Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
মন্ত্রী কমলো, মন্ত্রক নয়

আপাতত শিকে ছিঁড়ল না বাংলার কপালে

সংখ্যায় মাত্র দুই। তবুও আশায় বুক বেঁধেছিল বঙ্গবাসী। যদি শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্বের শিকে ছেঁড়ে বঙ্গের দুই বিজেপি সাংসদের কপালে। পূর্ণমন্ত্রী যদি বা না-ও হয়, তা হলেও যাতে অন্তত একটি প্রতিমন্ত্রীর আসন জোটে রাজ্যের ভাগ্যে! কিন্তু হতাশই হতে হল রাজ্যবাসীকে। দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় জায়গা হল না আসানসোলের বাবুল সুপ্রিয়র। ফলে পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় এ রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিত্বই রইল না।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৪ ০৩:৩২
Share: Save:

সংখ্যায় মাত্র দুই।

তবুও আশায় বুক বেঁধেছিল বঙ্গবাসী। যদি শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিত্বের শিকে ছেঁড়ে বঙ্গের দুই বিজেপি সাংসদের কপালে। পূর্ণমন্ত্রী যদি বা না-ও হয়, তা হলেও যাতে অন্তত একটি প্রতিমন্ত্রীর আসন জোটে রাজ্যের ভাগ্যে!

কিন্তু হতাশই হতে হল রাজ্যবাসীকে। দৌড়ে এগিয়ে থাকলেও নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভায় জায়গা হল না আসানসোলের বাবুল সুপ্রিয়র। ফলে পঞ্চদশ প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভায় এ রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিত্বই রইল না। যদিও বিজেপির একটি সূত্র দাবি করেছে, আগামী এক-দু’মাসের মধ্যে ফের মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করা হবে। তখন আনা হতে পারে বাবুলকে। আপাতত আশা-নিরাশার দোলাচল মিটে যাওয়ায় নিজের কেন্দ্র আসানসোলের উন্নয়নেই মনোযোগ দিতে চাইছেন তিনি।

রাজ্য থেকে দুই সাংসদ এর আগেও পেয়েছে বিজেপি। ১৯৯৯ সালে। সেই দু’জনই, তপন শিকদার এবং সত্যব্রত মুখোপাধ্যায় কিন্তু অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। তখন তৃণমূলের সঙ্গে জোট ছিল বিজেপির। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হয়েছিলেন রেলমন্ত্রী।

এ যাত্রায় মন্ত্রিসভায় বাবুল স্থান পাবেন এমন আশা জাগিয়েছিলেন খোদ নরেন্দ্র মোদীই। আসানসোলে জনসভায় দাঁড়িয়ে মোদীর বক্তব্য ছিল, “মুঝে দিল্লিমে বাবুল চাহিয়ে।” নির্বাচনে হেভিওয়েট তৃণমূল প্রার্থী দোলা সেনকে হারানোর পর তাই পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি কর্মী-সমর্থকরা আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেন, বাবুলকে নিশ্চয়ই মন্ত্রী করা হবে। বাবুল শিবিরের দাবি ছিল, রাজ্যে তৃণমূলের হয়ে লড়াইয়ে নামতে হলে গায়ক-সাংসদকে মন্ত্রী করা উচিত। তবেই রাজ্যবাসীকে বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি।

কেন মন্ত্রী হলেন না বাবুল?

বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, মোদী প্রথম থেকেই চেয়েছিলেন মন্ত্রিসভা হবে ছোট। কার্যত একার হাতে এই দলটি গড়েছেন তিনি। সেখানে গুরুত্ব পেয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার বা কর্নাটকের মতো রাজ্য, যে সব জায়গায় ভাল ফল করেছে বিজেপি। স্বাভাবিক ভাবেই এই সব রাজ্য থেকে বেশি সদস্যকে তিনি জায়গা দিয়েছেন মন্ত্রিসভায়। বিজেপি সূত্রের খবর, এ ক্ষেত্রে আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের সূত্র মেনেই এগোনো হয়েছে। ফর্মুলাটি ছিল, কোনও রাজ্যের প্রতি বারো জন সাংসদ পিছু এক জন পূর্ণমন্ত্রী, আর চার জন সাংসদ পিছু এক জনকে প্রতিমন্ত্রী করা হবে। এই সূত্র মানলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় পশ্চিমবঙ্গের কোনও প্রতিনিধি থাকার কথা নয়।

যদিও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব ভেবেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সেই নিয়মে কিছু ব্যতিক্রম ঘটাবেন মোদী। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। স্বাভাবিক ভাবেই হতাশ বাবুল শিবির। বাবুল অবশ্য বলেছেন, “আসানসোলের মানুষের স্বপ্নপূরণ করাই এখন লক্ষ্য। সেখানকার মানুষের জন্য কাজ শুরু করতে আমি উদগ্রীব হয়ে রয়েছি। আমি জানি, লম্বা দৌড়ে লিফ্টে করে ওঠার চেয়ে সিঁড়ি ভেঙে ওঠা অনেক বেশি কার্যকরী।”

পরে চা চক্রে বাবুলের সঙ্গে লালকৃষ্ণ আডবাণীর পরিচয় করিয়ে দিতে যান রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় স্বয়ং। বলেন, ওকে চেনেন? ভাল গান গায়। আডবাণী বলেন, হ্যাঁ চিনি। একই সঙ্গে প্রবীণ বিজেপি নেতার বক্তব্য, বাবুলের জয়টা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

মোদীর মন্ত্রিসভায় রাজ্যের কোনও প্রতিনিধিত্ব না থাকায় তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির আঁতাঁতের অভিযোগ এনেছেন রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর বক্তব্য, “মমতা ও বিজেপির গোপন আঁতাঁত রয়েছে। আমাদের ধারণা মমতাকে স্বস্তি দিতেই রাজ্য থেকে কাউকে মন্ত্রী করা হয়নি। তা না হলে মমতা ‘হরিদাস পাল’-র শপথ গ্রহণে মুকুল রায় ও অমিত মিত্রকে প্রতিনিধি করে পাঠান!”

মন্ত্রিসভা বহরে বাড়তে পারে, আজ এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন শিবসেনার সাংসদ অনন্ত গীতেও। এনডিএ-র সব থেকে পুরনো শরিক শিবসেনা থেকে এক মাত্র গীতেই এ দিন টিম মোদীতে ঠাঁই পেয়েছেন। তিনি এ দিন বলেন, “আগামী এক মাসের মধ্যে মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ করা হবে। সেখানে শিবসেনার আরও দু’জন অন্তর্ভুক্ত হবেন।” গীতের ওই বক্তব্য শোনার পরে অনেকেই মনে করছেন, প্রথম সম্প্রসারণটা শীঘ্রই করে ফেলতে পারেন মোদী। বিজেপি সূত্রও বলছে, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই মন্ত্রিসভা করার ব্যাপারে চাপ ছিল মোদীর উপর। তড়িঘড়িতে তাই সব প্রান্তের প্রতিনিধিত্ব রাখা হয়তো সম্ভব হয়নি। এ বারে সব দিক বিবেচনা করে খুব দ্রুত মন্ত্রিসভায় সম্প্রসারণ করার কথা ভেবে রেখেছেন শীর্ষ বিজেপি নেতৃত্ব। সেই মন্ত্রিসভায় বাবুল স্থান পান কি না, সেটাই এখন দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

babul bjp anamitra sengupta babul supriyo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE