Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Durga Puja Celebration

পুজোর ছুটিতে চলুন চুপির চরে

পিনটেলটাকে ফ্রেমবন্দি করতে ব্যস্ত হতেই ডানা ঝাপটাল ইগ্রেডটা।লিখছেন অঞ্জন সরকার।দলবেঁধে দাঁড়ানো হুইসলিংটিলেরা অবাক চোখে ভাবে, একি রে, আমাদের ছবি তুলল না তো! ব্রোঞ্জ উইংড্ জাকানাটা লম্বা লম্বা পা ফেলে পার হয় জলের বুকে ভাসতে থাকা কচুরিপানার দাম। অনেকটা দূরে প্রায় পাড় ঘেঁষে ওপেন বিল্ড স্টর্কটা খাবার খুঁজে ফিরছে। আর স্নাইপটা কেমন চোখ গোল করে ঠোঁট বাগিয়ে তাকিয়ে আছে দ্যাখো...।

কম খরচে ঘোরার সেরা ঠিকানা চুপির চর।

কম খরচে ঘোরার সেরা ঠিকানা চুপির চর।

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১০:০৯
Share: Save:

ছপ্ ছপ্...দু’বার হালকা শব্দ হল...আমার ছিপছিপে নৌকোখানা কুয়াশার ওড়না সরিয়ে বাইরে এল...। চুপির ঘন পান্না সবুজ জলে একটা দোলা...জলের বুকে আঁকা বৃত্তগুলো একটা একটা করে সরে যাচ্ছে...। পানকৌড়িটা বুক পেতে নিল একটা বৃত্তকে আর তারপরেই ভেলভেট কালো ডানা চিতিয়ে জল ভাঙল। ওর পা থেকে টুপটাপ করে ঝড়ে পড়া জলের কণাগুলো শুক্তি হয়ে হারাল সবুজ পান্নায়।

পাড়ের সর্ষে-হলুদে বসন্তের আহ্বান, উচ্ছ্বল জীবনে তারুণ্য...রোদ্দুর আবছায়ায়...। লালচুলো রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড দল পাকিয়ে ঘুরছে। একটু কাছে যেতেই কুয়াশার ব্যাকগ্রাউন্ডে ছবি হয়ে গেল। আকাশে।

পায়েড কিংফিশারটা জলের বুকে ভেসে থাকা শুকনো একটা ডালের মাথায় বসে পালক উড়িয়ে গা শুকাচ্ছে। পার্পেল মুর হেন কচুরিপানার আড়ালে মুখ লুকোচ্ছে...আর কটনটিলগুলোর তাই দেখে কী হাসি...! তাল মেলাল কুটের দলও।

স্টর্কবিল্ড মাছরাঙাটা চোখ পাকিয়ে দেখছে তাদের কাণ্ডকারখানা। পিনটেলটাকে ফ্রেমবন্দি করতে ব্যস্ত হতেই ডানা ঝাপটাল ইগ্রেটটা। একটা শিরীষ গাছের পিছন থেকে সূর্যটা বাইরে এল রাঙা হয়ে। হারান মাঝি ডাক ছাড়ে, “বলি ও বাবু, শুধু ফটোক তুললিই হবে, কিছু মুখে দিতি হবে তো, নাকি! নুচিগুলান তো জুইরে গেল...”, অগত্যা ক্যামেরা রেখে জলখাবারে মন দিই...। “তুমিও এস গো হারানদা,”...নৌকো ভাসে আপন মনে।

দলবেঁধে দাঁড়ানো হুইসলিংটিলেরা অবাক চোখে ভাবে, একি রে, আমাদের ছবি তুলল না তো! ব্রোঞ্জ উইংড্ জাকানাটা লম্বা লম্বা পা ফেলে পার হয় জলের বুকে ভাসতে থাকা কচুরিপানার দাম। অনেকটা দূরে প্রায় পাড় ঘেঁষে ওপেন বিল্ড স্টর্কটা খাবার খুঁজে ফিরছে। আর স্নাইপটা কেমন চোখ গোল করে ঠোঁট বাগিয়ে তাকিয়ে আছে দ্যাখো...। ফেজেন্ট টেইলড্ জাকানাটা যেন পুতুল-পুতুল...। নৌকো যখন ঘুরল মায়াবী চোখের প্র্যাটিনকোলটাকে কী ভালই যে লাগছিল...।

ল্যাপউইংটার দুষ্টুমি দেখতে দেখতে নৌকা যখন ঘাটে ফিরল, তখন মনে হল খিদে পেয়েছে। বেলা আড়াইটে বাজে তো...। দুপুরের খাবার শেষে একটু বিশ্রাম নিয়ে এবার গাড়িতে চেপে বসি। কাঠিয়াবাবার আশ্রম, কপিলমুনির আশ্রম ঘুরে পৌঁছই নতুন গ্রামে। সংগ্রহ করি সেখানকার কাঠের প্যাঁচা। গ্রামের ঘরগুলোতে ঘুরে ফিরে দেখি সেখানকার মা-বোনেদের হাতের কাজ। প্রত্যেকেই যেন দক্ষ শিল্পী!

হাতে একটু বেশি সময় থাকলে এখান থেকেই ঘুরে যেতে পারেন নবদ্বীপ, কৃষ্ণনগর আর মায়াপুর। আর মন যদি তাতে সায় না দেয়, কাটুক না আরও একটা দিন পাখিদের সঙ্গে।

ফেরার পথে কালনার ১০৮ শিবমন্দির আর হংসেশ্বরী মন্দির দেখে মাখা সন্দেশের প্যাকেট নিয়ে যখন গাড়ির সিটে গা এলিয়েছেন, চোখ বুজে,...তখনও মনের পথ বেয়ে ব্ল্যাকউইংড্ স্টেল্টের ডানা মেলার ছবিটা আপনার হৃদয় ছুঁয়ে যাবে চুপি...চুপি...।

কীভাবে যাবেন: হাওড়া/শিয়ালদহ থেকে কাটোয়া লাইনের ট্রেনে পূর্বস্থলী স্টেশন। সেখান থেকে চুপি কাষ্টশালি পাখিরালয়ে, টোটোতে। অথবা কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়িতে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে সরস্বতী ব্রিজ পার করে কালনা হয়ে সমুদ্রগড়ের পর পূর্বস্থলী স্টেশন, সেখান থেকে কাষ্টশালি বাজার...তারপর পাখিরালয়।

কখন যাবেন: অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি ভাল সময়।

কোথায় থাকবেন: চুপি কাষ্টশালি পাখিরালয়।

বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ: চুপি কাষ্টশালি পাখিরালয় (পূর্বস্থলী), ফোন: ৯০৭৩৫৬৫৭২৩ (সোম-শনি: সকাল ১১টা থেকে সন্ধে ৬টা), ইমেল: booking@purbasthali.com, ওয়েবসাইট: www.purbasthali.com

ছবি সৌজন্য: লেখক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE