দু’জনের নামই নরেন্দ্র। নরেন্দ্রনাথ দত্ত। অন্য জন, নরেন্দ্র মোদী। ইংরেজি ক্লাসিক স্টাইলে বলা যায়, ‘আ টেল অব টু নরেন্দ্র’। বিজ্ঞান ভবনে বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং সঙ্ঘ পরিচালিত দীনদয়াল উপাধ্যায় শোধ সংস্থান। সেখানে নরেন্দ্র মোদী স্বামীজির দর্শন, তাঁর ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে আধুনিকতা— নানা বিষয়ে নানা কথা বলেন। কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী রাজ্যবর্ধন রাঠৌর তো গদগদ চিত্তে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে গিয়ে বলেন, ‘‘ঘটনাচক্রে দু’জনেই নরেন্দ্র।’’
মোদীও খুব বড় বাগ্মী, এ নিয়ে তো কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু পুরো বক্তৃতাটি মন দিয়ে শুনতে শুনতে মনে হল, গত তিন বছরে রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি যা করছে, মোদী ঠিক তার উল্টো কথাগুলোই বলে চলেছেন। তিনি বলছেন, বাইরে থেকে কেউ এসে ঢুকতে চাইলেও সংঘাত নয়, তাকে আমরা ‘হজম’ করে নেব। অর্থাৎ, তিনি সাংস্কৃতিক ‘অ্যাসিমিলেশন’-এর কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তবে কি তিনি সেটা করছেন?
এই অনুষ্ঠানটি আদর্শ হত যদি মোদীর পাশে থাকতেন রামকৃষ্ণ মিশনের কোনও প্রতিনিধি। অতীতে স্বামীজির জন্মদিনকে আন্তর্জাতিক যুবদিবস পালনের উৎসব যখন করা হয় তখন একদা মনমোহন সিংহ গিয়েছিলেন সেই অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল রামকৃষ্ণ মিশন। কিন্তু মোদীর এই শিকাগো বক্তৃতার উৎসবে রামকৃষ্ণ মিশন সম্ভবত ঘটা করে সামিল হতে রাজি হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তুলেছেন, বিবেকানন্দের পাশে দীনদয়াল উপাধ্যায় কেন? এই দুই ব্যক্তিত্ব কি এক? দীনদয়ালের সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ সঙ্ঘের নিয়ন্ত্রণে। দীর্ঘ দিন ধরে এই নির্মাণ নিয়ে সঙ্ঘের একাংশের সঙ্গে রামকৃষ্ণ মিশনের বিরোধ হয়।
দীনদয়াল উপাধ্যায়ের জন্ম শতবার্ষিকী এবং স্বামী বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর উপলক্ষে স্টুডেন্টস কনভেনশনে ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।— ফাইল চিত্র।
মোদী যে ভাবে বক্তৃতায় অহিংসার কথা বললেন, পুরনো মত যদি গ্রহণযোগ্য না হয় তাকে যে ভাবে বদলানোর প্রয়োজনীয়তার কথা বললেন তা দেখে অনেকেরই ভাল লেগেছে। করাচি থেকে ফেরার সময় আডবাণী আমাকে বার বার বুঝিয়েছিলেন যে, আসলে রামমন্দির আন্দোলনের অর্থ তাঁর কাছে ভারতমাতার মন্দির নির্মাণ। কী ভাবে তিনি বিজেপি-কে ধর্মনিরপেক্ষ পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান সেটাই বার বার আমাকে বোঝান। তখন ওঁর কথা শুনে আমার ভাল লেগেছিল। কিন্তু ফিরে এসে সে কথা লেখার সময় আমার সম্পাদক মশাই আমাকে বলেছিলেন, উনি বলছেন, তুমি লিখছ, খুব ভাল কথা। কিন্তু বিড়াল মাছ খাব না বললে একটু সন্দেহ হয় না কি? সম্পাদক মশাইয়ের সে কথাটা আজও ভুলতে পারিনি। আমরা সাংবাদিকরা অনেক সময়েই কান দিয়ে সাংবাদিকতা করি। তখন আডবাণী যা বলেছিলেন তা বিশ্বাস করেছিলাম। কথাগুলো তো স্রেফ কথার কথা। আজ বিবেকানন্দের কথা বলছেন মোদী। দস্যু রত্নাকরই তো বাল্মীকি হয়ে উঠতে পারেন। তাই মোদীর কথাকেও আমরা ‘ফেসভ্যালু’তে নেব না-ই বা কেন? সাজিয়ে গুছিয়ে মনোগ্রাহী কথা বলা ভাল, কিন্তু এতটা ভাল নয় যা বাস্তবতা থেকে অনেক অনেক দূরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy