্তি শুনেও পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে পথচলতি মানুষ। তরুণীর বন্ধু যখন খোঁজ পেলেন, তখন রক্তে ভেসে গিয়েছে পথ। রক্তাক্ত তরুণী যান থানায়। কিন্তু দোষীদের ধরা দূর অস্ত, পুলিশের পরামর্শ: গান থামিয়ে দিন।

সে দিন তরুণী শপথ নিয়েছিলেন, আমি চুপ করে গেলে এ সব বদলাবে না। বিশ্ব আজ তাঁকে চেনে আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা র‌্যাপ শিল্পী হিসেবে। মেয়েদের অধিকার নিয়ে সেই প্যারাডাইস সোরৌরি-র গান সাড়া ফেলেছে বিশ্বে।

আঘাত কম পাননি সোরৌরি। এক সময় তাজিকিস্তানে চলে যান। সেখানেই খবর পান, তাঁর নয় ও বারো বছরের দুই বোন আত্মহত্যা করেছে। তাদের বিয়ে ঠিক হয়েছিল ষাটোর্ধ্ব দুই ব্যক্তির সঙ্গে, তারা তা চায়নি। এই খবরে বিধ্বস্ত সোরৌরি আফগানিস্তানে ফিরে রেকর্ড করেন গান ‘নালেস্তান’। ভিডিয়োতে তাঁকে গাইতে দেখা যায়, ‘আমি ভাবতে চেয়েছিলাম, ওরা আমায় মেরেছে।’

২০১২-য় বাইশ বছর বয়সে সেই গান রেকর্ডের পরেই নজরে আসেন তিনি। ‌ বাড়ে প্রাণহানির হুমকিও। হুমকির জেরে তিনি ও তাঁর প্রেমিক বার্লিন চলে যান। তাঁদের ‘ওয়ানফর্টিথ্রি ব্যান্ড’-এর ফেসবুক পেজে খুন, ধর্ষণ, অ্যাসিড ছোড়া— কোনও হুমকিই বাদ থাকেনি। তবু টলেননি সোরৌরি। দেশের নারীদের কথা পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বে। লন্ডনে নারীর অধিকার নিয়ে একটি সম্মেলনে জানিয়েছেন, গানেই তুলে ধরবেন দেশের মেয়েদের কথা।

আরও পড়ুন: সিনেমায় আমার গাওয়া গান এখন ইউটিউবে

সোরৌরির লড়াইয়ের পালে হাওয়া দিয়েছে অন্য মেয়েদের লড়াইও। সুইটজারল্যান্ডে ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম-এর মঞ্চে গান গেয়েছে ‘জোহরা’, আফগানিস্তানের প্রথম মহিলা অর্কেস্ট্রা। তেরো থেকে কুড়ির এক ঝাঁক কন্যা যখন সুর তুলছিল রবাব-সেতার-ক্ল্যারিনেটে, মুছে যাচ্ছিল সব মারণ-হুমকির দাগ।

হুমকি তাদের সঙ্গী আশৈশব। তালিবান শাসনে সুর থেকে শিক্ষা সবই নিষিদ্ধ। জোহরার নেতৃত্বে থাকা কুড়ি বছরের নেজিনা খাপলাক-এর বাবা-মা তাঁর সঙ্গীতশিক্ষা সমর্থন করেছিলেন বলে নেজিনার ঠাকুমা ছেলেকে ত্যাজ্যপুত্র করেন। নেজিনার কাকু তাঁকে ‘পরিবারের লজ্জা’ বলে খুনের হুমকি দেন। কাবুলে পালিয়ে আসতে হয়। তবু স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি।

দীপ্তি উজল হয়েছিল ভারতেও। কাশ্মীরের তিন কন্যা তৈরি করেছিল রক ব্যান্ড ‘প্রগাশ’। সংস্কৃতে যার অর্থ ‘আলো’। তিন কন্যার আলো অবশ্য স্তিমিত হয়েছিল লাগাতার হুমকিতে।

‘জোহরা’ ও আফগানিস্তানের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব মিউজিক-এর প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ সারমাস্ত নিজেও আত্মঘাতী হামলায় মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছেন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। আহমেদের ইচ্ছে, বিশ্বের সামনে স্বদেশের অন্য ছবি তুলে ধরা। যে ছবি কালাশনিকভ মনে পড়ায় না। মনে পড়ায় নতুন এক বিশ্বকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE