ভর্তির জন্য আবেদন জানাতে হবে অনলাইনেই। তবে অনলাইনে ছাত্র বা ছাত্রীর নিজের পছন্দ ‘লক’ করার ব্যাপারটা আর থাকছে না। এ বার কলেজের চাহিদা অনুযায়ী ছাত্র ভর্তির জন্য বিষয়ভিত্তিক তালিকা তৈরি করে দেবে বিশ্ববিদ্যালয়। সেই তালিকা কলেজে পাঠানো হবে। কলেজে ছাত্র ভর্তি হবে ওই তালিকা মেনেই। এবং ২৬ জুনের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে ছাত্র ভর্তির তালিকা তৈরি করে ফেলতে হবে।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু মঙ্গলবার কলেজে ছাত্র ভর্তির এই পদ্ধতির কথা জানান। এ দিন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি এবং উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা।
স্নাতক স্তরে ভর্তিতে অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এই অবস্থায় ভর্তিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে কয়েক বছর ধরেই অনলাইন প্রক্রিয়া চালু আছে বিভিন্ন কলেজে। এ বার কেন্দ্রীয় ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত ওয়েবসাইটেই ছাত্র বা ছাত্রীকে তাঁর পছন্দের কলেজ ও বিষয় নির্বাচন করে আসন ‘লক’ করার সুযোগ দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে আবেদন জানানোর পরে পড়ুয়া কেবল কলেজে গিয়ে ভর্তি হতেন। সেই পদ্ধতিতে কিছুটা বদল ঘটানো হয়েছে বলে এ দিন উচ্চশিক্ষা দফতরের তরফে জানানো হয়েছে।
সেই পরিবর্তনটা ঠিক কেমন?
উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, একটি কলেজে কোনও বিষয়ে ভর্তির জন্য যত ছাত্রছাত্রী আবেদন জানাবেন, তাঁদের সকলের র্যাঙ্ক জানিয়ে একটি ‘কাউন্সেলিং লিস্ট’ তৈরি করবে বিশ্ববিদ্যালয়। তালিকাটি তৈরি করা হবে কলেজের চাহিদা ও আবেদনকারীদের প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় সেই তালিকা পাঠিয়ে দেবে কলেজের কাছে। কাউন্সেলিং লিস্ট দেখে ছাত্র ভর্তি করতে হবে কলেজগুলিকে। আগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এক বার আসন ‘লক’ করে দেওয়ার পরে আবেদনকারী ছাত্র বা ছাত্রীকে আরও তিন বার তা বদলানোর সুযোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তাতে অনেক বেশি সময় লেগে যেত। সেই জন্য আসন ‘লক’ করার প্রক্রিয়াটাই পুরোপুরি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই কর্তা।
স্নাতক স্তরে নিজেদের পছন্দমতো ছাত্র ভর্তির জন্য ছাত্র সংসদগুলির জবরদস্তিতে ফি-বছর কার্যত নাভিশ্বাস ওঠে বিভিন্ন কলেজের। মেধার সঙ্গে আপস করে ছাত্র ভর্তি করানোর অভিযোগও ওঠে। এ-সব ঠেকাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা অনুযায়ী এ বার কলেজে ছাত্র ভর্তি করা হচ্ছে অনলাইনে। গত বছর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় যে-ভাবে ভর্তি করেছিল, সেই ধাঁচে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও কেন্দ্রীয় ভাবে ছাত্র ভর্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) তাতে আপত্তি জানায়। যদিও ওই সংগঠনের নেতারা তা মানতে চাননি।
নতুন পদ্ধতিতেও ছাত্র সংসদের চাপ পুরো এড়ানো যাবে না বলে অধ্যক্ষদের আশঙ্কা। মধ্য কলকাতার একটি কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “আসন লক করা গেলে পড়ুয়া তার ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে একেবারে নিশ্চিত হতে পারত। কিন্তু এ বার হয়তো ছাত্রছাত্রীদের কলেজে আসতেই বাধা দেওয়া হবে। সে-ক্ষেত্রে একটা অনিশ্চয়তা, অশান্তির আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।” গত বছর রাজ্যের কয়েকটি কলেজে এমন ঘটনা ঘটেছিল বলেও অভিযোগ ওই অধ্যক্ষের।
উচ্চশিক্ষা দফতর অবশ্য এ-সব যুক্তি বা অভিযোগ মানতে রাজি নয়। ওই দফতরের এক কর্তা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করা তালিকা তো ওয়েবসাইটে থাকবে। চাপ দিয়ে কী হবে!” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় জানান, তাঁদের পাঠানো তালিকার বাইরের কোনও ছাত্র ভর্তি হলে তাঁর নাম রেজিস্ট্রেশন করা হবে না। আবেদন ও ভর্তির প্রক্রিয়া বিশদ ভাবে জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শীঘ্রই বিজ্ঞাপন দেবে। তাদের ওয়েবসাইটেও এই সংক্রান্ত তথ্য থাকবে বলে উচ্চশিক্ষা দফতরের খবর।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা দফতর যা-ই বলুক, কেন্দ্রীয় ভাবে স্নাতকে ভর্তি প্রক্রিয়া এই শিক্ষাবর্ষে আদৌ শুরু হবে কি না, তা নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। এই পদ্ধতি বাতিলের জন্য চাপ দিতে তারা নতুন ভাবে প্রস্তুতি চালাচ্ছে বলে টিএমসিপি সূত্রের খবর। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডা অবশ্য জানান, ভর্তির পদ্ধতিই জানা নেই তাঁর। তাই এ ব্যাপারে তাঁদের ভূমিকা কী হবে, তা বলা যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy