Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
শাহি সমাচার
Oil

সামনে নির্বাচন, আমেরিকার সঙ্গে খারাপ সম্পর্ক চাইবেন না মোদী

আবার রাশিয়া-চিন-তুরস্ক, এই অক্ষর সঙ্গেও ভারত সম্পর্ক রক্ষা করতে চাইছে। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল  চিনের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই তারা জারি করেছে। চিন পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছে, যদি এখনই আমেরিকা এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করে তা হলে তার ফল ভুগতে হবে তাদের!

সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছেন মোদী।

সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছেন মোদী।

জয়ন্ত ঘোষাল 
শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

আমেরিকা যতই রক্তচক্ষু দেখাক, এখনই ভারতের ওপর কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি তারা করছে না।

চিনের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই তারা জারি করেছে। চিন পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছে, যদি এখনই আমেরিকা এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না করে তা হলে তার ফল ভুগতে হবে তাদের!

কিন্তু চিনের থেকে ভারতকে আলাদা রাখতেই কি তবে আমেরিকার এই ভিন্ন কৌশল?

মার্কিন সরকারি সূত্র বলছে, না! আসলে মোদী সরকার জানিয়েছে. প্রথমত, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের আসন্ন ভারত সফরে দু’দেশের ভেতর সাধারণ ভাবে প্রতিরক্ষা কৌশলগত চুক্তি হলেও এস ৪০০ সারফেস টু এয়ার মিসাইল কেনার কোনও চুক্তি সই ভারত করছে না। দ্বিতীয়ত, চিন যেমন অস্ত্র কেনা বাবদ টাকা রাশিয়াকে দিয়ে দিয়েছে। ভারত এস ৪০০-র জন্য কোনও টাকা কিন্তু এখনও দেয়নি।

ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্র বলছে, ভারত কখনওই কোনও অস্ত্র কেনার চুক্তি প্রধানমন্ত্রী স্তরে সই করে না। ফলে নিষেধাজ্ঞার কোনও প্রশ্ন ওঠে না।

ভারতীয় কূটনীতিকরা বলছেন, আসলে মোদী সরকার কৌশলে এগোচ্ছে। এ হল, সাপও মরবে আবার লাঠিও ভাঙবে না, এমন একটা কৌশল। ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করা মানে তাতে ভারতের প্রভূত লোকসান। বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারতের বিরাট নেতিবাচক প্রভাব পড়বে যদি সত্যি সত্যি এই আইন আমেরিকা প্রয়োগ করে। আবার রাশিয়া-চিন-তুরস্ক, এই অক্ষর সঙ্গেও ভারত সম্পর্ক রক্ষা করতে চাইছে। এস ৪০০ নিয়ে আলোচনা চূড়ান্ত হয়েও গিয়েছে। বিদেশমন্ত্রকের এক কর্তা বললেন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মোদীর বৈঠকে রাফাল চুক্তি চূড়ান্ত হলেও আনুষ্ঠানিক স্বাক্ষর চুক্তি মোদী করেননি। এ ক্ষেত্রে সেই সূত্র ভারত অনুসরণ করতে পারে।

ইরান থেকে তেল আমদানিতেও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেছে ভারত।

মার্কিন সূত্র বলছে, আমেরিকার আইন অনুসারে এই নিষেধাজ্ঞা কিন্তু যিনি সই করবেন, ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর বিরুদ্ধে। মানে, প্রতিরক্ষা সচিব চুক্তি সই করলে তিনি দেশের বাইরে গেলে আমেরিকা তাকে গ্রেফতার পর্যন্ত করতে পারে! অন্য কোনও সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাগরিককে কী ভাবে আমেরিকা গ্রেফতার করতে পারে প্রশ্ন করলে আমেরিকার পাল্টা যুক্তি, ভারতের অনুরোধে যদি পাক নাগরিক কোনও লস্কর জঙ্গিকে আমেরিকা ধরে দিতে পারে তবে এ ক্ষেত্রে কেন হবে না? কারণ, পাকিস্তান তার নাগরিক ওই লস্করকে তাদের নাগরিক এবং জঙ্গি বলে জানায়। আমেরিকার কাছে নিষেধাজ্ঞা আইন সন্ত্রাস বিরোধী আইনের মতোই সংবেদনশীল। তবে ভারত যদি ন্যাটোর সদস্য হত তা হলে মার্কিন আইন অনুসারে নিষেধাজ্ঞা লঘু করে দেওয়া হত। কিন্তু ভারত সেটাও চায় না।

২০১৯-এর নির্বাচনের আগে তাই মোদীর কৌশল, বাইরে নির্ভীক চরিত্র বজায় রেখে ভেতরে ভেতরে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটা বোঝাপড়া করে নেওয়া যাতে নিষেধাজ্ঞার আঘাত এড়ানো যায়।

শুধু কি নিষেধাজ্ঞা? ইরানের কাছ থেকে তেল নেওয়ার ব্যাপারেও তো মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আছে। আমরা বাইরে পাল্টা হুমকি দিয়ে বলেছি, আমরা ইরান থেকে তেল নেওয়া বন্ধ করব না। ইরানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক একই ভাবে অটুট রাখতেই হবে কারণ ইরান প্রতিবেশীর প্রতিবেশী। মানে পাকিস্তানের প্রতিবেশী। ইরানের সঙ্গে শত্রুতা নৈব নৈব চ! ভুলে গেলে চলবে না, অটলবিহারি বাজপেয়ীও ইরানের পক্ষে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভোট দিয়েছিলেন। সংখ্যালঘু ভোটের ব্যাপারে বিজেপির অবস্থান যা-ই হোক, ইরানকে কূটনৈতিক অবহেলা ভুল কৌশল। এ তো নরেন্দ্র মোদীও জানেন। তাই ইজরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক খুব ভাল হলেও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক আনুষ্ঠানিক ভাবে খারাপ করেননি!

কিন্তু কৌশলে আমরা ইরান থেকে তেল নেওয়া কমিয়েও দিচ্ছি। আপাতত বন্ধও করছি। কিন্তু সোজাসুজি নয়, ঘুরিয়ে। ইরান থেকে তেল আনে রিলায়েন্স ও আরও বেসরকারি সংস্থা। বেসরকারি সংস্থা রিলায়েন্স জানিয়েছে, তারা আর ইরান থেকে তেল নেবে না। দ্বিতীয়ত, এই বেসরকারি সংস্থাগুলিকে তেল আনার জন্য ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে হয়। বিমা সংস্থাগুলির কাছ থেকে বিমা করাতে হয়। বন্দর থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। এগুলি ব্যাঙ্ক বা বিমা সংস্থাগুলি বেসরকারি সংস্থাগুলিকে দিচ্ছে না মার্কিন ভয়ে!

ইরান যদি কুয়েত বা অন্য কোনও দেশকে তেল বিক্রি করে, তার পর সেই তেল আমরা কুয়েতের মতো অন্য কোনও দেশ থেকে নিতে পারি, তাতেও আমেরিকার সমস্যা নেই। আসলে সৌদির সঙ্গে আমেরিকা দীর্ঘ দিন ধরে সমঝোতা রেখেছে, আবার এখন আমেরিকা নিজের সঞ্চিত তেল ভারতকে বিক্রি করতে তৈরি হচ্ছে কম দামে! তবে আমেরিকার চেয়ে ইরান কাছে, তাই ইরান থেকে তেল নেওয়াটা কি আমাদের জন্য সস্তা হত না?

আসলে, ২০১৯-এর আগে আর যা-ই হোক, আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করা যে কোনও কাজের কথা নয় সেটা বুঝতে মোদী সরকারের কোনও ভুল হবে না! তাই গর্জন যতই হোক, বর্ষণ দু’পক্ষে অত হবে না বলেই মনে হয়!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE