‘রূপ তেরা মস্তানা’ গানের দৃশ্য
সে বার মুম্বই থেকে শচীনকর্তা এসেছেন। আড্ডা জমে উঠেছে সাউথ এন্ড পার্কের বাড়িতে। গায়ক-অভিনেতা, চিত্র-পরিচালকদেরও কেউ কেউ এসেছেন। জমজমাট মজলিশ। শচীনকর্তা তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে টুকরো টুকরো গল্প বলছেন আর হারমোনিয়াম বাজাচ্ছেন। বললেন, ‘‘আরে জাননি, শক্তি একটা ছবি করতাসে। আমারে কইল সুর দিতে। কইল সেক্সের গান করতে হইব। কী হইল জানস...।’’ গল্পের ধরতাই শুনেই মজলিশ বুঁদ!
ফের শুরু করলেন, ‘‘বহু কাল আগের একটা কথা মনে পইড়্যা গেল। এক ব্যাটার বাড়িতে গেছিলাম। তারে ডাকতাছি। কিছুতেই আর বাইর হয় না। অনেক পরে ঘরের থেইক্যা বাইরে আইল। দিলাম ব্যাটারে বকা। কয় কী, ‘কর্তা মাফ করেন। পোলাডারে বিয়া দিমু আইজকা, তাই কাপড় পরাইতাছিলাম।’ কর্তা তো অবাক! এত অল্প বয়সে বিয়ে! প্রশ্ন করতে লোকটি বললেন, এখন দেওয়াই ভাল। নইলে ছেলে পরে বিগড়ে যেতে পারে!
মজলিশি শচীনকর্তার এ গল্প মেলে শ্যামল চক্রবর্তীর ‘ভাটি গাঙ বাইয়া’-তে। সে দিন কত্তা যখন সেই ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা বলছেন, দেখলেন, কাছেই ছোট্ট একটি মেয়ে খেলছে। বিয়ের কথায় ছোট মেয়েটি নিজের মনেই হাসতে হাসতে গান ধরে, ‘কালকে যাব শ্বশুরবাড়ি/ আহ্লাদে খাই গড়াগড়ি/ দেখব তোরে প্রাণ ভরে সুন্দরী...’
আর গান শুনেই সে দিন শচীন দেববর্মন ঠিক করে ফেলেন, এই সুরই শক্তির ছবিতে দেবেন। লয় কমিয়ে গাওয়াবেন কিশোরকুমারকে দিয়ে। সকলের প্রশ্ন, কোন গান? গল্পের ক্লাইম্যাক্সে পৌঁছে শচীনকর্তা হাসেন। হারমোনিয়ামের বেলো টেনে প্রিলুড বাজিয়ে বলেন, ‘‘ঠিক কইরা ফালাইলাম, কিশোরকে কমু জোরে জোরে একটু নিশ্বাস ফালাইতে। তা হলেই সেক্সের গান হইয়া যাইব। সেই হইয়া গেল, ‘রূপ তেরা মস্তানা।’
সুরস্রষ্টা: শচীন দেববর্মন।
শুধু কলকাতা নয়, মুম্বইয়েও কর্তাকে নিয়ে নানা গল্প ছড়িয়ে গানের দুনিয়ায়। নিজের স্মৃতি থেকে তেমন নানা গল্প শুনিয়েছেন গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়। শচীনকর্তা তাঁকে নিজের গান তৈরির বিচিত্র সব গল্প শোনাতেন। লতার সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা, প্রথম যুগ্ম বাণিজ্যিক সাফল্যের গান, আরও কত কিছু। সে বারও যেমন শুনিয়েছিলেন।
তখন বড় সুরকারদের নিজস্ব মিউজিক রুম থাকত স্টুডিয়োতে। এক দিন সকাল সকাল মিউজিক রুমে গিয়েছেন শচীনকর্তা। ঢুকেই হতবাক! স্টুডিয়োতে চা-জল দেয় যে ছেলেটি, সে আপন মনে পিয়ানো বাজিয়ে চলেছে। সুরটা কানে যেতেই চুপিচুপি কর্তা নোটেশন নিতে শুরু করলেন। ছেলেটি থামতেই, ফের বাজাতে বললেন তাকে। সে তো শুনেই ভয় পেয়ে গিয়েছে। ভাবছে, আজই তার চাকরির শেষ দিন!
সটান কর্তার পায়ে পড়ে সে বলল, ‘‘ভুল হয়ে গেছে সাহেব। এ বারের মতো মাফ করে দিন।’’
রিনরিনে মেলোডিতে বুঁদ হয়ে কর্তা হাসছেন তখন। বললেন, ‘‘মাফ তো করে দিলাম। তুই যে আমাকে কী দিলি, তা জানিস না।’’
সেই ১৯৫১-তেই মহেশ কাউল-এর ‘নওজওয়ান’ ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের জন্য সুর করলেন। তৈরি হল বিখ্যাত সেই গান— ‘ঠান্ডি হাওয়ায়ে লেহ্রাকে আয়েঁ।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy