Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হুমকি ছেড়ে পুলিশ বরং সচেতন করুক

আমরা ছেলেবেলায় বাবা-জ্যাঠামশাই-কাকাদের সিগারেট বা তামাক খেতে দেখেছি। দাদু গড়গড়ায় তামাক খেতেন। তা ছাড়া, তখন সিনেমার নায়কদেরও খুব কায়দা করে সিগারেট ধরাতে ও খেতে দেখা যেত। যেমন অশোককুমার, দেবানন্দ। পরবর্তীকালে উত্তমকুমার। ধূমপানের বিপদ সম্পর্কে তখনও কোনও বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ প্রচলিত হয়নি।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০৩:৩২
Share: Save:

আমরা ছেলেবেলায় বাবা-জ্যাঠামশাই-কাকাদের সিগারেট বা তামাক খেতে দেখেছি। দাদু গড়গড়ায় তামাক খেতেন। তা ছাড়া, তখন সিনেমার নায়কদেরও খুব কায়দা করে সিগারেট ধরাতে ও খেতে দেখা যেত। যেমন অশোককুমার, দেবানন্দ। পরবর্তীকালে উত্তমকুমার। ধূমপানের বিপদ সম্পর্কে তখনও কোনও বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ প্রচলিত হয়নি। ওটা ছিল একটা স্টাইল স্টেটমেন্ট। সিগারেট ধরানো এবং খাওয়ার কায়দা দেখিয়ে মেয়েদের ইমপ্রেস করার চেষ্টাও ছিল ব্যাপক। কলকাতায় বিএ পড়তে এসে হস্টেলে দেখলাম, প্রায় ৭০-৮০ ভাগ ছেলেই সিগারেট খায়। তাদের মধ্যে আবার কয়েক জন ব্যায়ামবীর ও খেলোয়াড়ও ছিল।

ওই দেখাদেখি আমিও সিগারেট খাওয়া শুরু করে দিলাম। তবে অসুবিধা ছিল পয়সার। বাবার পাঠানো মাপা টাকায় কোনও বাড়তি খরচ সামলানো ছিল মুশকিল। তাই ব্লেড দিয়ে সিগারেট কেটে আধখানা করে দু’বারে খেতাম। এই ধূমপান যে শরীরের পক্ষে মোটেই ভাল নয়, সেটা বুঝতে পারলাম ধূমপান শুরু করার কিছু দিন পরেই, যখন পরিশ্রমের কাজ করলে হাঁফ ধরে যেত। তার পরে দেখতাম, যখন সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে না, তখনও সময় কাটানোর জন্য খেয়ে যাচ্ছি।

সিগারেটের বিরুদ্ধে যখন সারা পৃথিবীতে সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা শুরু হল, তখনই আমার মন বলল, ধূমপান-বিরোধী এই আন্দোলন আরও আগেই শুরু হওয়া উচিত ছিল। বিদেশে এই সচেতনতা অনেক আগেই এসেছে। আমেরিকা, ইউরোপ বা অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে দেখতাম, বড় বড় হরফে লেখা, ‘থ্যাঙ্ক ইউ ফর নট স্মোকিং।’ এ দেশে বিমানে, ট্রেনে, বাসে বা সর্বসাধারণের বিচরণক্ষেত্রে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়ায় প্যাসিভ স্মোকিং-এর হাত থেকে লোকে রক্ষা পাবে।

দীর্ঘ দিনের এই নেশাটি ছাড়তে আমার খুব কষ্ট হয়েছিল বটে, কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার পরে আমি হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছি। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, আমার পরিবারে আমিই ছিলাম একমাত্র ধূমপায়ী। সিগারেট ছাড়ার পরে এখন আমি ধূমপান-বিরোধী আন্দোলনের এক জন কট্টর সমর্থক। প্রকাশ্যে বা জনসমাবেশে ধূমপান নিষিদ্ধ হয়েছে বটে, কিন্তু কোনও কোনও এয়ারপোর্ট বা হয়তো সব এয়ারপোর্টেই আলাদা ‘স্মোকিং রুম’ আছে দেখেছি। যাঁরা নেশাটা ছাড়তে পারছেন না, তাঁদের অসহায় অবস্থাটাও বুঝতে পারি। বিশেষ করে, দীর্ঘ বিমানযাত্রায় ১৬-১৭ ঘণ্টা ধূমপান না-করে থাকা যে কতটা কঠিন, তা আমি ভালই জানি।

এ দেশে যে হেতু গরীব মানুষের মধ্যে, বিশেষত কায়িক শ্রমিক যাঁরা, তাঁদের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা খুব বেশি, সে হেতু ধরে ধরে জরিমানা করাটা খুব একটা বাস্তবসম্মত বলে মনে করি না। আমি বলি, আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে গেলে পুলিশের কাজ বাড়বে এবং নানা রকম ঝামেলা-ঝঞ্ঝাট-বিবাদ বৃদ্ধি পাবে। এর চেয়ে বরং পুলিশ বা এনজিও-রা পাড়ায় পাড়ায় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য নিয়মিত ছোটখাটো বৈঠক করতে পারে। মানুষকে বুঝিয়ে-সুঝিয়েই ধূমপান থেকে বিরত করা উচিত।

মনে রাখা দরকার, সব সময়ে চোখ রাঙিয়ে কিন্তু সব কাজ হয় না। কারণ যে নেশাখোর, তার পক্ষে নেশা করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE