অনিয়মের মোকাবিলায় স্নাতক স্তরে ভর্তির ব্যবস্থা হয়েছে অনলাইনে। আবার ‘স্বচ্ছতার স্বার্থ’-এই কলেজে কলেজে অনলাইনে ছাত্র ভর্তির পুরো প্রক্রিয়াটাই নিজেদের হাতে রাখতে চায় রাজ্য সরকার। কোনও পেশাদার সংস্থাকে ছাত্র ভর্তির কাজের দায়িত্ব আউটসোর্সিং করে এই প্রক্রিয়া পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। সেই অনুসারে কাজও এগিয়েছিল। কিন্তু সরকার আউটসোর্সিংয়ের পক্ষপাতী নয়।
অনলাইনে ছাত্রছাত্রী ভর্তির ঘোষিত নীতি থেকে সরে না-এলেও ঠিক কোন পদ্ধতিতে ছাত্র ভর্তি করা হবে, তা চূড়ান্ত করতে আজ, বৃহস্পতিবার ফের বৈঠকে বসছেন রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতরের কর্তারা।
বিভিন্ন মহলের চাপে কলেজে ভর্তিতে অনিয়ম চলে বলে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মেধা-তালিকার বালাই না-থাকায় তাতে মানের সঙ্গে আপস করা হয় বলেও শিক্ষাজগতের অনেকে মনে করেন। এই অবস্থায় অনিয়ম এড়াতেই অনলাইনে ভর্তির ব্যবস্থা হয়েছে। মঙ্গলবারেই স্নাতক স্তরে ছাত্রছাত্রী ভর্তির পদ্ধতি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক সেরে এক দফা সাংবাদিক বৈঠক করেছিলেন সদ্য-প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। সেখানে বলা হয়েছিল, অনিয়মের পথ যথাসম্ভব বন্ধ করতে প্রতিটি কলেজের জন্য বিষয়ভিত্তিক ছাত্র ভর্তির তালিকা তৈরি করবে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়। সেই তালিকা থেকেই পড়ুয়াদের ভর্তি করতে হবে কলেজগুলিকে। এই পদ্ধতিতেও ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্র সংসদের চাপ পুরোপুরি এড়ানো যাবে না বলে অনেক কলেজ-অধ্যক্ষ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে উচ্চশিক্ষা দফতরের এক কর্তা ওই দিন বলেছিলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি করা তালিকা তো ওয়েবসাইটে থাকবে। চাপ দিয়ে কী হবে!” কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের পাঠানো তালিকার বাইরে থেকে কাউকে ভর্তি করা হলে সেই ছাত্র বা ছাত্রীর নাম রেজিস্ট্রেশনই আটকে দেওয়া হবে।
এই পরিস্থিতিতেই মঙ্গলবার মন্ত্রিসভায় কিছু রদবদল করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ব্রাত্য বসুর হাত থেকে শিক্ষা দফতর যায় পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে। নতুন শিক্ষামন্ত্রী বুধবার বলেন, “সরকার ভর্তি প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা রক্ষা করতে বদ্ধপরিকর। তাই ছাত্র ভর্তি হবে অনলাইন পদ্ধতিতেই। কিন্তু এই কাজের নিয়ন্ত্রণ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে থাকবে, নাকি কলেজের উপরে, সেটা দেখতে হবে।” এই বিষয়ে আলোচনার জন্যই বৃহস্পতিবার বৈঠক ডাকা হয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে উচ্চশিক্ষা দফতরের একটি সূত্রের খবর, কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে অনলাইন প্রক্রিয়া আদৌ বাধ্যতামূলক না-ও থাকতে পারে। এক কর্তা বলেন, “প্রত্যন্ত গ্রামের যে-সব কলেজে ইন্টারনেটের সংযোগ নেই, সেখানে অনলাইন চালু করার মতো পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায়নি।”
তা হলে অনলাইনে ভর্তি নিয়ে মঙ্গলবার ওই ঘোষণা করা হল কেন?
উচ্চশিক্ষা দফতরের ওই কর্তার জবাব, “প্রতিদিনই তো পদ্ধতির মূল্যায়ন করা হয়। তাতেই এখন পরিস্থিতিটা এ-রকম দাঁড়িয়েছে।”
তবে ওই দফতরেরই অন্য একটি সূত্রের দাবি, অনলাইনে ভর্তি প্রক্রিয়া চালু রাখার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি আছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ বা টিএমসিপি-র। তৃণমূলের শীর্ষ স্তরের নেতাদের ধরে অনলাইনে ভর্তি বন্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছে তারা। সেই চাপেই কি শেষ পর্যন্ত এই শিক্ষাবর্ষে অনলাইন প্রক্রিয়া চালু না-ও হতে পারে? পার্থবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, এমন কোনও চাপ নেই। চাপ থাকলেও তার কাছে মাথা নোয়ানোর প্রশ্নই ওঠে না। টিএমসিপি-ও চাপ দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy