Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
পাড়ুই-কাণ্ড

হৃদয়দের চিঠি উধাও, পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন

নিরাপত্তা চেয়ে বীরভূম জেলাশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন হৃদয় ঘোষ। কিন্তু পুলিশের হেফাজতে থাকা সেই চিঠির হদিশই পেল না বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। শেষমেশ চিঠির প্রতিলিপি জোগাড় করতে হল হৃদয়বাবুর কাছ থেকেই। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি ‘হারানো’কে ঘিরে পাড়ুই-কাণ্ডে ফের পুলিশের গাফিলতিই প্রকাশ্যে এল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০৩:৩৭
Share: Save:

নিরাপত্তা চেয়ে বীরভূম জেলাশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছিলেন হৃদয় ঘোষ। কিন্তু পুলিশের হেফাজতে থাকা সেই চিঠির হদিশই পেল না বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। শেষমেশ চিঠির প্রতিলিপি জোগাড় করতে হল হৃদয়বাবুর কাছ থেকেই। এ রকম একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি ‘হারানো’কে ঘিরে পাড়ুই-কাণ্ডে ফের পুলিশের গাফিলতিই প্রকাশ্যে এল। অন্য দিকে, বৃহস্পতিবারই সাগরবাবুর খুনে অন্যতম অভিযুক্ত সুব্রত রায়কে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে আবেদন করেছিল সিট। শুক্রবার সিউড়ির মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় সুব্রতকে ১১ দিন সিট-এর হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।

সেই চিঠি কোথায়? অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনের মুখে ১৭ জুলাই কসবায় তৃণমূলের বীরভূমের সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উস্কানিমূলক বক্তব্যের পরেই অশান্তি শুরু হয়। কয়েক জন নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে হামলা হয়। ওই সময়ই জেলাশাসকের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে হৃদয়বাবু-সহ ১১ জন নির্দল প্রার্থী (বিক্ষুব্ধ তৃণমূল) চিঠি জমা দেন। জেলাশাসক ওই আবেদনপত্র তৎকালীন এসপি মুরলীধর শর্মার কাছে পাঠান। ওই চিঠি পুলিশ সুপারের কাছ থেকে পাড়ুই থানায় এসে পৌঁছয় বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। তখনও হৃদয়বাবুরা প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা পাননি। এরই মাঝে ২১ জুলাই রাতে নিজের বাড়িতে খুন হয়ে যান নির্দল প্রার্থী হৃদয় ঘোষের বাবা সাগর ঘোষ। তদন্তে নেমে ওই চিঠিটির কথা জানতে পেরেই সিট পাড়ুই থানায় সেটির খোঁজ করেছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, তা না পেয়েই তদন্তকারীরা সম্প্রতি হৃদয়বাবুর দ্বারস্থ হন। হৃদয়বাবু বলছেন, “সিট-এর আধিকারিকেরাই আমাকে বলেছিলেন, তাঁরা ওই আবেদনপত্র পাচ্ছি না। তখন আমি ওঁদের হাতে চিঠির একটা প্রতিলিপি তুলে দিই।” এ দিন চেষ্টা করেও সম্পদবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে, পাড়ুই থানার বর্তমান ওসি নীলোৎপল মিশ্র বলেন, “আমি গত আগস্ট মাসে এই থানায় যোগ দিয়েছে। এমন কোনও চিঠির কথা আমার জানা নেই। স্বাভাবিক ভাবে হারিয়ে যাওয়ার প্রশ্ন নেই।” জেলার বর্তমান পুলিশ সুপার আলোক রাজোরিয়াও দাবি করেন, “এ ব্যাপারে আমার কিছুই জানা নেই।”

প্রথম থেকেই নিহত সাগরবাবুর পরিবার ওই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন। অনুব্রত মণ্ডল ও জেলা সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরীর নাম থাকায় মামলার তদন্ত বারবার প্রভাবিত হয়েছে বলেও তাঁদের অভিযোগ। এমনকী, পুলিশের বিরুদ্ধে ঘটনার সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাট করা এবং সাদা কাগজে জোর করে সই নেওয়ার অভিযোগও সাগরবাবুর পরিবার তুলেছেন। পাড়ুই থানার তৎকালীন ওসি সম্পদ মুখোপাধ্যায় ও ঘটনার তদন্তকারী অফিসার দ্বিজরাজ সাহানার বিরুদ্ধেই তাঁদের অভিযোগ ছিল বেশি। এই মামলার দায়িত্ব নেওয়ার পরে সিউড়ি আদালতে ওই দুই আধিকারিকের পলিগ্রাফ টেস্ট করানোর আবেদন করে সিট। দু’জনেই অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সেই পরীক্ষায় সম্মতি দেননি। এ দিন চিঠি হারানোর বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, পুলিশ কি তাহলে ওই নথি ইচ্ছা করেই হারিয়ে ফেলেছে? জেলার পুলিশ কর্তারা অবশ্য এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন।

এ দিকে, ওই চিঠির ভিত্তিতে ঠিক কী নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা জানতে চেয়ে জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনার কাছে কয়েক দিন আগেই সিট চিঠি দেয়। জেলাশাসক বলেন, “হৃদয়বাবুদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে তৎকালীন পুলিশ সুপারের কাছে ওই চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। পরে কী করা হয়েছিল, সে রিপোর্ট সিটকে দিয়েছি।” তবে, সেই মূল চিঠিটি এখন কোথায়, তা নিয়ে তিনি কিছু বলেননি। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ চিঠি হারিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিরক্ত বিশেষ তদন্তকারী দলের অফিসারেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

parui case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE