Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সমাবর্তনের জট কাটাতে জুটাকে জুজু অভিজিতের

প্রথমে আবেদন-নিবেদন। তার পরেই ভয় দেখানোর রাস্তা নিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। সমাবর্তনের ৪৮ ঘণ্টা আগে, সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি হুঁশিয়ারি দিলেন, যে-সব শিক্ষক-শিক্ষিকা সমাবর্তন বয়কট করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এ আলোচনা করে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। উপাচার্যের হুমকিতেও অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তম শিক্ষক সংগঠন জুটা জানিয়ে দিয়েছে, সমাবর্তন বয়কট ও অবস্থানের সিদ্ধান্তে তারা অনড়। উল্টে এত কিছুর পরেও উপাচার্য এমন বার্তা দেওয়ায় জুটা-র অনেক সদস্য বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। ছাত্রছাত্রীরাও এ দিন সাধারণ সভার বৈঠকের পরে সমাবর্তন বয়কটের সিদ্ধান্তেই অনড় থেকেছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১১
Share: Save:

প্রথমে আবেদন-নিবেদন। তার পরেই ভয় দেখানোর রাস্তা নিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অভিজিৎ চক্রবর্তী। সমাবর্তনের ৪৮ ঘণ্টা আগে, সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে তিনি হুঁশিয়ারি দিলেন, যে-সব শিক্ষক-শিক্ষিকা সমাবর্তন বয়কট করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায় কি না, এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি)-এ আলোচনা করে সেই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উপাচার্যের হুমকিতেও অবশ্য চিঁড়ে ভেজেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তম শিক্ষক সংগঠন জুটা জানিয়ে দিয়েছে, সমাবর্তন বয়কট ও অবস্থানের সিদ্ধান্তে তারা অনড়। উল্টে এত কিছুর পরেও উপাচার্য এমন বার্তা দেওয়ায় জুটা-র অনেক সদস্য বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ। ছাত্রছাত্রীরাও এ দিন সাধারণ সভার বৈঠকের পরে সমাবর্তন বয়কটের সিদ্ধান্তেই অনড় থেকেছেন।

সমাবর্তন বয়কটকারী পড়ুয়াদের শংসাপত্রে স্ট্যাম্প মেরে দাগিয়ে দেওয়ার যে-প্রস্তাব আচার্য-রাজ্যপাল কেশনীরাথ ত্রিপাঠী দিয়েছিলেন, তা অবশ্য রূপায়ণ করা হবে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এ দিন তিনি বলেন, “প্রস্তাব ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আমি রাজ্যপালকে অনুরোধ করেছিলাম। রাজ্যপাল জানিয়েছেন, সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীদের কোনও ক্ষতি করার অভিপ্রায় তাঁর নেই। ওই প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে নিয়েছেন।” তবে অনেকে মনে করছেন, ওই প্রস্তাবের আইনি ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় এ ছাড়া আচার্যের কাছে অন্য পথ ছিল না।

পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে আচার্য কড়া সুপারিশ প্রত্যাহার করে নিলেও শিক্ষকদের ক্ষেত্রে উপাচার্য হাঁটছেন বিপরীত পথে। কাল, বুধবার যাদবপুরের ৫৯তম বার্ষিক সমাবর্তন। এ দিন সাংবাদিক বৈঠক ডেকে উপাচার্য প্রথমে সমাবর্তন বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য জুটা-কে আবেদন জানান। কিন্তু তার পরেই বলেন, “শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি সমাবর্তনের দিন ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকেও দূরত্ব বজায় রাখেন, সেটা অত্যন্ত অনৈতিক। এ ভাবে আসলে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনে ইন্ধন জোগানো হবে। শিক্ষক হিসেবে আমি এই কর্মসূচিকে ধিক্কার জানাব।”

এর পরেও শিক্ষক-শিক্ষিকারা যদি বয়কটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না-আসেন, উপাচার্য কী করবেন?

অভিজিৎবাবুর জবাব, “তা নিয়ে এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

জুটা-র সাধারণ সম্পাদিকা নীলাঞ্জনা গুপ্ত অবশ্য জানান, আজ, মঙ্গলবার বিকেল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান এবং বুধবারের সমাবর্তন বয়কটের সিদ্ধান্তে তাঁরা অনড়। তিনি বলেন, “উপাচার্যের কথার প্রেক্ষিতে কিছু বলব না। তবে এটুকু বলতে পারি, আমরা জোর করে কাউকে সমাবর্তনে যেতে বারণ করছি না।”

সমাবর্তনের আগে উপাচার্যের সাংবাদিক বৈঠক ডাকার নজির যাদবপুরের ইতিহাসে প্রায় নেই। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকার বক্তব্য, ক্যাম্পাসে পুলিশ ডেকে ছাত্র-শিক্ষকদের বড় অংশকে বিরূপ করে তুলেছেন উপাচার্য নিজেই। তার পরে জটিলতা কাটাতে মোটেই সে-ভাবে উদ্যোগী হননি তিনি। সমাবর্তন কোথায় হবে, সেই সিদ্ধান্তও নিতে পারেননি। ওই অনুষ্ঠান যে ক্যাম্পাসেই হবে, সেটা ঠিক করে দিতে হয়েছে আচার্যকে। এখন ভয় দেখিয়ে শিক্ষকদের সমাবর্তনে আসা নিশ্চিত করতে চাইছেন উপাচার্য।

এই বক্তব্য যে ভিত্তিহীন নয়, এ দিনের সাংবাদিক বৈঠকেই তার প্রমাণ মিলেছে। ২০০৯ সালের একটি ইসি বৈঠকের প্রসঙ্গ তুলে উপাচার্য জানান, সে-বার ক্যাম্পাসে অনেক কঠোর নিয়মকানুন চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। জুটা-র অনেকে সেই সিদ্ধান্তে সই-ও করেন। তা হলে এখন আন্দোলন কেন? জুটা-র দাবি, সে-বার সিসিটিভি বসানো, ক্যাম্পাসে প্রবেশ-প্রস্থান নিয়ে কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু পড়ুয়াদের আপত্তিতে তা বলবৎ করা হয়নি। এখন সমাবর্তনের আগে সে-সব প্রসঙ্গ টেনে উপাচার্য আসলে চাপ তৈরির চেষ্টা করছেন।

জুটা-র আন্দোলনকে তিনি যে আমল দিচ্ছেন না, উপাচার্য এ দিন সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন। তাঁর কথায়, “কয়েক জন শিক্ষক বয়কট করবেন বলে শুনেছি। তবে অধিকাংশ শিক্ষকই সমাবর্তনে আছেন বলে জানিয়েছেন।” তাঁর দাবি, রেকর্ড সংখ্যক ছাত্রছাত্রী সমাবর্তনে যোগ দিতে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশও স্বাভাবিক। উপাচার্য বলেন, “সাম্প্রতিক ছাত্র-বিক্ষোভ এবং সংবাদমাধ্যমের অত্যুৎসাহের জন্যই এ বারের সমাবর্তন বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।” এর পিছনে শিক্ষকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে বলে মনে করেন অভিজিৎবাবু।

এ দিনই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও বর্তমানে পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দফতরে গিয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করেন উপাচার্য। পরে জানান, ডাক মারফত নিমন্ত্রণ করা যায়নি বলে তিনি নিজে এসে ব্রাত্যবাবুকে সমাবর্তনের আমন্ত্রণপত্র দিয়ে গেলেন।

আচার্যের বিতর্কিত সুপারিশ পর্বের পরে উপাচার্য অবশ্য পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে কোনও হুমকি-হুঁশিয়ারি দেননি। শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুর আবেদন উপেক্ষা করেই পড়ুয়ারা বয়কটের সিদ্ধান্তে অনড়। মঙ্গলবার তাঁরাও ক্যাম্পাসে অবস্থান করবেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিরোধিতার বার্তাও দেওয়া হবে। আন্দোলনকারী ছাত্র অম্লান হাজরার কথায়, “সমাবর্তন বয়কটের জন্য সকলের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। কারণ, যে-উপাচার্যের জন্য আমরা পুলিশের কাছে মার খেয়েছি, যে-আচার্য সেই উপাচার্যকে সমর্থন জানিয়েছেন, তাঁদের হাত থেকে শংসাপত্র নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্মানজনক নয়। তাই শিক্ষামন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দেওয়া গেল না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE