Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সহসা সবুজের সভায়

দেবভূমি। হিমাচল সম্পর্কে শুনেছিলাম। খানিক দ্বিধা ছিল। পৌঁছে দেখলাম, অস্বীকার করা যায় না। এমন নিপুণ ভাবে সাজানো প্রকৃতি যে চোখ ফেরানো মুশকিল। দেখে এলেন কুলটির বাসিন্দা বুদ্ধজ্যোতি চট্টোপাধ্যায়  দেবভূমি। হিমাচল সম্পর্কে শুনেছিলাম। খানিক দ্বিধা ছিল। পৌঁছে দেখলাম, অস্বীকার করা যায় না। এমন নিপুণ ভাবে সাজানো প্রকৃতি যে চোখ ফেরানো মুশকিল। দেখে এলেন কুলটির বাসিন্দা বুদ্ধজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০১৮ ১১:২৪
Share: Save:

কী ভাবে যাবেন

• আপনি কোথায় যাবেন তার উপরে নির্ভর করে। অমৃতসর থেকে টানা গাড়িতে যাওয়া যায়। সঙ্গে গাড়ি রাখাও যায়। ধাপে ধাপে গাড়ি ভাড়াও নেওয়া যায়। যেখানে থাকবেন সেখানে থেকেই আশপাশ ঘুরে দেখার গাড়ি পেয়ে যাবেন।

কোথায় থাকবেন

• খাজিয়ারে থাকার জায়গা কম। ডালহৌসিতে বেশ কিছু থাকার জায়গা রয়েছে। তবে আগে থেকে বুক করে যাওয়া ভাল। থাকা, খাওয়া ও ঘোরা নিয়ে আমাদের তিন জনের খরচ হয়েছিল প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা। বিমানের বদলে ট্রেনে গেলে খরচ কম হবে। তবে সে ক্ষেত্রে যাতায়াতে সময় লাগবে। তবে আপনি কত দিন থাকবেন, কোথায় কোথায় ঘুরবেন, তার উপরে খরচ নির্ভর করে।

কী দেখবেন

• একটি শব্দে বললে প্রকৃতি। যেন সে সৌন্দর্যের ভাণ্ডার উপুড় করে দিয়েছে। ট্রেক করার আদর্শ জায়গা বললে অত্যুক্তি হবে না।

মখমলের মতো সবুজ একটি উপত্যকা। ধাপে ধাপে সবুজ নীচে নেমে গিয়েছে। সেই সবুজের কেন্দ্রে অল্প জল জমে রয়েছে। চারিদিক ঘিরে রেখেছে দেবদারুর সারি। এমন ভাবে গাছগুলি রয়েছে যে, মনে হয় কেউ বুঝি বনসৃজন করেছেন। পাহাড়ের ধাপে ধাপে গাছের সারি উঠে গিয়েছে। আর সবার উপরে রয়েছে নীল আকাশ। হালকা মেঘ তার উপরে অস্বচ্ছ একটা আস্তরণ টেনে রেখেছে। আস্তরণটি মে মাসের রোদকে যেমন মায়াময় করে তুলছে তেমনই চোখের আড়ালে রাখছে তুষারশুভ্র শৃঙ্গগুলিকে। মাসটা মে না হয়ে ডিসেম্বর বা জানুয়ারি হলে এই দেবদারুর সারি বরফে ঢেকে থাকত।

আছি খাজিয়ারে। হিমাচলের কোলে এই উপত্যকাটিকে অনেকেই ‘মিনি সুইৎজ়ারল্যান্ড’ বলে ডাকেন। খুব বেশি নয়, এখান থেকে সুইৎজ়ারল্যান্ডের দূরত্ব মাত্র ৬১৯৪ কিলোমিটার! খাজিয়ারে আসতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। ব্যস্ত চাকুরে জীবন, ততোধিক ব্যস্ত সন্তানের স্কুল-জীবনে বেড়ানোর মূল অবকাশ মেলে স্কুলের তিনটি ছুটির সময়ে। এর মধ্যে গ্রীষ্মের ছুটি একটু দীর্ঘ। বাংলার চড় চ়ড় করে বাড়তে থাকা গরম থেকে একটু পরিত্রাণ পেতে হিমাচলকে বেছে নিতে খুব একটা সময় লাগেনি। জায়গা বাছা সহজ। পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিকল্পনা করা কঠিন। কিন্তু পায়ের তলায় যখন সর্ষে তখন মোদের থামায় কে?

মূলত খাজিয়ার আর ম্যাকলয়েডগঞ্জকে কেন্দ্র করে আমাদের এ বারের হিমাচল দর্শন। ঠিক হল অমৃতসর ছুঁয়ে টানা গাড়িতে যাওয়া হবে। অণ্ডাল থেকেই বিমান ধরা যায়। তবে আমরা গেলাম কলকাতা হয়ে। কলকাতার মাটি ছেড়ে বিমান যখন সুনীল আকাশ ছুঁলো, ভ্রমণের শুরুটা ঠিক তখনই। যাত্রাপথের আনন্দগান উপভোগ করতে করতে দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছলাম। বিকেলে সেখান থেকে ট্রেনে অমৃতসর। অমৃতসরে নেমে বুঝতে পারলাম, গরমের পাল্লায় বাংলাকে দশ গোল দিতে পারে এই শহর। মধ্যরাতেও গরম হাওয়ায় ভেতো বাঙালির হাঁসফাঁস অবস্থা।

পরের দিন সকালেই আমাদের হোটেলে পবন কুমার হাজির হলেন। তিনি এ যাত্রায় আমাদের সারথি। অমৃতসরে স্বর্ণমন্দির আর জালিয়ানওয়ালা বাগে ঢুঁ মেরে সোজা চলে যাব খাজিয়ার। পবনবাবু আমাদের সোজা স্বর্ণমন্দিরে নিয়ে গেলেন। পার্কিং থেকে কয়েক’শো মিটারের হাঁটা পথে শিখদের ধর্মের মূল কেন্দ্র স্বর্ণমন্দির। মন্দিরের বাইরে রয়েছে পা ধোয়ার এবং জুতো রাখার বন্দোবস্ত। সঙ্গে মাথা ঢাকা দেওয়ার কিছু না থাকলে এখানেই বিনামূল্যে পাওয়া যাবে ফেট্টি। মন্দির চত্বরের মাঝেই অমৃত সরোবর। আর তার কেন্দ্রে স্বর্ণমন্দির। ১৫৭৭ খ্রিস্টাব্দে শিখ গুরু অর্জুন দেব এই মন্দির তৈরি করেন। এর আসল নাম হরমন্দির সাহিব। গুরু অর্জুন গুরু গ্রন্থসাহিব এই মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। মহারাজা রঞ্জিত সিংহ এই মন্দিরের উপরিভাগ ৭৫০ কিলোগ্রাম সোনা দিয়ে মুড়ে দেন। গুরু গ্রন্থসাহিব দর্শনের লাইনে গিয়ে দাঁড়ালাম। গ্রন্থসাহিব দেখে হালুয়ার প্রসাদ নিয়ে বেরিয়ে এলাম। স্বর্ণমন্দির সব ধর্মের মানুষের মিলনক্ষেত্র। লঙ্গর সবার জন্য খোলা। বিনামূল্যে খাওয়ার ব্যবস্থা। সময় কম। তাই লঙ্গরে যাওয়া হয়নি।

স্বর্ণমন্দির থেকে কয়েক’শো মিটার দূরেই জালিয়ানওয়ালা বাগ। টাইম-মেশিনে চলে গেলাম ১৯১৯-এর ১৩ এপ্রিল। বৈশাখী উৎসবের দিন। জেনারেল ডায়ারের নির্দেশ না মেনে ব্রিটিশবিরোধী জমায়েত হয়েছে। ভিড়ে ঠাসা বাগ। সেনা নিয়ে হাজির হলেন জেনারেল ডায়ার। পাঁচটি প্রবেশপথের একটি ট্যাঙ্ক এনে আটকে দেওয়া হল। তার পরে সমবেত জনতার দিকে গুলি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হল। সব মিলিয়ে গুলি চলেছিল ১৬০০ রাউন্ড। আহত ১৫০০। আর নিহতের সংখ্যা হাজার ছাড়িয়েছিল। প্রতিবাদে গর্জে উঠল দেশ। ‘নাইটহুড’ ত্যাগ করলেন রবীন্দ্রনাথ। আজও পাঁচিলের গায়ে সে দিনের গুলির দাগ রয়ে গিয়েছে। রয়েছে সেই কুয়োও, যেখানে প্রাণ বাঁচাতে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাগটিকে এমন ভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে যে ঢুকলেই সেই নারকীয় হত্যাকাণ্ডের দিনটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

আকাশ মেঘে ঢাকা। বেশ গরমও লাগছিল। বাগ দেখে বেড়িয়ে তাই সোজা গাড়িতে। গাড়ি সোজা ছুটল খাজিয়ারের দিকে। পঞ্জাবের বুকের ভিতর দিয়ে রাস্তা চলেছে। দু’পাশে খেত। সদ্য ফসল উঠেছে। নতুন চাষের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। জোরে হাওয়া বইছে। সঙ্গে বালি। পথেই দুপুরের খাওয়া সেরে নিলাম। পাঠানকোটের পরেই শুরু হয়ে যায় পাহাড়ের আনাগোনা। যত উপরে উঠতে থাকি, ততই বাতাস ঠান্ডা হতে থাকে। সেই হালকা ঠান্ডার আমেজ মাখতে মাখতে প্রায় চার ঘণ্টা সফর শেষে পৌঁছলাম ডালহৌসি।

পাহাড়ের কোলে ছোট্ট শহর ডালহৌসি সমুদ্রতল থেকে প্রায় ২০০০ মিটার উঁচুতে। গাঁধী চক এবং সুভাষ চক— ডালহৌসির প্রধান দু’টি মোড়। গাঁধী চকেই রয়েছে ব্রিটিশ আমলের সেন্ট জন‌্স গির্জা। ভিতরে আলোআঁধারি পরিবেশ। বেশ নির্জন। বাইরে যে ব্যস্ত চক রয়েছে তা বোঝাই যায় না। শেষ দুপুরের ম্লান আলো গির্জাটিকে মায়াবি করে তুলেছিল। জোরে হাওয়া বইছিল। তার মধ্যে মেয়ে বায়না ধরল, ঘোড়ায় চড়বে। তা মেটাতে হল। মে মাসেও বেশ ঠান্ডা লাগছিল। চকেই একটি স্ট্যান্ডে ধাপে ধাপে বসার জায়গা। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে বরফে ঢাকা পীরপঞ্জালের শোভা দেখা যায়। আজ মেঘের চাদর সরার নামই করছে না। খাজিয়ার, ডালহৌসি থেকে মাত্র ৪০ মিনিট দূরে। পথেই কয়েকটি স্কুল পড়ে। এর মধ্যে ‘ডালহৌসি পাবলিক স্কুল’ দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। বিশাল চত্বর জুড়ে স্কুলটি। সুন্দর সাজানো। রাস্তা দিয়ে সারি বেঁধে পডুয়ারা হেঁটে যাচ্ছে। স্কুলের পাশের রাস্তাও সাজানো। অনেকেই এই স্কুলকে ‘তারে জমিন পর’-এর স্কুল বলে ভুল করেন। ‘তারে জমিন পর’-এর স্কুলটি আসলে মহারাষ্ট্রের পঞ্চগনিতে রয়েছে।

পাক খেতে খেতে রাস্তা এগিয়ে চলল এবং হঠাৎই পাহাড়ি পথের পাশে দেখা মিলল সবুজ উপত্যকার। দেখেই প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। মেয়ের তো আর তর সয় না! এত ক্ষণ গাড়িতে বসে থেকেছে। বাঁধন ছেঁড়ার আনন্দে দৌড় শুরু করল। মাঝে সমতল। আর চারপাশে দেবদারুর জঙ্গল। তার যে এমন সৌন্দর্য হতে পারে, না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। আকাশ মেঘে ভরা। সূর্যের দেখা মিলছে না। তবে চারপাশে এক মায়াবি আবহ। মখমলের মতো সবুজ মাঠের মাঝে ছোট্ট এক টুকরো জলাশয়। জলাশয় না বলে ডোবা বলাই ভাল। কয়েকটি বোটও রাখা আছে। ধাপে ধাপে সবুজের আস্তরণটি সেই ডোবার দিকে নেমে গিয়েছে। ছবিতে দেখলে সত্যই সুইৎজ়ারল্যান্ড মনে হতে পারে।

খাজিয়ারের সৌন্দর্য মুগ্ধ করেছে খোদ সুইস গর্ভনমেন্টকেও। তারাই একে ‘সুৎইজ়ারল্যান্ড অব ইন্ডিয়া’ নামে আখ্যায়িত করেছে। সেই উপলক্ষে এখানে একটি স্মারক ফলকও বসানো রয়েছে। উপত্যকার পাশেই আমাদের থাকার ব্যবস্থা ছিল। ঘরে মালপত্র রেখে খোলা মাঠে নেমে এলাম। চোখের সামনে এতটা সবুজ! সহসা সবুজের এই সমারোহ যাত্রাপথের ক্লান্তি মুহূর্তে দূর করে দেয়। মাঠটির পাশে বসার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু নরম ঘাস ছেড়ে কে-ই বা সেখানে বসবে! আর বসবই বা কেন! শুয়েই পড়লাম। এত আরাম যে চোখ বুজে এল। চারপাশে অনেকে হেঁটে বেড়াচ্ছেন। দূরে বেলুনওয়ালা। মাঝে কিছু কাঠামো সবুজের মাঝে যেন ছন্দপতন।

খাজিয়ারে সন্ধ্যা নামতে নামতে সাতটা বেজে যায়। মাঠেই বসে রইলাম। আকাশে এক ফালি চাঁদ উঠল। আকাশ ভরে তারারা জাগল। শুক্লপক্ষের হালকা জ্যোৎস্না চরাচর জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। উঠে এলাম। রাতে না কি এখানে খাবারের খোঁজে ভালুক হানা দেয়। খাজিয়ারের চার পাশে রয়েছে ছোট ছোট ট্রেকিংয়ের রাস্তা। ট্রেকগুলিও খুব একটা কষ্টকর নয়। ইচ্ছে থাকলে আর শরীর দিলে খাজিয়ার থেকে ট্রেক করে দইকুণ্ড চলে যেতে পারেন। সাড়ে তিন কিলোমিটারের পথ। রাস্তাটিও অতি মনোরম। আকাশ পরিষ্কার থাকলে পথে পীরপঞ্জাল ও ধৌলাধারের দেখা মিলতে পারে।

খাজিয়ারে রয়েছে বিখ্যাত খাজি নাগের মন্দির। দ্বাদশ শতাব্দীর মন্দির। তা দেখে পরের দিন রওনা দিলাম কালাটপ অভয়ারণ্যের উদ্দেশে। খাজিয়ার থেকে কালাটপ মাত্র তিরিশ মিনিটের রাস্তা। দেবদারু গাছের ঘন জঙ্গল। এক সময়ে চাম্বা রাজের শিকারের ক্ষেত্র। রবি নদীর ধারে এই বনাঞ্চলকে ১৯৫৮ সালে অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ভালুক, চিতাবাঘ, শিয়াল, লেঙ্গুর আর বেশ কয়েক ধরনের পাখির বাস এই অরণ্যে। নির্জনতা বলতে ঠিক বোঝায় তা এখানে এলে অনুভব করা যায়, এক সহকর্মী বলেছিলেন। কালাটপে পৌঁছে দেখলাম নির্জনতা এখন স্বপ্নমাত্র। বেশ কয়েকটি খাবার দোকান গজিয়েছে। পাশাপাশি ‘অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস’ আর নিজস্বী প্রেমীদের ঠেলায় সেই পরিচিত কলরব। এই কলরবে কোনও প্রাণীর দেখা পাওয়াই দুষ্কর। একটু জিরিয়ে বেশিক্ষণ না থেমে এগিয়ে চললাম।

পরের গন্তব্য চামেরা হ্রদ। প্রকৃতি নয়, মানুষের তৈরি। রবি নদীতে বাঁধ দেওয়ায় তৈরি হয়েছে। কালাটপ থেকে প্রায় ৪২ কিলোমিটার দূরে। গাড়িতে দেড় ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। যখন পৌঁছলাম বেশ গরম লাগছিল। বোটে এই লেকে ঘোরা যায়। টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে হয়। কতক্ষণ ঘুরবেন তার উপরে টিকিটের দাম নির্ভর করে। বোটে উঠতে গেলে লাইফ জ্যাকেট পরতেই হবে। প্রায় ৭৫০ মিটার গভীর এই হ্রদ। ছোট ছোট বোট ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রাকৃতিক নয় বলে এখনও তেমন জীববৈচিত্র্য তৈরি হয়নি। চারপাশে পাহাড়। আগে এখানে গ্রাম ছিল। সেই গ্রাম এখন জলের তলায়। গ্রামের বাসিন্দারা চারাপাশের পাহাড়ে নতুন বাসা বেঁধেছেন। বোটের চারপাশের জলের ছলাৎছল যেন সেই গ্রামের ফেলা আসা জীবনের গল্প শোনায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE