Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

শুভজিতের কথায় ফের ছোট মাকে ডাকল ইডি

সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তির ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। কিন্তু তাঁর ‘ছোট মা’ জানেন। আর জানেন বাবা সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দুই অফিসারের জেরায় এমনই জানালেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের প্রথম পক্ষের ছেলে শুভজিৎ সেন।

ইডি-র দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন পিয়ালি সেন। ছবি: শৌভিক দে

ইডি-র দফতর থেকে বেরিয়ে আসছেন পিয়ালি সেন। ছবি: শৌভিক দে

অত্রি মিত্র ও কাজল গুপ্ত
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৪ ০৩:৪৪
Share: Save:

সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তির ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। কিন্তু তাঁর ‘ছোট মা’ জানেন। আর জানেন বাবা সুদীপ্ত সেন এবং দেবযানী মুখোপাধ্যায়। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর দুই অফিসারের জেরায় এমনই জানালেন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের প্রথম পক্ষের ছেলে শুভজিৎ সেন।

তাঁকে জেরা করে এ তথ্য মিলতেই তড়িঘড়ি এ দিন বিকেলে বিধাননগরে ইডি-র দফতরে ফের ডেকে পাঠানো হয় শুভজিতের ‘ছোট মা’ পিয়ালি সেনকে। সেখানে ইডি-র অফিসারেরা প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা জেরা করেন সুদীপ্ত সেনের দ্বিতীয় স্ত্রীকে।

এর আগে পিয়ালি সেন অবশ্য জানিয়েছিলেন, তিনি সারদার আর্থিক বাড়বাড়ন্তের খবর কিছুই জানতেন না। সারদায় কী ঘটত, কারা চাকরি পেতেন, সুদীপ্ত কাকে টাকা দিতেন এ সবের বিন্দুবিসর্গ জানা ছিল না তাঁর। এমনকী, সুদীপ্ত সেনের সল্টলেকের অফিসে তিনি এক দিনের জন্যও যাননি। মাঝেমধ্যে অফিসের কয়েক জন বাছাই করা কর্মী তাঁর কাছে এসে কিছু কাগজে সই করিয়ে নিয়ে যেত বলে দাবি পিয়ালির।

অথচ এ দিন ইডি-র জেরায় উল্টো কথাই বলেন শুভজিৎ। তাঁর দাবি, সুদীপ্ত-দেবযানী ছাড়া এক মাত্র পিয়ালিই সারদার সম্পত্তির হালহকিকত জানতেন। সারদার সম্পত্তি সম্পর্কে যে পিয়ালির কাছে তথ্য ছিল, তার কিছু ইঙ্গিত পেয়েছে ইডি। তদন্তকারীরা জানান, শুভজিতের কাছ থেকে পিয়ালির কথা জানতেই ফের পিয়ালিকে তলব করে ইডি।

এক অফিসারের বক্তব্য, ডায়মন্ড হারবার রোডে সারদার অফিস থেকে কিছু নথি মিলেছে। তা থেকে বোঝা যাচ্ছে ব্যবসা সংক্রান্ত অনেক কিছুই পিয়ালি জানতেন। সেই নিয়ে এ দিন বারবার তাঁকে জেরা করেন ইডি অফিসারেরা। কোথায়, কী ভাবে সুদীপ্ত সেন তাঁর লেনদেনের হিসেব রাখতেন, ব্যাঙ্কের লকারে গয়না ছাড়া অন্য কিছু ছিল কি না, এই সব শুভজিতের ‘ছোট মা’র কাছে জানতে চাওয়া হয়।

২০১৩-র এপ্রিলে সারদা কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। তার বছর খানেক পরেও পিয়ালি ও শুভজিৎকে গ্রেফতার করেনি রাজ্য সরকারের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। শেষ পর্যন্ত তদন্তে নেমে গত মাসে শুভজিৎ এবং পিয়ালিকে গ্রেফতার করে ইডি। পিয়ালি জামিন পেলেও ২৫ এপ্রিল থেকে শুভজিৎ প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি। ইডি-র এক অফিসারের কথায়, “তদন্ত যত এগোচ্ছে, দেখা যাচ্ছে শুভজিৎ সারদার ব্যাপারে অনেক কিছু জানেন। প্রথমে অস্বীকার করলেও শুভজিতের বক্তব্য ও পারিপার্শ্বিক তথ্যপ্রমাণ থেকে দেখা যাচ্ছে পিয়ালিও সারদা সম্পর্কে বহু তথ্য জানতেন।” এখন প্রশ্ন উঠছে, তদন্তে নেমে এমন দু’জন ব্যক্তিকে কেন গ্রেফতার করেনি রাজ্য পুলিশ? ইডি অফিসার বলছেন, “পিয়ালি-শুভজিৎকে গ্রেফতারের পরে আমরা জানলাম, রাজ্য পুলিশ ওঁদের জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেনি। তাই ওঁদের কোনও বয়ানও নথিভুক্ত হয়নি।” সল্টলেকের পুলিশকর্তারা অবশ্য জানান, শুভজিৎ-পিয়ালির কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যই নেই। তাই ওই দু’জনকে জেরা বা গ্রেফতারের প্রয়োজন হয়নি। ইডি-র কর্তারা ওই দু’জনকে গ্রেফতারের পরেই সল্টলেকে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে পিয়ালির লকারের সন্ধান পান। সেটি খুলতে চেয়ে ব্যাঙ্ক-কর্তাদের কাছে আবেদন জমা দেন তাঁরা। এই খবর পেয়েই তড়িঘড়ি লকারটি খুলে ফেলে সল্টলেক পুলিশ।

সম্প্রতি আরও কিছু তথ্য হাতে আসায় ইডি-র তদন্তকারীরা ঠিক করেন, ফের জেরা করা হবে শুভজিৎকে। সেই মতো এ দিন দুপুর আড়াইটে নাগাদ জেলে ঘণ্টাখানেক তাঁকে জেরা করা হয়। ইডি সূত্রের খবর, সারদার সম্পত্তির ব্যাপারে প্রশ্ন করলে ঠান্ডা মাথায় শুভজিৎ বলেন, “আমি কিছুই জানি না। জানে বাবা, দেবযানী আর ছোট মা।” ইডি জেনেছে, শুভজিৎ এবং পিয়ালি প্রায় চার কোটি টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়েছেন। কলকাতা শহরে শুভজিতের বেশ কিছু সম্পত্তিও রয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার আগে পর্যন্ত শুভজিতের হেফাজতে সারদা গোষ্ঠীর আর কী কী সম্পত্তি এবং টাকা ছিল, তা জানার চেষ্টা চলছে।

এ দিন সারদা গোষ্ঠীর দুই কর্মী অরবিন্দ চৌহান ও অশোক বিশ্বাসের কথাতেও বলেন শুভজিৎ। তাঁর দাবি, সারদার ব্যবসা সংক্রান্ত কাজেও নাক গলাতেন না তিনি। রাজ্যের ব্যবসা দেখতেন সুদীপ্ত সেন। উত্তর ভারতে দেখতেন অরবিন্দ চৌহান ও মুম্বইয়ে দেখতেন অশোক বিশ্বাস। অফিসারেরা জানাচ্ছেন, মুকুন্দপুরের বাসিন্দা অশোক ওরফে রাজু ছিলেন সুদীপ্ত সেনের বিশ্বস্ত কর্মীদের মধ্যে অন্যতম। অরবিন্দ ছিলেন সারদার অন্যতম ডিরেক্টর ও সুদীপ্তর গাড়িচালক। সোনমার্গ থেকে সুদীপ্ত-দেবযানীর সঙ্গে ধরা পড়ে এই অরবিন্দও।

এ দিন দুপুরে বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দাপ্রধান অর্ণব ঘোষের সঙ্গে দেখা করেন সারদা কেলেঙ্কারিতে নিযুক্ত সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্তকারী দল। সারদা মামলার বেশ কিছু নথি হাতে পেয়েছে সিবিআই। তা নিয়েই সিবিআই অফিসারেরা এ দিন গোয়েন্দাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা করেন। বিকেলে বিধাননগরে সিবিআইয়ের অফিসে বেশ কিছু ল্যাপটপ, কম্পিউটার-সহ বিভিন্ন জিনিস পাঠায় কমিশনারেট।

সারদা গোষ্ঠী বেহালায় একই ঠিকানায় ৪৪টি অফিস দেখিয়ে কলকাতা পুুরসভায় ট্রেড লাইসেন্স নিয়েছিল। এ দিনই পুরসভা সূত্রে জানানো হয়, বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় গত বছর থেকে ওই ৪৪ সংস্থার লাইসেন্স নবীকরণ না-করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কী ভাবে তারা ট্রেড লাইসেন্স পেল, তা-ও দেখতে বলা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE