Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ধুঁকছে ঐতিহ্য

বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপত্য যা অনাদর ও অবহেলায় নিজেদের অস্তিত্ব হারাতে চলেছে। এমন চিঠির পাশাপাশি রয়েছে বসন্তের আগমনে প্রকৃতির সেজে ওঠার ছবি।বাংলার আনাচে কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপত্য যা অনাদর ও অবহেলায় নিজেদের অস্তিত্ব হারাতে চলেছে। এমন চিঠির পাশাপাশি রয়েছে বসন্তের আগমনে প্রকৃতির সেজে ওঠার ছবি।

ফুলে মধু খেতে ব্যস্ত মৌমাছি।

ফুলে মধু খেতে ব্যস্ত মৌমাছি।

শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০০:৩৪
Share: Save:

সঙ্কটে স্থাপত্য

মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সহায়তায় রাজা রুদ্র রায় (১৬৮৩-১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দ) এক দক্ষ মুসলিম স্থপতিকে দিয়ে চারমিনারের আদলে কৃষ্ণনগরে চক বা কেল্লা, নহবৎখানা, মূল তোরণ, রাজপ্রাসাদ ও নাটমন্দির তৈরি করেছিলেন। নদিয়ার রাজবাড়ির হস্তীশালা, অশ্বশালা, চিড়িয়াখানা আজ নিশ্চিহ্ন। ইন্দোপারসিক স্থাপত্য আর খিলান, মিনার ও স্তম্ভ শোভিত তিনতলা নহবৎখানাটিও আজ জরাজীর্ণ। দেওয়াল থেকে পলেস্তরা খসে পড়েছে। ছাদও খসে পড়ছে। ইটের ফোঁকরে জঞ্জাল, আগাছা ও পাখিদের বাসা তৈরি হয়েছে। দোতলায় ওঠার সিড়িগুলিরও ভঙ্গুর দশা। এখানেই এক সময় সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে বেজে উঠত সানাইয়ের সুর ও শাস্ত্রীয় সংগীত। জমত মুজরা।

রাজপরিবার ও সরকারি কর্তাদের কাছে অনুরোধ, নহবৎখানা আর চক মিনারটি দ্রুত সংস্কার করুন। সংস্কার করা হলে নহবৎখানা ও চকমিনার-সহ কৃষ্ণনগর রাজবাড়িটি পর্যটকদের আকর্ষণ করবে। নচেৎ ঐতিহ্যময় বিরল ওই স্থাপত্য ধ্বংস হয়ে যাবে। পরবর্তী প্রজন্মের কাছে নহবৎখানার ধারণাও বিলুপ্ত হয়ে পড়বে। নদিয়াবাসী তাঁদের অতীত, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তখন হারিয়ে ফেলবে। ঐতিহ্য রক্ষা করতে উদ্যোগী হোক রাজপরিবারের বর্তমান বংশধর ও সরকার।

প্রবীর মালাকার, কৃষ্ণনগর

ধ্বংসপ্রায় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ পাঠাগার

উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যশালী প্রাচীন গ্রন্থাগারগুলির একটি বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ প্রন্থাগার। ১৯৪৯-এ সাহিত্য পরিষদ ভবন গড়ে তোলা হয়। যদিও দার্জিলিং জেলার মহকুমা শহর হিসাবে বর্তমান শিলিগুড়ি শহরের সঙ্গে তখনকার শিলিগুড়ির আর্থ-সামাজিক অবস্থার আকাশ-পাতাল তফাত ছিল। অধিকাংশ জঙ্গলাকীর্ণ এই শহরের জনসংখ্যাও ছিল নিতান্তই কম। ফলে শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলের মতো হাতে-গোনা এক-দু’টি স্কুলই গড়ে উঠেছিল। ইতিমধ্যে মহানন্দা দিয়ে বহু জল গড়িয়েছে। বর্তমানে শিলিগুড়ির এই প্রাচীন গ্রন্থাগারটি অযত্ন আর প্রশাসনিক অবহেলায় ধুঁকছে। সাত কাঠা জমিতে গড়ে উঠে ছয় দশকেরও বেশি সময় পথ চলা ঐতিহ্যবাহী এই ভবন পলেস্তারা খসে খসে জরাজীর্ণ অবস্থায় পৌঁছেছে। সর্বত্রই ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। ফলে, নষ্ট হচ্ছে বহু দুর্মূল্য ও দুষ্প্রাপ্য নথি এবং বই।

আরও বহু নষ্ট হওয়ার জন্য প্রহর গুনছে। বর্ষা কালে এই গ্রন্থাগার চালু থাকাকালীন পাঠকদের মাথায় জল ও পলেস্তারা খসে-পড়া নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। এই ভবনের ভিতরে বই রাখার আলমারি ও ঘরের আনাচে-কানাচে সর্বত্রই উইপোকাদের নিশ্চিন্ত বাস। শিলিগুড়িতে কর্মসূত্রে থাকার সুবাদে নিত্য এই পাঠাগার যাওয়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে। তাই ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই দেখেছি গ্রন্থাগারের ভিতরের পরিবেশ কী স্যাঁতসেতে ও অস্বাস্থ্যকর। দেওয়াল ফুঁড়ে আগাছা এমন ভাবে জেঁকে বসেছে যে ভবনে চিড় ধরেছে।
কোনও কর্মী নিযুক্ত না-হওয়ায় বহু কাল ধরে এটি চলছে একজন মাত্র গ্রন্থাগারিক দিয়ে। ফলে, তিনি প্রাপ্য ছুটি নিলে গ্রন্থাগারটি বন্থ থাকে। বঞ্চিত হতে হয় পাঠক সাধারণকে। বর্তমানে কাগজ-কলমে গ্রন্থাগারের সদস্য সংখ্যা মোটামুটি ৪৪২৪ জন। দৈনিক খুব কম সংখ্যক পাঠকই এখানে বইপত্র পাঠের জন্য নিয়মিত আসা-যাওয়া করেন। ফলে, গ্রাহক চাঁদার ভাঁড়ার প্রায় শূন্যে ঠেকেছে। ইতিমধ্যে বিল বকেয়া থাকায় কর্তৃপক্ষ গ্রন্থাগারের ফোন সংযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ এর মাত্র ১০০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত তথ্যকেন্দ্র গ্রন্থাগার, অতিরিক্ত জেলা গ্রন্থাগার ও উদয়ন মেমোরিয়াল স্পোর্টস লাইব্রেরি সরকারি আনুকূল্যে ভালই চলছে।
সুদীর্ঘ বাম রাজত্বে স্থানীয় নেতা-মন্ত্রীরা ঐতিহ্যশালী এ গ্রন্থাগার ভবনের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। তথাপি প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই জোটেনি। শিলিগুড়ির দ্রুত পরিবর্তন হয়েছে। তৈরি হয়েছে উড়ালপুল থেকে সুইমিং পুল। কিন্তু অন্যতম প্রাচীন ঐতিহ্যশালী বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ গ্রন্থাগারটির ভাগ্যের শিঁকে ছেড়েনি। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বহুকাঙ্ক্ষিত রাজনৈতিক পালাবাদল এসেছে। ১৭ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত এই গ্রন্থাগারটি কাউন্সিলর তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের খাস তালুক। তাই নাগরিক সমাজ আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছে এ বার হয়তো গ্রন্থাগারটি হৃত গৌরব ফিরে পাবে।

ঝন্টু বড়াইক, শিলিগুড়ি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE