এনডিএ-র শরিক তালিকায় এ বার অর্ন্তভুক্ত হল কামতাপুর পিপলস পার্টিও (কেপিপি)। গত লোকসভা ভোটেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা এনডিএ-র শরিক হয়। এ বারেও মোর্চার সমর্থনে দার্জিলিঙে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া। কিন্তু, কেপিপিকে প্রাক নির্বাচনী জোটসঙ্গী হিসেবে পাওয়ায় ওই কেন্দ্রের অন্তর্গত শিলিগুড়ি লাগোয়া সমতলেও বিজেপি সকলকে টেক্কা দিতে পেরেছে বলে দলের নেতারা মনে করেন। বিজেপি সূত্রের খবর, সেই কারণেই কেপিপিকে দিল্লির এনডিএ বৈঠকে শরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়।
কেন্দ্রের সদ্য নির্বাচিত এনডিএ সরকারের শরিক হওয়ার স্বীকৃতি পেয়ে উচ্ছ্বসিত কেপিপি নেতৃত্ব। কেপিপির সভাপতি অতুল রায় জানান, দেরিতে আমন্ত্রণ পাওয়ায় মঙ্গলবার সংসদের সেন্ট্রাল হলে তিনি উপস্থিত হতে পারেননি। যদিও সংসদে নরেন্দ্র মোদী-সহ বিজেপির শীর্ষ নেতাদের খাদা পরিয়ে তিনি সংবর্ধনা দেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। এনডিএ শরিকের ‘মর্যাদা’ পাওয়ার পরে, কামতাপুরি ভাষার স্বীকৃতির দাবি আদায় করা সহজ হবে বলে মনে করছেন কেপিপি নেতৃত্ব। দলের সভাপতি অতুল রায় বলেন, “এনডিএ জোটে থাকায় ভাষার স্বীকৃতি-সহ দলের অন্য দাবিদাওয়া দ্রুত পূরণ হবে বলে আশা করছি। এ বিষয়ে এনডিএ নেতাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হবে।”
মোর্চা পৃথক গোর্খাল্যান্ডের কথা বলে থাকে। কেপিপিও আলাদা কামতাপুর রাজ্য গঠনের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছে। সেই কেপিপি-র এনডিএ শরিক হওয়ার বিষয়টি যথেষ্ট ‘গুরুত্ব’ দিয়েই দেখছে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। দলের যুব সংগঠনের প্রদেশ কার্যকরী সভাপতি এবং জলপাইগুড়ি জেলার পর্যবেক্ষকের দায়িত্বে থাকা সৌরভ চক্রবর্তী বলেন, “কেপিপির একটি অংশ লোকসভা ভোটে আমাদেরই সমর্থন করেছিল। তবে অন্য একটি গোষ্ঠী বিজেপিকে সমর্থন করেছে। কেপিপির স্বীকৃতির দাবি নিয়ে আমরা সহানুভূতিশীল। তবে পৃথক রাজ্য গঠনের দাবি বাস্তবোচিত নয়। তা মেনে নেওয়ার প্রশ্নও নেই।”
জন্মলগ্ন থেকেই কেপিপি বাম-বিরোধী বলে পরিচিত। প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা দার্জিলিং জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, “এর মধ্যে নতুন কিছু নেই। বরাবরই ওরা বিজেপি বা তৃণমূলকে সমর্থন করেছে। এ বার দেখা যাক বিজেপি কত ছোট রাজ্য গঠন করে।” প্রদেশ কংগ্রেস নেতা বিশ্বরঞ্জন সরকার বলেন, “এনডিএ একটি মারাত্মক খেলায় নেমেছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এই জোটের বিভিন্ন পদক্ষেপে ভোটের আগে থেকেই নানা রকমের প্ররোচণা দেখা যাচ্ছে। যাতে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি থেকে শুরু করে সাম্প্রদায়িকতাই উৎসাহী হবে।”
১৯৯৬ সালের জানুয়ারি মাসে কেপিপির প্রতিষ্ঠা হয়। তার পরে একাধিকবার কখনও তৃণমূল-কংগ্রেস জোট কখনও বিজেপিকে সমর্থন করলেও, পাকাপাকি ভাবে কোনও দলের স্থায়ী শরিক হিসেবে কেপিপি যোগ দেয়নি। ২০০১-র বিধানসভা ভোটে ‘বাংলা বাঁচাও ফ্রন্ট’ তৈরি করে তৃণমূলকে সমর্থন করে কেপিপি। ২০০৪ সালের লোকসভা ভোটে ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চাকে জোটসঙ্গী বেছে নেয় কেপিপি। এর পরে সংগঠনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মাথাচাড়া দেয় ও ২০০৬ সালে দল ভেঙে যায়। অতুল রায়ের নেতৃত্বে কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি গঠিত হয়।
গত বছরের অগস্টে ফের দুই দল মিশে যায়। কেপিপি সভাপতি হন অতুল রায় এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান নিখিল রায়। রাজ্যে পালাবদলের পর থেকেই শাসক তৃণমূলের সঙ্গে নানা বিষয়ে দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল কেপিপির। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে জলপাইগুড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা সেই দূরত্ব অনেকটাই বাড়িয়ে দেয় বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। এর পরেই লোকসভা ভোটে বিজেপিকে সমর্থনের ঘোষণা করে কেপিপি। ময়নাগুড়ি বিধানসভা উপনির্বাচনে কেপিপি প্রার্থীকে বিজেপিও সমর্থন করে।
কেপিপির মতো বিজেপিকে সমর্থন করেছিল আদিবাসীদের একটি গোষ্ঠীও। আদিবাসী বিকাশ পরিষদ ভেঙে বেরিয়ে আসা ওই গোষ্ঠীর নেতা জন বার্লা এ দিন বলেন, “বিষয়টি এখনও শুনিনি। পরে বিস্তারিত জেনে কিছু বলতে পারব। তবে নরেন্দ্র মোদির শপথগ্রহণের দিন আমরাও দিল্লিতে থাকব।”
এ দিকে, মোর্চার এনডিএ-র শরিক হওয়া নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করেছেন অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি। তাঁর অভিযোগ, “গোর্খাল্যান্ড নয়। মদন তামাঙ্গ হত্যা মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতেই ওঁরা দিল্লি গিয়েছেন।” তবে সিপিআরএমের তরফে অবশ্য এই ঘটনাকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy