Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Sikkim

হি পাতাল-ইয়াংসুম-পেলিং-বার্সে-ওখরে

ঘুরে আসুন পশ্চিম সিকিমের নতুন-পুরনো বেশ কয়েকটি স্পট। পাহাড় আর জঙ্গলের আড়ালে খুঁজে নিন নির্জনতা আর পাখির ডাক। আজ পঞ্চম পর্ব।নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে হি-পাতালের দূরত্ব ১৫১ কিলোমিটার। রিজার্ভ করলে পুরো গাড়ির ভাড়া পড়বে ৪০০০-৪৫০০ টাকা। কম খরচে আসতে চাইলে শিলিগুড়ি এসএনটি স্ট্যান্ড থেকে ছাড়া জোরথাং-এর শেয়ার জিপ ধরে জোরথাং পৌঁছন।

পেলিং থেকে দেখা কাঞ্চনজঙ্ঘা।

পেলিং থেকে দেখা কাঞ্চনজঙ্ঘা।

সন্দীপন মজুমদার
শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০১৭ ১৭:০৪
Share: Save:

হি-পাতাল:

সিকিমের নতুন যে পর্যটনকেন্দ্রগুলি এর মধ্যেই পর্যটকদের কাছে ব্যাপক ভাবে সাড়া ফেলেছে, তার মধ্যে এই হি-পাতাল অন্যতম। ৮৪০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত হি-পাতালে পৌঁছে প্রকৃতির যে অনন্য শোভা চোখের সামনে ভেসে উঠবে, তা যেমন অতুলনীয়, তেমনই শান্তিদায়ক। সবুজ গাছপালার নিবিড়তায় প্রাণভরে অক্সিজেন নিন, আয়ু হয়তো কিঞ্চিৎ বেড়েই যাবে। গাড়ি চলাচল বা জনসমাগম একেবারেই কম বলে কত যে বিচিত্র জাতের ও রঙের পাখি ঠিক আপনার চোখের সামনের গাছের ডালে এসে লেজ নাড়বে, আপনার সঙ্গে নিজস্ব সুরেলা ভাষায় কথা কইবে, তা বোধহয় গুণে শেষ করা যাবে না। হি-বার্মিওক-এর অবস্থান অনেকটা নীচে, আর সেই পাহাড়েরই প্রায় শীর্ষদেশে এই জায়গার অবস্থান হওয়ায়, এখান থেকে ‘স্লিপিং বুদ্ধ’ (কাঞ্চনজঙ্ঘা, কাবরু, রাথং, পান্ডিম-সহ বিরাট তুষারশৃঙ্গশ্রেণির নামকরণ হয়েছে এ ভাবেই, ঠিক যেন বুদ্ধ ঘুমিয়ে রয়েছেন) খুব ভাল ভাবে দেখা যায়। শান্ত, নির্জন পরিবেশে পাখির ডাক ছাড়া আর বিশেষ কোনও শব্দ কানে যাবে না। শহুরে পরিবেশে ব্যস্ত, ক্লান্ত মানুষজন শুধু অলস ও সুখকর অবকাশযাপনের জন্যই এখানে ৩-৪ দিন অক্লেশে কাটিয়ে দিতে পারেন।

হাতে সময় থাকলে পায়ে হেঁটে দেখে নিন গ্রামের মনাস্ট্রি (চড়াইপথ বেয়ে বেশ খানিকটা উপরে উঠতে হয়), ঘন জঙ্গলের দুর্গম পথে রোমাঞ্চকর পদচারণায় বার্সে রডোডেনড্রন স্যাঙ্কচুয়ারির ‘রেড পন্ডা গেট’, পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্নার জলধারাকে সঙ্গী করে উৎরাই পথে নির্মীয়মাণ বিশাল সিরিজঙ্ঘা মূর্তি ও ছায়াতাল। আর থাকার অবকাশ যদি আরও একটু বেশি হয়, তবে গাড়ি ভাড়া করে ঘুরে নিতে পারেন হি-খোলা ওয়াটার পার্ক, সিংশোর ব্রিজ, উত্তরে গ্রাম, ডেনটাম চিজ ফ্যাক্টরি ইত্যাদি স্থানগুলি।

যাত্রাপথ:

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে হি-পাতালের দূরত্ব ১৫১ কিলোমিটার। রিজার্ভ করলে পুরো গাড়ির ভাড়া পড়বে ৪০০০-৪৫০০ টাকা। কম খরচে আসতে চাইলে শিলিগুড়ি এসএনটি স্ট্যান্ড থেকে ছাড়া জোরথাং-এর শেয়ার জিপ ধরে জোরথাং পৌঁছন। ভাড়া মাথাপিছু ২০০ টাকা। জোরথাং স্ট্যান্ড থেকে হি-পাতালের শেয়ার জিপ কিছু ছাড়ে বেলা ১২টা থেকে ২টার মধ্যে, ভাড়া মাথাপিছু ১৫০ টাকা। গ্যাংটক থেকে হি-পাতালের দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার। রিজার্ভ করলে পুরো গাড়ি ভাড়া পড়বে ৩৫০০-৪০০০ টাকা। হি-পাতাল থেকে পেলিং-এর দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে পৌঁছনোর ভাড়া পড়বে ১৫০০ টাকা। হি-পাতাল থেকে সাইট-সিয়িং এর জন্য গাড়ি ভাড়া (পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে) পড়বে ১৫০০-২০০০ টাকা।

হি-পাতালে তুষারশৃঙ্গে রঙের খেলা।

রাত্রিবাস:

১) হি-পাতালে থাকার জন্য আছে ‘নেচার হিলটপ রিসর্ট’। দ্বিশয্যাযুক্ত ডিলাক্স কটেজের ভাড়া ৪০০০ টাকা, দ্বিশয্যাযুক্ত ঘরের ভাড়া ২৫০০ টাকা

উল্লেখ্যযোগ্য আকর্ষণ হিসেবে এই অঞ্চলে সর্বপ্রথম গাছবাড়িতে (লগহাউস) থাকা সম্প্রতি চালু হয়েছে এখানে। গাছবাড়িতে থাকার রোমাঞ্চ তো আছেই, সেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার অভিজ্ঞতা হয়তো আরও মধুর হবে। দ্বিশয্যাযুক্ত গাছবাড়ির ভাড়া দৈনিক ৪০০০ টাকা।

যোগাযোগ: ৯৯৩২৫-১১৫২৬, ৯৫৬৪৬-১৬৯৩৫।

২) সামান্য নীচে আর একটি থাকার জায়গা ‘লেকভিউ রেসিডেন্সি।’ এখান থেকে ছায়াতাল লেক ও তুষারশৃঙ্গ সবই চোখে পড়বে। দ্বিশয্যার ভাড়া: ১৫০০-১৮০০ টাকা, ত্রিশয্যা ঘর: ২৫০০ টাকা।

যোগাযোগ: ৭৭৯৭০-০৭০০০. ৯০৯৩২-০০৬০১

ইয়াংসুম:

সিকিমের পর্যটন মানচিত্রে আর এক নবতম সংযোজন ইয়াংসুম। সম্পূর্ণ অচেনা, পর্যটকসমাগম বর্জিত গ্রামটিতে নির্ভেজাল প্রকৃতির নির্মল ও শান্ত পরিবেশ, হাসিমাখা মুখে একবুক আন্তরিকতা নিয়ে উপস্থিত গ্রামের সাধাসিধে মানুষগুলো আকর্ষণ করবে আপনাকে। ৪৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পাহাড়ি গ্রামটি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা-সহ অন্যান্য তুষারশৃঙ্গের সুন্দর দৃশ্য তো আছেই, সঙ্গে মুগ্ধ করবে নয়নাভিরাম সবুজ উপত্যকা, রংবেরঙের পাখি ও প্রজাপতি, রকমারি ফুল ও অর্কিড। এলাচ, আদা, মটর, কমলা, ডলেখোরসানি (ঝাললঙ্কা) ইত্যাদির পর্যাপ্ত চাষ হয় সারা গ্রাম জুড়েই। ইয়াংসুম থেকে উৎরাই রাস্তা সোজা নেমে গেছে লেগশিপ পর্যন্ত (দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার)।

নিশ্চিন্তে, মনের আনন্দে ঘুরে বেড়ান গ্রামের পথেঘাটে। গ্রামের মানুষদের আতিথেয়তা চমৎকৃত করবে। অল্প হাঁটায় পৌঁছে যান ‘মানেদাঁড়া স্মৃতি বন’-এ। এপ্রিল-মে মাসে এখানে রডোডেনড্রনের বনে যেন আগুন লেগে যায়। চার দিকে শুধু লালি গুরাসের মনোমুগ্ধকর রুপ। এ ছাড়া অবশ্য বেগুনি, নীল ও আরও নানা রঙের ফুলের শোভা মিলবে সারা বছরই। চেরিগাছও রয়েছে এই বনে। বহু পুরনো এক চোর্তেন–এর পাশেই দেখতে পাবেন ‘ওম মণিপদ্মে হুম’ লেখা বহু শিলা। ভিউ পয়েন্টে বসে অনেক দূর পর্যন্ত চোখ চলে যাবে। এক দিকে পাহাড়ের গায়ে গেজিং-এর জনপদ, পাহাড়ের মাথায় পেমিয়াংশি গুম্ফা, অন্য দিকে বার্মিওক, আর অনেকটা নীচে লেগশিপ— চোখে পড়বে সবই। গ্রামের কোনও কোনও ঘরে খাঁটি মধু পাওয়া যায়, ইচ্ছে করলে সংগ্রহ করতে পারেন।

হাতে সময় বেশি থাকলে, গাড়ি ভাড়া করে দেখে নিতে পারেন রিনচেনপং মনাস্ট্রি, হেরিটেজ হাউস, পয়জন লেক, পুরনো ডাকবাংলো, রবীন্দ্র-স্মৃতিবন, ফার্ম-হাউস ইত্যাদি কাছেপিঠের দর্শনীয় স্থানগুলি।

আরও পড়ুন, লাচুং-ইয়ুমথাং-লাচেন-গুরুদোংমার

যাত্রাপথ:

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে ইয়াংসুমের দূরত্ব ১৩০ কিলোমিটার। পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ৩৫০০-৪০০০ টাকা। শিলিগুড়ি এসএনটি থেকে শেয়ার জিপে (যদিও সংখ্যায় কম) আসতে পারেন রিনচেনপং। মাথাপিছু ভাড়া পড়বে ২৫০-৩০০ টাকা। রিনচেনপং বাজার থেকে উৎরাই পথে রাস্তা আলাদা হচ্ছে ইয়াংসুমের। রিনচেনপং বাজার থেকে মাত্র ২ কিলোমিটার দূরেই অবস্থিত ইয়াংসুম। পুরো গাড়ি নিলে ভাড়া পড়বে ২০০ টাকার মতো। এ ছাড়া শিলিগুড়ি থেকে শেয়ার জিপে জোরথাং এসে, সেখান থেকেও গাড়ি ভাড়া করে আসা যায় ইয়াংসুম।

রাত্রিবাস:

‘মায়েল প্যারাডাইস হোমস্টে’, দ্বিশয্যাঘরে খাওয়া-থাকা নিয়ে প্রতি দিনের মাথাপিছু খরচ ৮০০-১০০০ টাকা।

যোগাযোগ: ৯৫৯৩৭-৮৩৩৩৭, ৮৬৭০৬-২৮৯৯৯

বার্সে রডোডেনড্রন স্যাঙ্কচুয়ারি।

পেলিং:

কাঞ্চনজঙ্ঘার নৈকট্য পেলিং-এর জনপ্রিয়তার সবচেয়ে বড় কারণ। ৬৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত পেলিং-এ তাই সারা বছরই পর্যটকের ভিড় লেগে থাকে। আপার, মিডল, লোয়ার— এই তিনটি স্তরে বিন্যস্ত পেলিং। হোটেল, রেস্তোরাঁর সংখ্যাও যথেষ্ট। ঘরের জানালা খুলে বা ব্যালকনি থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রাজকীয় রূপ দেখে মুগ্ধ হবেনই। আপার পেলিং-এর হেলিপ্যাড গ্রাউন্ড থেকে ঘণ্টাখানেকের হাঁটাপথে চলে যেতে পারেন সাঙ্গাচোলিং মনাস্ট্রি। ৯০০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই সাঙ্গাচোলিং হল সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীন মনাস্ট্রি । এখান থেকেও তুষারশৃঙ্গ ও নীচের সবুজ উপত্যকার এক দারুণ ছবি দেখতে পাবেন।

হাতে সময় নিয়ে গাড়ি ভাড়া করে এ বার বেরিয়ে পড়ুন সাইট-সিয়িং করার জন্য। বিখ্যাত পেমিয়াংশি মনাস্ট্রি (৩০০ বছরের প্রাচীন গুম্ফা), রাবডানৎসে (সিকিমের দ্বিতীয় প্রাচীন রাজধানীর ধ্বংসাবশেষ), কাঞ্চনজঙ্ঘা জলপ্রপাত, খেচিপেরি লেক, রিম্বি ও ছাঙ্গে ঝর্না ইত্যাদি দেখে নিন একযাত্রায়। হাতে আর একটা দিন সময় থাকলে, গাড়ি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন ইয়াকসাম থেকে। পেলিং থেকে দূরত্ব ৩২ কিলোমিটার। সিকিমের প্রথম চোগিয়াল রাজার অভিষেক হয়েছিল যেখানে, সেই পাথরের সিংহাসনটি এখনও রাখা আছে এক বিরাট গাছের তালায়। নির্জন পরিবেশে অবস্থিত কাথথোগ লেক ও দুবদি মনাস্ট্রি দেখে নিতে ভুলবেন না ইয়াকসামে এসে। এই ইয়াকসাম থেকেই শুরু হয় সিকিমের জনপ্রিয় ট্রেকিংগুলি। দেশি-বিদেশি ট্রেকাররা এই পথেই পদব্রজে পৌঁছে যান জোংরি হয়ে গোচালা ও সমিতি লেক। কাঞ্চনজঙ্ঘা ও পান্ডিম শৃঙ্গকে সেখানে দেখতে পাবেন যেন ঢিলছোড়া দূরত্বে। পেলিং থেকে ইয়াকসাম যাওয়ার পথে তাশিডিং-এর কাছে ফ্যামরং জলপ্রপাতটি অবশ্যই দেখে নেবেন। অনেকটা উচ্চতা থেকে বিশাল জলরাশির ঝাঁপিয়ে পড়ার দৃশ্যটি বড়ই সুন্দর।

যাত্রাপথ:

নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে পেলিং-এর দূরত্ব ১৪০ কিলোমিটার। পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ৩৫০০-৪০০০ টাকা। শিলিগুড়ি এসএনটি বাসস্ট্যান্ড থেকে শেয়ার জিপে জোরথাং (মাথাপিছু ভাড়া ২০০ টাকা), সেখান থেকে শেয়ার জিপে গেজিং (১০০-১৫০ টাকা), গেজিং থেকে আবার অন্য শেয়ার জিপে পৌঁছন পেলিং (ভাড়া মাথাপিছু ৫০ টাকা)। শিলিগুড়ি এসএনটি বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসও ছাড়ে পেলিং-এর, সকাল সাড়ে ১০টায়। ভাড়া মাথাপিছু ১৮০ টাকা। শিলিগুড়ি এসএনটি থেকে অল্প কিছু গেজিং-এর শেয়ার জিপও ছাড়ে, ভাড়া মাথাপিছু ৩০০ টাকা।

রাত্রিবাস:

ক) হোটেল ‘পাইন ভ্যালি’ (আপার পেলিং), দ্বিশয্যাঘরের ভাড়া ১৫০০-২২০০ টাকা, ত্রিশয্যাঘর ২৮০০ টাকা (প্রতিদিন)।

যোগাযোগ: ৯৯০৩৩-২৫০৪৯, ৭০৬৩৫-৯২৭০৭

খ) ‘ফ্লোরেট রিসর্ট’ (আপার পেলিং), দ্বিশয্যাঘরের ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকা (ডিলাক্স), সুপার ডিলাক্স: ২৪০০ টাকা, রয়্যাল ডিলাক্স ৩২০০ টাকা।

যোগাযোগ: ৯৬৭৪৯-২২০৩০, ৯৮০০০-০৬২৮১

গ) ‘হোটেল তাশি গিয়ালৎসেন’, দ্বিশয্যাঘরের ভাড়া ১৫০০-১৮০০ টাকা।

যোগাযোগ: ৯৮৩০০-৫৮৯২৮

ঘ) ‘নামসালিং রেসিডেন্সি’, দ্বিশয্যা ঘর ১২০০-১৫০০ টাকা।

যোগাযোগ: ৯৭৩০০-৭৭৩৫৮, ৯৬০৯৮-৫৩৮১৮

পেলিং থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার রূপ।

বার্সে:

বার্সে রডোডেনড্রন স্যাঙ্কচুয়ারির গভীরে অবস্থিত বার্সে এমনই এক জায়গা, যেখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা, পান্ডিম, কাবরু-সহ বহু দূর পর্যন্ত বিস্তৃত তুষারশৃঙ্গরাজির এক অনবদ্য দৃশ্য দেখা যায়। উচ্চতা ১০,০০০ ফুট, চারপাশ ঘন জঙ্গলে ঢাকা পাহাড়ি ঘেরাটোপ। নিস্তব্ধ পরিবেশে নানান রঙের পাখি দেখতে পাবেন দু’চোখ ভরে। রেড পন্ডা, ব্ল্যাক বিয়ার, বন্য শুয়োর, হরিণ ও চিতাবাঘের চারণভূমি হল এই স্যাঙ্কচুয়ারি অঞ্চল। হিলে অবধি গাড়ি চলা রাস্তা। সেখান থেকে একেবারেই সহজ ৪.৫ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে যেতে সময় লাগবে দেড় থেকে দু’ঘণ্টা। ঘন জঙ্গলের মধ্য দিয়েই পায়ে চলা এই পথ চলে গেছে। মার্চ (মাঝামাঝি) থেকে এপ্রিলে এই পথ ভরে থাকে রডোডেনড্রনের রঙে। ১৭ প্রজাতির রডোডেনড্রন ফোটে এই অঞ্চলে।

এ ছাড়াও দুষ্প্রাপ্য ঔষধি, ম্যাগনোলিয়া, অর্কিড ও অন্যান্য নানারকমের ফুল পাওয়া যায় সারা বছরই। বার্সেতে রাত্রিবাস করলে, আর পর দিন হাতে কিছুটা সময় থাকলে, গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ঘণ্টা দেড়েকের হাঁটায় পৌঁছে যান (গাইড আবশ্যক এ পথে) তাল। এখান থেকে স্নো-রেঞ্জ-এর দৃশ্য বাস্তবিকই অতুলনীয়।

যাত্রাপথ:

এনজেপি থেকে হিলের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। জোরথাং, সোমবারিয়া, ওখরে হয়ে পৌঁছতে হবে হিলে। রিজার্ভ করলে হিলে অবধি গাড়িভাড়া পড়বে ৪৫০০-৫০০০ টাকা। এনজেপি থেকে ওখরে (যদি বার্সেতে না থেকে, ওখরেতে রাত্রিবাস করেন) অবধি পুরো গাড়ির ভাড়া পড়বে ৪০০০ টাকা। কম খরচে আসতে চাইলে, শিলিগুড়ি থেকে জোরথাং অবধি শেয়ার জিপে এসে সেখান থেকে ওখরে বা হিলের শেয়ার জিপ ধরুন। হিলে থেকে বার্সে অবধি ৪.৫ কিমি পথ হেঁটেই যেতে হবে।

আরও পড়ুন, রয়েছ নয়নে নয়নে

রাত্রিবাস:

বার্সে-তে থাকার জন্য আছে ‘গুরাস কুঞ্জ।’

তবে একটিই দ্বিশয্যা ঘর (লাগোয়া বাথরুম সমেত) আছে এখানে, যাতে থাকা-খাওয়া নিয়ে মাথাপিছু খরচ ১৫০০ টাকা (অর্থাৎ দু’জন থাকলে মোট খরচ হবে ৩০০০ টাকা)।

ডরমিটরি বা চারশয্যার ঘর (কমন বাথ)-এ থাকা খাওয়া নিয়ে মাথাপিছু খরচ হবে ১০০০ টাকা।

যোগাযোগ: পাসাং দোর্জি শেরপা: ৯৫৯৩৮-৩৪৬২৭, ৮৪৩৬৪-৩৬২৬৭

(মোবাইল ফোনের টাওয়ার পাওয়া কিন্তু যথেষ্ট অসুবিধাজনক বার্সেতে)।

থাকার জায়গার সমস্যার জন্য যদি বার্সেতে একান্তই থাকতে না পারেন, কোনও অসুবিধা নেই। হিলের দশ কিলোমিটার আগে সুন্দর এক পাহাড়ি গ্রাম আছে (ওখরে), তার আরামদায়ক হোমস্টে-র ডালি সাজিয়ে। ওখরে-তে (উচ্চতা ৮২০০ ফুট) ভাল ভাবে রাতটা কাটিয়ে পর দিন ভোরে গাড়ি ভাড়া করে হিলে পৌঁছে, সেখান খেকে হাঁটাপথে বার্সে ঘুরে আবার ফিরে আসুন ওখরে-তে, বা ওখরেতে না থেকে সোজা চলে আসুন সামাটার (জোরথাং-এর কাছে)

হি-পাতালের গ্রাম।

ওখরে-তে থাকার জন্য:

‘বার্সে রেসিডেন্সি’ দ্বিশয্যাঘরে থাকা-খাওয়া নিয়ে মাথাপিছু খরচ ১১০০ টাকা, ডরমিটরি বা টেন্টে থাকা খাওয়া নিয়ে মাথাপিছু খরচ ১০০০ টাকা।

যোগাযোগ: ফিপ রাজ সুব্বা ~ ৯৭৩৩২-৭১১৩৭

‘ম্যাগনোলিয়া হোমস্টে’— দ্বিশয্যাঘরে থাকা-খাওয়া নিয়ে মাথাপিছু খরচ ৮০০ টাকা।

যোগাযোগ: সাঙ্গে শেরপা ~ ৯৬০৯৮-৫৬৪১৪।

কিছু জরুরি তথ্য:

১) সিকিমের যে কোনও জায়গায় হোটেল, হোমস্টে বুকিং, কিংবা যাতায়াতের জন্য গাড়ি বুকিং-এর জন্য সরাসরি সিকিমে যোগাযোগ: নারায়ণ প্রধান ~ ৮৪৩৬৬-৪৯০০১, ৭০৩১৩-০৮৫০৮

২) সিকিমে ঘোরার জন্য যে কোনও জরুরি তথ্যের ব্যাপারে যোগাযোগ: এম কে প্রধান (জয়েন্ট ডিরেক্টর, সিকিম ট্যুরিজম, গ্যাংটক)। মোবাইল: ৯৮৩২০-৬৫৬১৭, ৮১১৬১-০৭০৭১

(লেখক পরিচিতি: ভ্রমণ সংক্রান্ত লেখালেখি বছর কুড়ি। পেশা ভিন্ন হলেও ভ্রমণের টানে গোটা ভারত ঘুরে বেড়ান বছরভর। পছন্দের দিক থেকে পাল্লা ভারী পাহাড়ের। ভ্রমণ ছাড়াও প্যাশন রয়েছে অভিনয়ে। অভিনয় করছেন বড় পর্দা, ছোট পর্দা, মঞ্চ, বেতার— সব মাধ্যমেই।)

(ছবি: লেখক)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE