রাজভবনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে আসছেন যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। ছবি: প্রদীপ আদক।
অবাঞ্ছিত একটি ঘটনা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু এক দিন বাদে একই জায়গায় ঘটা আর একটা অবাঞ্ছিত কাণ্ড রাজ্যপালের নজর এড়িয়ে গেল কী ভাবে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক মহলে সেই প্রশ্ন উঠে পড়েছে।
প্রথমটি হল যাদবপুরের পড়ুয়া-মিছিলে ‘দেশবিরোধী’ স্লোগান। দ্বিতীয়টি ক্যাম্পাসে জাতীয় পতাকাধারী একদল যুবকের তাণ্ডবের ঘটনা। স্লোগান-কাণ্ডে কোনও এফআইআর রুজু করা হয়েছে কি না, সরকারের কাছে তা জানতে চেয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা রাজ্যপাল কিশোরীনাথ ত্রিপাঠী। এ ব্যাপারে তিনি রাজ্যের মুখ্যসচিবের রিপোর্ট তলব করেছেন। মুখ্যসচিবের কাছে আচার্যের এ-ও জিজ্ঞাস্য, যে বা যাঁরা এমন স্লোগান দিয়েছেন, তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে কি? কিন্তু তাণ্ডব প্রসঙ্গে তাঁর চিঠি নীরব।
যাদবপুরের উপাচার্যের কাছেও রিপোর্ট চেয়েছেন রাজ্যপাল। নবান্ন রাজ্যপালকে কোনও রিপোর্ট দিচ্ছে কিনা কিংবা প্রশাসন কী ভাবছে, সে বিষয়ে কর্তারা মুখ খুলতে চাননি। তবে যাদবপুরের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানিয়েছেন, তাঁরা রিপোর্ট দেবেন। শুক্রবার রাজভবনে ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করে এসে সুরঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘আচার্য রাজ্যপাল রিপোর্ট চেয়েছেন। অবশ্যই দেওয়া হবে। আগামী সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির বৈঠক। রাজ্যপাল যা যা জানতে চেয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনে সে সবের রিপোর্ট দেওয়া হবে।’’
জেএনইউ-কাণ্ডের প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বার হওয়া মিছিলে যাঁরা ‘দেশবিরোধী’ স্লোগান দিয়েছেন, তাঁদের নামে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ কি এফআইআর করেছেন? কিংবা করার কথা ভাবছেন?
সুরঞ্জনবাবুর জবাব, ‘‘পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে এফআইআর করা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য বিরোধী।’’ সেই পরম্পরা রক্ষা করা হবে বলে জানিয়ে উপাচার্যের পর্যবেক্ষণ, কোনও ছোট সংগঠন দুর্ভাগ্যজনক মন্তব্য করলে তার দায় চাপিয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়কে কালিমালিপ্ত করা উচিত নয়। ‘‘আমি বিশ্বাস করি, আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই সমস্যার সমাধান করা যায়।’’— মন্তব্য সুরঞ্জনবাবুর। শিক্ষক-কর্মী-পড়ুয়াদের নিয়ে এ বিষয়ে কনভেনশনের পরিকল্পনাও তাঁদের রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ দিকে গত তিন দিন প্রতিবাদ ও পাল্টা প্রতিবাদের ঝড়ে টালমাটাল থাকা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর এ দিন ছিল পুরোপুরি শান্ত। নিয়মমতো সব ক্লাস হয়েছে। কোনও ছাত্র সংগঠন মিছিল বা বিক্ষোভ করেনি, নতুন পোস্টারও পড়েনি। তবে ক্যাম্পাসে আফজল গুরুর সমর্থনে পোস্টার সেঁটেছিল যারা, সেই ছাত্র সংগঠন ‘রাডিক্যাল’-এর এ দিন সম্মেলন ছিল বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। যেখানে দাঁড়িয়ে যাদবপুরের এম টেক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জুবি সাহা সাফ বললেন, ‘‘আমরা যা করেছি, বেশ করেছি। কোনও অনুতাপ নেই।’’
মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে লেখা রাজ্যপালের চিঠিতে অবশ্য আফজল গুরুর সমর্থনে পোস্টার পড়ার ঘটনার উল্লেখ নেই। ঠিক যে ভাবে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে জাতীয় পতাকাধারী এক দল যুবকের ‘হামলাবাজির’ প্রসঙ্গটি ঠাঁই পায়নি। এবং তারই প্রেক্ষাপটে আচার্যের ভূমিকা সম্পর্কে প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছেন যাদবপুরের পড়ুয়ারা। যেমন জুবির অভিযোগ, ‘‘মঙ্গলবারের স্লোগান নিয়ে উনি রিপোর্ট তলব করেছেন! অথচ পর দিন যে ভাবে জাতীয় পতাকা নিয়ে ক্যাম্পাসে হামলা হল, তার রিপোর্ট চেয়ে না-থাকলে বলতে হবে, রাজ্যপাল পক্ষপাতদুষ্ট কাজ করেছেন।’’ বস্তুত রাজ্যপালের ভূমিকা দেখে যাদবপুরের শিক্ষকমহলের একাংশও বিস্মিত। আর হামলার জন্য যাদের ছাত্র সংগঠনের দিকে আঙুল, সেই বিজেপি’র কী বক্তব্য?
এ দিন সুরঞ্জনবাবু রাজভবন ছাড়ার খানিক বাদে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন বিজেপির জাতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহ। রাজভবন থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশবিরোধী স্লোগান যারা দিয়েছে, তাদের সঙ্গে বিদেশের উগ্রপন্থী গোষ্ঠীর যোগ থাকতে পারে। তাই এনআইএ-তদন্তের দাবি করেছি রাজ্যপালের কাছে।’’ ঘটনার নেপথ্যে শিক্ষকদের একাংশেরও উস্কানি রয়েছে বলে রাহুলবাবুর অভিযোগ। পাশাপাশি পুরো বিষয়টিতে রাজ্য সরকার ‘নীরবতা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাহুলবাবু বলেছেন, ‘‘রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছি, তিনি যেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসেন।’’
যাদবপুর প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতৃত্বের মুখে অবশ্য যথারীতি কুলুপই আঁটা রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy