প্রণব মুখোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
ব্যবধান পাঁচ বছরের। এই ব্যবধানে রচিত হয়েছে দুই মমতার কাহিনি। মমতা মানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে দিনের মমতার বদলে আজকের মমতা অনেক বেশি শান্ত, ঘা খেয়ে আজ অনেক বেশি পরিণত। অনেক সাবধানী। আত্মপ্রত্যয়ী। কৌশলীও বটে।
সে দিনের মমতা যখন দিল্লি বিমানবন্দরে নেমে সোজা মুলায়ম সিংহ যাদবের বাসভবনে গিয়েছিলেন, আমিও ছিলাম। খুব কাছ থেকে ওঁকে দেখেছি। ওঁর সঙ্গে তখন কিরণময় নন্দ ছিলেন। সক্রিয় ছিলেন রাজ্যসভার সদস্য কুণাল ঘোষ। তখন মমতা চেয়েছিলেন আবদুল কালামকে দেশের রাষ্ট্রপতি করা হোক। দিল্লি পৌঁছতে না পৌঁছতেই তাঁর পছন্দের নামটা জানিয়ে দেওয়াটা যে মস্ত বড় ভুল হয়েছিল সেটা মমতা বুঝতে পারছেন। আজ বুঝতে পারছেন বলেই হাতের তাসটা প্রকাশ্যে ফাঁস করতে চাইছেন না। মুলায়ম যে আসলে কালাম বিরোধী এবং কট্টর নয় বলে উত্তরপ্রদেশেও যে কালাম তাঁর ভোট ব্যাঙ্কে কোনও ফ্যাক্টরই নন সেটা মমতা বুঝতেও পারেননি।
এ বার মমতা এসে প্রথম দেখা করলেন সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে। কেজরীবাল কলকাতায় ফোন করে দেখা করতে চাইছিলেন, কিন্তু তৃণমূলনেত্রী প্রথম সাক্ষাৎ করলেন সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে। কারণ? কারণ সনিয়া প্রধান বিরোধী দলের প্রধান নেত্রী, শুধু কংগ্রেস নয়, বিরোধী প্রতিপক্ষের প্রধান কাণ্ডারী মমতা এ বার প্রথম সনিয়ার সঙ্গে দেখা করে জানতে চেয়েছেন যে তাঁর মতামত কী? কী চাইছেন সনিয়া?
এমন একটা দিনে তিনি সনিয়ার সঙ্গে দেখা করলেন যে দিনটি, অর্থাৎ ১৬ মে মোদী বিপুল ভোটে বিজেপিকে জিতিয়ে এনেছিলেন। তিন বছর বাদে এই দিনটিতেই লালুপ্রসাদ থেকে চিদম্বরম, বিরোধী নেতাদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালান হচ্ছে। দিল্লির এক ক্লাবের ঘরোয়া আড্ডায় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সত্যিই আজ এক ‘রেড লেটার ডে’।
বিরোধী ঐক্যই এখন প্রধান লক্ষ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
এমন প্রতিকুল পরিস্থিতিতে মমতা কী বললেন সনিয়াকে? তিনি বললেন, প্রথমত, ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রার্থী হোক। ঐকমত্য মানে? ঐকমত্যর সেরা ঐকমত্য হল সরকার এবং বিরোধী পক্ষের ঐকমত্য। তারপর হল ইউপিএ-র ঐকমত্য, যেমন শাসক দল এনডিএ-র ঐকমত্য। বিরোধীরা অনেকে বৈঠক ডেকে নাম ঠিক করতে তাড়াহুড়ো করছেন, যেমন শরদ পওয়ার, যেমন ১৫ মে দুপুর দুটোয় মমতা কলকাতা থেকে দিল্লি রওনা দিয়েছেন ইন্ডিগো বিমানে আর নীতীশ কুমার সওয়া ২টোয় বিবৃতি দিয়ে বললেন, প্রণবকে প্রার্থী করা হোক আর মোদী খুব ভাল প্রধানমন্ত্রী, তিনিও ওর নাম সর্বসম্মত করুন। মমতার মনে হল আগাম এ সব বিবৃতি দেওয়ার মানে আসলে বিজেপিকেই সাহায্য করা। বিরোধী শিবিরে সংশয় সৃষ্টি।
আরও পড়ুন: সনিয়া-মমতা বৈঠকে সুর ঐকমত্যেরই
সবচেয়ে বড় কথা হল রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে সর্বসম্মত প্রার্থী বাছাই হল উপলক্ষ। সনিয়া-রাহুল-মমতার প্রকৃত লক্ষ্য হল, বিরোধী ঐক্যকে সুসংহত করে ২০১৯ সালের আগে মোদী-বিরোধী মঞ্চকে সুষ্ঠু ভাবে গড়ে তোলা।
প্রণববাবু নিজে সর্বসম্মত (শাসক+বিরোধী) প্রার্থী হলে তবেই লড়বেন, যে কারণে কালাম দ্বিতীয় বারের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে রাজি হননি, গত বার সেই একই কারণে প্রণববাবুও রাজি নন। ভারতে একমাত্র বাবু রাজেন্দ্রপ্রসাদই ছিলেন যিনি দু’বার রাষ্ট্রপতি হন তার পর আর কেউই দু’বার রাষ্ট্রপতি হননি। প্রণববাবুর ক্ষেত্রেও দ্বিতীয় বার রাষ্ট্রপতি হওয়া কি সম্ভব? অন্তত প্রণববাবু নিজে আজ তা মনে করেন না। বরং তিনি রাষ্ট্রপতি ভবন ছেড়ে ডুপ্লে রোডে নতুন বাসভবনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ২৮২টি আসন পেয়ে শাসক দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন যে মোদী তিনি দলীয় ও সঙ্ঘ পরিবারের কাউকে রাষ্ট্রপতি করার এ হেন সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারাবেন কেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy