Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ছোটগল্প
Ahetuk

অহেতুক

পায়েল মাথা নেড়ে বলল, “আমাদের বরগুলোকে দ্যাখ। শুধু ভয়ে মরছে!”

ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ

ছবি: প্রসেনজিৎ নাথ

মধুমিতা ঘোষ
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০২০ ০০:২২
Share: Save:

একটা কোথাও চলো প্লিজ়। এখন তো আর লকডাউন নেই।” পায়েলের কথায় সায় দিয়ে মুনাই বলল, “সত্যি তোমরা না বড্ড ভিতু। এই তো আদৃতা বলছিল, ওর বর লকডাউনে এতটাই হাঁফিয়ে গিয়েছিল যে, লকডাউন পিরিয়ড শেষ হওয়ার পরের দিনই ওকে নিয়ে লং ড্রাইভে বেরিয়ে পড়েছিল। আর বিহু তো দুই বোনের ফুল ফ্যামিলি নিয়ে বকখালি ঘুরে এল।”

পায়েল মাথা নেড়ে বলল, “আমাদের বরগুলোকে দ্যাখ। শুধু ভয়ে মরছে!”

মুনাই চোখ কুঁচকে বলল, “আরে মাম্মাম আর কুট্টুসের কথা তো ভাববে এক বার! ওরা বাচ্চা। লকডাউনের কী বোঝে? পার্কে যেতে পারছে না। ফ্ল্যাটের এই ন’শো স্কোয়ারফুটের মধ্যে এত দিন ধরে বন্দি। দেখছ না কেমন ঘ্যানঘেনে হয়ে গেছে।”

পায়েলের বর অভীক আর মুনাইয়ের বর নীলেশ, দু’জনে দাবা নিয়ে বসেছে। এই দুই পরিবার পাশাপাশি দুটো ব্লকে থাকে। অভীক আর নীলেশ এক সঙ্গে জয়পুরিয়া কলেজে পড়েছে। তার পর কলেজ ছাড়ার পর দীর্ঘ দিন কোনও যোগাযোগ ছিল না। হাউজ়িংয়ের একটা মিটিংয়ে দু’জন দু’জনকে দেখে চিনতে পারে। তার পর থেকে দুই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা।

অভীকের বৌ পায়েল আর নীলেশের বৌ মুনাইয়ের মধ্যেও এখন গভীর বন্ধুত্ব। আর পায়েলের পাঁচ বছরের মেয়ে মাম্মাম আর মুনাইয়ের সাত বছরের ছেলে কুট্টুসের মধ্যে যত ভাব, তত ঝগড়া। কোথাও বেড়াতে গেলে দুই ফ্যামিলিই এক সঙ্গে যায়।

নীলেশ উল্টোডাঙার এসবিআই-তে রয়েছে। আর অভীক আই টি সেক্টরে। দু’জনেই ব্যস্ত। তবে প্রায়ই ছুটির দিনে এক সঙ্গে আড্ডা মারে।

আজ রবিবার। সন্ধেবেলায় অভীকের বাড়িতে সবাই বেশ আড্ডার মেজাজে। তখনই বেড়াতে যাওয়ার প্রসঙ্গটা ওঠে।

প্রথমে ঠিক ছিল দিঘা থেকে বারো কিমি দূরে বিচিত্রপুর যাবে। কিন্তু খোঁজখবর নিয়ে জানল, এখন ওড়িশা গভর্নমেন্ট স্পিডবোট বন্ধ করে রেখেছে। তখন নীলেশ বলল, “চলো তা হলে, দিঘাতেই ঘুরে আসি।”

মুনাই তবু এক বার বলেছিল, “এই গরমে?”

পায়েল মুনাইকে কনুইয়ের খোঁচা দিয়ে চুপ করিয়ে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, চল চল। দু’দিন বেশ কাটানো যাবে।”

এর আগে বেশ কয়েক বার ওরা দিঘা গিয়েছে। আর যত বারই গিয়েছে তত বারই নিউ দিঘার ‘সমুদ্রতট’ হোটেলে ছিল। হোটেলটা ওদের বেশ পছন্দের। একটু নিরিবিলি জায়গায়। ব্যালকনি থেকে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দুই-ই দেখা যায়। মালকিন নিজের হাতে রান্নার তদারকি করেন। তাই বেশ ঘরোয়া আর সুস্বাদু রান্না খাওয়া যায়। বিশেষ করে চিংড়ির ভাপা বা ভেটকির পাতুরিটা অসাধারণ।

মুনাই বলল, “এই শোনো, এক্ষুনি সমুদ্রতটে ফোন করে ফাইনাল করে দাও যে, আমরা সেকেন্ড স্যাটারডেতে যাচ্ছি। ওই করছি-করব করতে করতে তার পর ভুলে যাবে। তার পর গিয়ে দেখব ফুল বুক্ড। আছে তো মোটে ছ’টা ঘর।”

পায়েল সায় দিয়ে বলল, “হ্যাঁ, হ্যাঁ, ঠিক বলেছিস। এদের কিচ্ছু বিশ্বাস নেই। দেখলি না, গত বছর শান্তিনেকেতনে দোলে যে জন্য যাওয়াই হল না।”

নীলেশ চোখ নাচিয়ে বলল, “রুমের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মেনুটাও জানিয়ে দিস। সন্ধেবেলায় ফিশ ফিঙ্গার আর চিকেন পকোড়া।”

রাস্তা একেবারেই ফাঁকা। সকাল ছ’টায় বেরিয়ে দিঘায় সাড়ে দশটা নাগাদ পৌঁছে গেল। কিন্তু এ যেন একেবারে অচেনা দিঘা। কোনও লোকজন নেই। সমুদ্রসৈকত একেবারে ফাঁকা। দোকানপাট বন্ধ। কেমন যেন খাঁ খাঁ করছে।

মুনাই বলল, “দ্যাখ এত দিন যখন দিঘা আসতাম, বলতাম এত ভিড়ে পরের বার আসব না। আর এখন ভিড় নেই বলে খারাপ লাগছে।”

কুট্টুস বলল, “আমরা তা হলে সমুদ্রে স্নান করব না বাবা?”

নীলেশ রাইট টার্ন নিতে নিতে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ, করব না কেন? সমুদ্রে স্নান করে খিদেটা আর একটু বাড়িয়ে নিতে হবে না?”

পায়েল জানলার মধ্যে দিয়েই বাইরের দিকে তাকিয়ে বলল, “আজ দুপুরে কী মেনু গো?”

অভীক মাথা নেড়ে বলল, “স্পেশ্যাল মেনু বলতে চিংড়ি ভাপা আর ভেটকির ঝাল।”

কুট্টুস বলল, “চিকেন নেই?”

অভীক বলল, “রাতে আছে। চিলি চিকেন আর ফ্রায়েড রাইস।”

মেনুর কথা শুনেই মাম্মাম আর কুট্টুস আনন্দে এক সঙ্গে “ইয়া!” বলে চেঁচিয়ে উঠল।

গাড়িটা হোটেলের গেটের মধ্যে ঢুকিয়ে সবাই হইহই করে নেমে পড়ল। মাম্মামদের জায়গাটা চেনা বলে এক দৌড়ে পার্কের স্লিপে চলে গেল। হোটেল-মালিক মানব ভকত আর ওঁর বৌ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে অভ্যর্থনা জানালেন।

গাড়ি থেকে ব্যাগ ওঁরা নামাতে উদ্যোগী হ’লে নীলেশ হাত নেড়ে বলল, “এ মা ছি ছি! হালকা লাগেজ। আমরাই পারব।”

অভীক পাশ থেকে বলল, “কেন মদন আর উত্তম নেই?”

ভকতবৌদি মাথা নেড়ে বললেন, “না। আমরা দু’জনেই রয়েছি। একটু হয়তো অসুবিধে হবে। এ বারটা একটু মানিয়ে গুছিয়ে নেবেন স্যর।”

মানববাবু নীলেশের হাত থেকে একটা ট্রলি জোর করে নিয়ে বললেন, “কবে থেকে খবর পাঠাচ্ছি জানেন! বলল, ‘না বাবু। হোটেলে চলে এলে আর গ্রামে ঢুকতে দেবে না।’ আমিও বলেছি, এত দিন বসিয়ে মাইনে দিয়েছি। আর দেব না। নে, পেটে কিল মেরে বসে থাক।”

দোতলার কর্নারে পাশাপাশি দু’টো ঘর। জানলা খোলা মাত্র সমুদ্রের হাওয়া ঘরের মধ্যে লুটোপুটি খাচ্ছে। এত ক্ষণ এসিতে ছিল বলে বুঝতে পারেনি। বাইরে রোদের ভীষণ তেজ। হাওয়া দিচ্ছে বলে বাঁচোয়া। তবে দু’টো ঘরই এসি।

নীলেশ হেঁকে বলল, “শোনো সব চেঞ্জ করে নাও। চা খেয়ে আগে স্নান সেরে আসি, তার পর বসাবসি হবে।”

কিন্তু ওরা নীচে নামা মাত্র মানববাবু বেরিয়ে এসে বললেন, “স্যর, সমুদ্রে কিন্তু স্নান করা যাবে না। পুলিশের বারণ।”

অভীক চোখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “মানে?”

পায়েল চোখ বড় বড় করে বলল, “দিঘায় আসব অথচ সমুদ্রে স্নান
করব না? আরে এখন তো আর লকডাউন নেই।”

মানববাবু বিনীত স্বরে বললেন, “জানি ম্যাডাম। কিন্তু আমরাও নিরুপায়। প্রশাসনের হুকুম তো আর অমান্য করতে পারি না।”

নীলেশ বিরক্তির সুরে বলল, “তা হলে আপনাকে যখন রুমের জন্য ফোন করেছিলাম, তখন বললেন না কেন? তা হলে দিঘা না এসে তাজপুর বা মন্দারমণিতে চলে যেতাম।”

মুনাই আর পায়েল একযোগে ঘাড় নেড়ে বলল, “সেই তো।”

মাধববাবু মাথা নেড়ে বললেন, “ওখানেও কিন্তু প্রশাসন একই রুল জারি করে রেখেছে স্যর।”

মাম্মাম আর কুট্টুস তো সমুদ্রে নামতে পারবে না শুনে প্রায় কেঁদে ফেলে আর কী!

পায়েল বলল, “যাক গে, এই রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সময় নষ্ট না করে চলো রুমের বাথরুমেই স্নান করে নিই। খেয়েদেয়ে একটু গড়িয়ে নেব। বাব্বা, কোন ভোরবেলায় আজ উঠেছি। বিকেলে বিচে গিয়ে পা ভিজিয়ে আসব।”

মুনাই হাত নেড়ে বলল, “হ্যাঁ। পুলিশ তো আর পা চেক করে দেখবে না জলে ভেজা কি না।” মুনাইয়ের কথা শুনে সবাই হেসে উঠল।

বিকেলে বিচে যখন গেল, পুরো বিচ ফাঁকা। একটুখানি হাঁটার পরই মনে হল চার-পাঁচ জন লোক ওদের অনুসরণ করছে। পোশাক দেখে মনে হল স্থানীয় মানুষ। কিন্তু ওদের হাবভাব কেমন যেন সন্দেহজনক। মুনাই ফিসফিস করে বলল, “এই চার দিক একদম ফাঁকা কিন্তু। যা দেখছি আমরা ছাড়া নিউ দিঘাতে আর কোনও টুরিস্টও নেই।”

পায়েলও বলল, “বেশি দূর আসিনি। চলো, হোটেলে ফিরে চলো। লোকগুলো কিছু করলে আমাদের কিন্তু কেউ বাঁচাতে আসবে না। কাগজে তো কত রকম কিছু পড়ি।”

অভীক বলল, “সেই। ফালতু টেনশন নিয়ে লাভ নেই। এর চেয়ে চলো হোটেলের ব্যালকনিতে দাবার বোর্ড আর গেলাস সাজিয়ে বসি।”

সবে চিকেন পকোড়ায় কামড় দিয়েছে, হঠাৎ কুট্টুস আর মাম্মাম ছুটতে ছুটতে এসে খবর দিল, “শিগগির তোমরা টেরেসে এস। দেখো কত লোক গেট দিয়ে হোটেলে ঢুকে পড়েছে।”

সবাই দুদ্দাড় করে সামনের টেরেসে এল। দেখল, রাস্তার সেই লোকগুলোর সঙ্গে আরও কিছু লোক গেটের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। মানববাবুর সঙ্গে কথা কাটাকাটি চলছে। তার পরই লোকগুলো দোতলার টেরেসে ওদের দেখতে পেয়ে হাতের ইশারায় ডাকতে লাগল। নীলেশ আর অভীক নীচে নামতে যেতেই পায়েল আর মুনাই বলল, “একদম যাবে না। যদি মারধর করে? তার চাইতে মানববাবুকে ব্যাপারটা সামলাতে দাও। আমরা রুমের মধ্যে দরজা এঁটে বসে থাকি।”

পায়েল উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, “লোকাল পুলিশ স্টেশনে বরং এক্ষুনি খবর দাও। বলা তো যায় না কোথা থেকে কী হয়!”

অভীক ঘাড় নেড়ে বলল, “ঠিক বলেছে রে। মারধর হয়তো করবে না। কিন্তু গালিগালাজ করবে। মেজাজ ঠিক রাখতে পারব না। তুই গুগল
সার্চ করে পুলিশ স্টেশনের ফোন নম্বরটা দে।”

ইতিমধ্যে কথাবার্তা উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। ওরা দোতলায় আসার গেটটা লাগিয়ে দিয়ে রুমের দরজা বন্ধ করে জানলায় এসে দাঁড়িয়েছে। হঠাৎ ডাইনিং-এর একটা কাচের জানলা ঝনঝন করে ভেঙে পড়ল। কুট্টুস আর মাম্মাম চিৎকার করে কেঁদে উঠল।

মানববাবুর বৌ হাতজোড় করে কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছেন। দু’-এক জনকে দেখে তো মনে হল স্বাভাবিক অবস্থায় নেই। অশ্রাব্য গালিগালাজ চলছে। মুনাই জোর করে মাম্মাম আর কুট্টুসকে জানলার ধার থেকে সরিয়ে নিয়ে এল।

মিনিটদশেকের মধ্যেই পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়াল। মুনাই বলল, “পায়েল তুই ওপরে থাক। আমি ওদের সঙ্গে নীচে যাচ্ছি।”

অভীক আশ্চর্য হল, পুলিশ দেখেও লোকগুলো ঘাবড়ে গেল না। ওদের একটাই যুক্তি, কলকাতা থেকে এসে ভাইরাস ছড়িয়ে টুরিস্টরা চলে যাবে। এটা ওরা হতে দেবেই না।

নীলেশ বলল, “মানববাবুকে জিজ্ঞেস করুন, থার্মাল গান দিয়ে আমাদের টেস্ট করা হয়েছে কি না। আরও যদি কিছু টেস্ট করানোর ইচ্ছে থাকে, চলুন হাসপাতালে চলুন।”

এক জন মাতব্বর মতো লোক বলল, “শুনুন বাবু, অন্যান্য সময় এই আমরাই তো টুরিস্টদের কত খিদমতগারি করি। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ। এক জনের যদি করোনা হয় তো পুরো দিঘা ছড়িয়ে যাবে। আমাদের আপনাদের মতো অত টাকা নেই যে চিকিৎসা করাব। তা হলে সবাইকে তো বিনা চিকিৎসায় মরে যেতে হবে।”

মুনাই বলল, “মুখে মাস্ক নেই। আপনারাই তো রোগ ছড়াবেন। আমরা তো মাস্ক পরে আছি। ঘন ঘন হাত স্যানিটাইজ় করছি। আপনারা সেটা করেন বলেও তো মনে হয় না।”

“শুনুন দিদিমণি, আপনি নেহাত মেয়েছেলে বলে কিছু বললাম না। ভাল করে শুনে রাখুন, এক্ষুনি হোটেল ছেড়ে, এলাকা ছেড়ে না চলে গেলে পুরো গেরামের লোকজন চলে আসবে। ভালমন্দ কিছু হয়ে গেলে দোষ দিতে পারবেন না।”

অভীক বিরক্তির সুরে পুলিশ অফিসারের দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনাদের সামনে এরা এমন হুমকি দিতে পারে?”

পুলিশ অফিসার চোখ পাকিয়ে বললেন, “অ্যাই চোপ। ভাগ এখান থেকে। আমি ব্যাপারটা দেখছি।”

লোকগুলো যে নিতান্ত অনিচ্ছেয় যাচ্ছে, তা ওদের শরীরী ভাষাতেই স্পষ্ট। কিন্তু খুব দূরে গেল না। গেটের বাইরে একটা ইউক্যালিপটাস গাছের নীচে দাঁড়িয়ে গুলতানি করতে লাগল।

পুলিশ অফিসার অভীকদের ডেকে বললেন, “শুনুন, লোকাল লোক যদি না চায় তো আপনাদের এখানে থাকা খুব মুশকিল হয়ে যাবে। এখুনি তিন-চারটে গ্রামের লোকজন এনে হল্লাবাজি করবে।”

অভীক বিস্মিত স্বরে বলল, “মানে? আপনাদের ফোর্স নেই?”

“আছে। কিন্তু এটা ফোর্স পাঠানোর মতো ইস্যু নয়। তা ছাড়া পুলিশ যদি গ্রামের লোকের গায়ে হাত দেয়, তা হলে মিডিয়া এক্ষুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে। বুঝতেই পারছেন আমরা কত হেল্পলেস।”

মানববাবু ঘাড় নেড়ে কাঁদো-কাঁদো স্বরে বললেন, “স্যর, কিছু একটা ব্যবস্থা করুন। এটাই আমার রুজি-রোজগার। লকডাউনের পর এঁরাই আমার প্রথম খদ্দের।”

পুলিশ অফিসার ঘাড় নেড়ে বললেন, “বুঝতে পারছি। কাল হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে আমাদের আর স্বয়ং ডিএমের মিটিং আছে। ঘটনাটা জানাব ওঁকে। দেখি কী করা যায়।”

নীলেশ অধৈর্য স্বরে বলে উঠল, “তা হলে এখন আমাদের কে প্রোটেকশন দেবে?”

পুলিশ অফিসার হাত নেড়ে বললেন, “শুনুন সঙ্গে গাড়ি আছে। আমার কথা যদি শোনেন তা হলে বলব, জাস্ট সাড়ে ছ’টা বাজে। গুছিয়ে-টুছিয়ে যেতে মানলাম সাতটা বেজে যাবে। রাস্তা ফাঁকা আছে। এগারোটায় কলকাতা পৌঁছে যেতে পারবেন। অন্তত বাড়িতে ফিরে নিশ্চিন্তের ঘুম ঘুমোতে পারবেন।”

মুনাই চোখ বড় বড় করে বলল, “মানে! আমাদের দিঘা ছেড়ে চলে যেতে বলছেন?”

পুলিশ অফিসার একটু বিব্রত স্বরে বললেন, “শুনুন, আমি এখুনি দুজন পুলিশকে হোটেলের সামনে পোস্টিং করে দিতে পারি। কিন্তু ব্যাপারটা সহজ নয়। এরা হোটেল-মালিককে তা হলে রেহাই দেবে না। দূর থেকে ঢিল ছুড়ে আপনাদের গাড়ির কাচও ভেঙে দিতে পারে। পিছনের ব্যালকনিতে ঢিল ছুড়তে পারে। দুজন পুলিশ কত দিকে যাবে!”

অভীক বলল, “তা হলে?”

“সে জন্যই আপনাদের বলছি, ভালয়-ভালয় কলকাতা ফিরে যান। আর এক্ষুনি কোনও জায়গায় বেড়ানোর প্ল্যান করবেন না। আর একটু পরিস্থিতি শান্ত হোক। বেড়ানো তো আর পালিয়ে যাচ্ছে না। দেখুন আমরাও চাইছি লকডাউন পিরিয়ড চলে গেছে, তাই টুরিস্ট আসুক। কিন্তু লোকাল মানুষ যদি না চায়, তা হলে তা সম্ভব নয়। দেখছেন না, এরা দোকানপাটও খুলতে দিচ্ছে না!”

হাইওয়েতে যখন গাড়ি পড়ল, অভীক বলল, “তোমাদের বরগুলোই তো সব ভিতুর ডিম! সব বন্ধুরা নাকি হইহই করে লকডাউনের পরের দিন থেকেই বেরিয়ে পড়ছে!”

পায়েল কিছু একটা উত্তর দিতে যাচ্ছিল, মুনাই ইশারা করে চুপ করে যেতে বলল। ওরা এখন বুঝতে পারছে যে, আনলক শুধু সরকারি ঘোষণা নয়, তার বাইরেও আরও অনেক কিছু। সবটা না হওয়া পর্যন্ত ঘরবন্দি জীবনই কাটাতে হবে।

গাড়ির এসি-র মৃদু আওয়াজ তাদের ভাবনাকে সমর্থন জানাচ্ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ahetuk Short Story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE