Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে খুলে দেওয়া হল হাওড়া ভাসমান সেতু

বড় বড় জাহাজ চলাচলের জন্য এই ভাসমান সেতুর মধ্যবর্তী অংশ নির্দিষ্ট সময়ে সময়ে খুলে দেওয়া হত এবং এজন্যে আগেই সংবাদপত্রে বন্ধের দরুন বিজ্ঞপ্তি মারফত জানান দেওয়া হত।যানবাহন ও লোক পারাপারের চাপে যখন যানজট নিয়ত চলতে থাকে সে সময়েই দ্বিতীয় হুগলী সেতুর পরিকল্প গ্রহণ করা হয় এবং বর্তমানে তৈরি করা হয়েছে প্রিন্সেপ ঘাটের কাছ বরাবর বিদ্যাসাগর সেতু।

তখন কে জানত এই হাওড়া ব্রিজই যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

তখন কে জানত এই হাওড়া ব্রিজই যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম হয়ে উঠবে। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ থেকে।

তারাপদ সাঁতরা
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ১৪:৫০
Share: Save:

কিন্তু তা হলেও যাত্রীদের নদী পারাপারের কথা চিন্তা করে, রেল কোম্পানির চিফ ইঞ্জিনিয়ার স্যার ব্রাডফোর্ড লেসলি নদীতে থাম না বসিয়ে এমন যে সেতুর পরিকল্পনা দাখিল করলেন, তাই অবশেষে মঞ্জুর হল। ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের ঘোষণামতো পঁচিশ বছর হবে এই সেতুটির আয়ুষ্কাল। সেতু নির্মাণের ব্যয়ভার গ্রহণ করলেন কলকাতা পোর্ট কমিশন। পরিকল্পনা মাফিক বিলেত থেকে তৈরি করা থামগুলি কতকগুলি লোহার নৌকার উপর দাঁড় করিয়ে দেওয়া হল। এ জন্যে তার নামকরণই হল হাওড়া ভাসমান সেতু। সে সময়ে ২,২০,০০০ পাউন্ড ব্যয়ে নির্মিত ১৫২৮ ফুট দীর্ঘ এই সেতুটি অবশেষে ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে জনসাধারণের ব্যবহারের জন্যে খুলে দেওয়া হল। বড় বড় জাহাজ চলাচলের জন্য এই ভাসমান সেতুর মধ্যবর্তী অংশ নির্দিষ্ট সময়ে সময়ে খুলে দেওয়া হত এবং এজন্যে আগেই সংবাদপত্রে বন্ধের দরুন বিজ্ঞপ্তি মারফত জানান দেওয়া হত।* পঁচিশ বছর টেকসই-এর মেয়াদে যে সেতু তৈরি হয়েছিল, তার উপর দিয়ে বিপুল সংখ্যক গাড়িঘোড়া আর মানুষজন চলাচল করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত সেতুটি টিকে রইল আরও প্রায় সত্তর বছর অর্থাৎ ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত, যখন ২,৪৬৩,৮৮৭ পাউন্ড ব্যয়ে ক্যান্টিলিভার ধরনের নতুন হাওড়া সেতুর উদ্বোধন হল। সেদিনের ‘হাওড়া ব্রিজ’ হয়েছে আজকের ‘রবীন্দ্র সেতু’।

আরও পড়ুন: বছর কুড়ি ধরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেল, সেতু হল না

যানবাহন ও লোক পারাপারের চাপে যখন যানজট নিয়ত চলতে থাকে সে সময়েই দ্বিতীয় হুগলী সেতুর পরিকল্প গ্রহণ করা হয় এবং বর্তমানে তৈরি করা হয়েছে প্রিন্সেপ ঘাটের কাছ বরাবর বিদ্যাসাগর সেতু।

কিন্তু সবচেয়ে লক্ষ করার বিষয়, নদীর স্বচ্ছন্দ জলপ্রবাহে সেতুর থাম গেঁথে বাধা সৃষ্টির ফলে নদী মজে যাবার আশঙ্কায়, সে সময়ের বিদেশি পূর্ত বিজ্ঞানীরা হাও়ড়ার পুল তৈরিতে নদীগর্ভে থাম ব্যবহার না করে যে সুবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন, আজকের স্বদেশি সেতু নির্মাণ পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞরা বোধ হয় এ সব চিন্তাভাবনার ধার ঘেঁষেও চলেন না। তাই সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমবাংলার নানাস্থানে নদীরগর্ভে নির্মিত এমন সব সেতুর থামে নদীর জল আটকে স্বচ্ছন্দ জলনিকেশ বাধা পেয়ে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, তারই ফলশ্রুতি দেশজোড়া ১৯৭৮ সালের এক ভয়াবহ বন্যা।

* কলকাতার ‘The Statesman’ পত্রিকার ১১ ডিসেম্বর, ১৮৯৭ তারিখে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি ‘Howrah Bridge/Notice/Sunday the 12th December/1897/Traffic across stopped from /4 P.M. to 6 P.M./R.A. DONNITHRONE./SECY. to the Port Commissioners.’

(উপরের নিবন্ধটি তারাপদ সাঁতরা-র ‘কীর্তিবাস কলকাতা’ গ্রন্থের ‘কলকাতা-হাওড়ার সেতুবন্ধ কাহিনী’ থেকে নেওয়া। আজ তার শেষ অংশ। সৌজন্যে আনন্দ পাবলিশার্স)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE