Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

কাজ করে লাঞ্ছিত বিডিও-কে কাজ কেড়ে শাস্তি

লোকসভার ভোট পর্বের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে কাজ করতে গিয়ে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন হাবরা-২ ব্লকের বিডিও দীনবন্ধু গায়েন। ভোট শেষে তাঁরই বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল। ভোটের আগে সরকারি ভবনে তৃণমূলের ফ্লেক্স-ব্যানার খোলায় ওই দলের রোষে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে তাঁকে ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠাল রাজ্য সরকার। ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’ মানে রোজ অফিসে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করতে হবে, কিন্তু কাজ মিলবে না।

দীনবন্ধু গায়েন

দীনবন্ধু গায়েন

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

লোকসভার ভোট পর্বের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে কাজ করতে গিয়ে শাসক দলের কর্মী-সমর্থকদের হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন হাবরা-২ ব্লকের বিডিও দীনবন্ধু গায়েন। ভোট শেষে তাঁরই বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল। ভোটের আগে সরকারি ভবনে তৃণমূলের ফ্লেক্স-ব্যানার খোলায় ওই দলের রোষে পড়তে হয়েছিল তাঁকে। মঙ্গলবার বিজ্ঞপ্তি জারি করে তাঁকে ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠাল রাজ্য সরকার। ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’ মানে রোজ অফিসে গিয়ে হাজিরা খাতায় সই করতে হবে, কিন্তু কাজ মিলবে না।

এ দিন উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্য এক বিডিও দেবদুলাল পাত্রকেও ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ পাঠানো হয়েছে। তিনি বারাসত-২ নম্বর ব্লকের দায়িত্বে ছিলেন। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ভোটের পরে দেবদুলালবাবুর কাজকর্ম নিয়ে জেলাশাসকের কাছে রিপোর্ট চেয়েছিল নবান্ন। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই বিডিও-র বিরুদ্ধে এই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

ঘটনার সূত্রপাত লোকসভা ভোটের আগে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে সরকারি ভবনে লাগানো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পোস্টার-ব্যানার খুলতে গিয়ে উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরে এক দল তৃণমূল-সমর্থকের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েন কমিশনের ‘মডেল কোড অব কন্ডাক্ট’ (এমসিসি) বা আদর্শ আচরণবিধি রূপায়ণ বিভাগের কর্মীরা। কাজে বাধা পেয়ে তাঁরা বিডিও অফিসে গিয়ে সেই ঘটনার সবিস্তার বিবরণ নথিভুক্ত করেন।

তার পাল্টা হিসেবে তৃণমূল কর্মীরা স্থানীয় বিধায়ক ধীমান রায়ের দ্বারস্থ হন। জেলা প্রশাসনের একাংশের অভিযোগ ছিল, দলীয় কর্মীদের কাছ থেকে বিষয়টি জানতে পেরে ধীমানবাবু বিডিও-কে ফোন করেন। দু’জনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এর পরেই, ২৪ মার্চ ওই বিধায়কের নেতৃত্বে তৃণমূল কর্মীরা বিডিও অফিসে হামলা চালায় এবং বিডিও-কে হেনস্থা করে বলে প্রশাসনের ওই অংশের অভিযোগ। সে-দিনই পুলিশের কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন দীনবন্ধুবাবু। তার ভিত্তিতে পুলিশ ১৪ জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করে। পরের দিন সকলে জামিন পেয়ে গেলেও জেলা প্রশাসনের একটি অংশ বিষয়টি ভাল চোখে দেখেনি।

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, বিডিও-নিগ্রহের পরে ওই জেলার কয়েক জন অফিসার জেলাশাসকের কাছে এর বিহিত দাবি করেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, কমিশনের নির্দেশ মেনে কাজ করতে গিয়ে নিচু তলার সরকারি কর্মীদের হেনস্থা হতে হল। অথচ যিনি বিডিও অফিসে হামলার নেতৃত্ব দিলেন, সেই বিধায়কের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিল না। জেলাশাসক যাতে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন, সেই অনুরোধও জানান অফিসারেরা। সরকারি সূত্র বলছে, সহকর্মীদের নিয়ে জেলাশাসকের অফিসে যাওয়ার ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন বারাসত সদরের অন্যতম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এহেসান আলি। মঙ্গলবার তাঁকে মুর্শিদাবাদে বদলির নির্দেশ জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন।

নবান্নের একটি অংশের বক্তব্য, বিডিও-র দফতরে হামলা নিয়ে জেলা প্রশাসনের ভূমিকায় অসন্তুষ্ট হয়ে কার্যত একজোট হয়ে পড়েন জেলার এক শ্রেণির অফিসার। তাতে নাম জড়িয়ে পড়ে জেলার দুই আইএএস অফিসারেরও। এর মধ্যেই নির্বাচন কমিশন জেলাশাসক সঞ্জয় বনশলকে উত্তর ২৪ পরগনা থেকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করায় পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। জেলা প্রশাসনে এই টানাপড়েনের মধ্যেই ভোট মিটে যায়। এবং তার পরেই মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ফের জেলাশাসকের দায়িত্বে ফিরে যান বনশল। তার কিছু দিনের মধ্যে সৌরভ পাহাড়ী এবং ভি ললিতালক্ষ্মী নামে দুই আইএএস অফিসারকে যথাক্রমে কৃষি এবং ভূমিরাজস্ব দফতরে বদলি করেছে নবান্ন। এ বার জেলার দুই বিডিও-কে পাঠানো হল ‘কম্পালসারি ওয়েটিং’-এ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

compulsory waiting dinabandhu gayen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE