আসানসোলে হারের পরে দলের নির্দেশে মলয় ঘটককে তৃণমূলের জেলা সভাপতি ও মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিতে হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের ওই ঘটনার পরে উত্তরবঙ্গের তৃণমূল শিবিরেও শুরু হয়েছে গুঞ্জন। মালদহের দুটি আসন ও দার্জিলিং আসনের সমতল এলাকার তিন বিধানসভায় তৃণমূল দ্বিতীয় স্থানে। দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রতিদিনই আরও প্রকট হচ্ছে। ফলে শীর্ষ নেতৃত্ব কেন পদক্ষেপ করছেন না, সে প্রশ্ন উঠছে দলের অন্দরেই।
মালদহের তৃণমূল নেতা বাবলা সরকার বলেন, “যে ভাবে দুই নেতা একে অন্যকে দোষারোপ করছেন, তাতে দলে সংকট তৈরি হচ্ছে। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।” দার্জিলিং জেলা কমিটির একাধিক সদস্যের বক্তব্য, হারের পর জেলা কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। জেলার শীর্ষ নেতারা কলকাতা গিয়ে বসে আছেন। জেলা নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে দুর্নীতি এবং অকর্মণ্যতা এবং ঔদ্ধত্যের যে সব অভিযোগ উঠেছে, তার বিহিত হওয়া দরকার। দ্রুত সদর্থক পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি আরওই হাতের বাইরে চলে যাবে, আশঙ্কা তাঁদের।
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব কলকাতাতেই রয়েছেন। আজ, বুধবার, মালদহের দুই মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র এবং কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী কলকাতায় আসবেন বলে দলীয় সূত্রে খবর। এঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি শোনা যাচ্ছে দলের অন্যান্য মহল থেকেও। তৃণমূলের অন্দরের খবর, গত রবিবার কলকাতায় তৃণমূল ভবনে শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে আলোচনার সময়ে আসানসোলের এক নেতা প্রশ্ন তোলেন, আসানসোলে যদি বিপর্যয়ের দায় নিয়ে সরতে হয় কৃষিমন্ত্রী মলয় ঘটককে, তা হলে মালদহ, শিলিগুড়িতে তা হবে কেন?
তবে দলীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি গৌতম দেবের সঙ্গে দলনেত্রী ইতিমধ্যেই সমতল শিলিগুড়ির তিনটি বিধানসভায় শোচনীয় ফলের জন্য অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তৃণমূলের প্রদেশ স্তরের একাধিক নেতার ধারণা, মালদহের ব্যাপারেও যথেষ্ট কড়া পদক্ষেপ করবেন দলনেত্রী।
তবে পরাজয়ের পরে মলয়বাবুর ইস্তফার জেরে আসানসোলে তৃণমূলের মধ্যে ক্ষোভ চাপা থাকেনি। মঙ্গলবার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান আসানসোলে। তবে দলের কোনও বড় নেতা সেখানে ছিলেন না। মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ প্রথমে শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে এসবি গড়াই রোড অবরোধ করা হয়। অবরোধকারীরা দাবি করেন, মলয়বাবুকে তাঁর পদ ফিরিয়ে দিতে হবে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মলয়বাবুর ভাই অভিজিৎ ঘটক, যাঁকে দলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) যুব সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়েছে।
এ দিন অভিজিৎবাবুই গিয়ে অবরোধ তোলার ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু সকাল ১১টা নাগাদ আবার আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডের কাছে হাটন রোড মোড় অবরোধ করেন তৃণমূল সমর্থক পরিবহণ কর্মীদের সংগঠন ‘মোটর ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর সদস্যেরা। এই ইউনিয়নের সম্পাদক রাজু অহলুওয়ালিয়ার দাবি, “লোকসভা ভোটে হারের আসল কারণ বিশ্লেষণ না করে এক তরফা ভাবে মলয়বাবুকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তারই প্রতিবাদে এই অবরোধ।” ঘণ্টাখানেক পরে তাঁরা অবরোধ তুলে নেন।
শিল্পাঞ্চলের তৃণমূল এবং আইএনটিটিইউসি নেতারা অবশ্য এই বিক্ষোভ-অবরোধের নিন্দা করেন। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্যকরী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “দলনেত্রীকে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করা ঠিক হচ্ছে না। তাতে আখেরে মলয়বাবুরই ক্ষতি হচ্ছে।” আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “আমাদের সংগঠন এই ধরনের বিশৃঙ্খলা অনুমোদন করে না। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।”
সহ-প্রতিবেদন: সুশান্ত বণিক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy