Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সফি-স্মরণে বিপুল ভিড়, ডাক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের

পরিস্থিতির প্রয়োজনে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির একজোট হওয়ার আহ্বান উঠে এল পিডিএসের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি সৈফুদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভা থেকে। আমৃত্যু যে ঐক্যের স্বপ্ন দেখতেন সফি, যার জন্য আজীবন সচেষ্টও ছিলেন। সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ এবং বরাবর হিংসামুক্ত রাজনীতির প্রবক্তা সফির স্মরণসভার জন্য মৌলালি যুবকেন্দ্রের বিবেকানন্দ প্রেক্ষাগৃহ যে নেহাতই অপ্রতুল, শুক্রবার অবশ্য তা বারেবারেই প্রমাণ করে দিয়েছেন সফি-অনুরাগীরা!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১৮
Share: Save:

পরিস্থিতির প্রয়োজনে গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির একজোট হওয়ার আহ্বান উঠে এল পিডিএসের প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি সৈফুদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভা থেকে। আমৃত্যু যে ঐক্যের স্বপ্ন দেখতেন সফি, যার জন্য আজীবন সচেষ্টও ছিলেন।

সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ এবং বরাবর হিংসামুক্ত রাজনীতির প্রবক্তা সফির স্মরণসভার জন্য মৌলালি যুবকেন্দ্রের বিবেকানন্দ প্রেক্ষাগৃহ যে নেহাতই অপ্রতুল, শুক্রবার অবশ্য তা বারেবারেই প্রমাণ করে দিয়েছেন সফি-অনুরাগীরা! বিভিন্ন জেলা থেকে বহু সাধারণ মানুষ ভিতরে আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছেন। ভিড়ের চাপেই সভা চলাকালীন প্রেক্ষাগৃহের মূল এবং উপরের ব্যালকনির দরজা বন্ধ করা যায়নি! ভিড়ে-ঠাসা এই স্মরণসভা থেকেই বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু থেকে সিপিএমের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা, ক্ষিতি গোস্বামী, জয়ন্ত রায়, মঞ্জুকুমার মজুমদারের মতো বাম শরিক নেতা থেকে অসীম চট্টোপাধ্যায়ের মতো বামফ্রন্টের বাইরের বামপন্থী নেতা, কংগ্রেসের সোমেন মিত্র থেকে ইউডিএফের সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী সকলেই গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পক্ষে সওয়াল করেছেন। সফির মরদেহে শ্রদ্ধা জানাতে এলেও এ দিন স্মরণসভায় অবশ্য তৃণমূলের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। তবে থাকলে তাঁকে কিঞ্চিৎ বিড়ম্বনাতেই পড়তে হতো! কারণ, বাকি বক্তারা সকলেই তৃণমূলের অপশাসনের বিরুদ্ধে জোট বাঁধার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন। শোকবার্তা পাঠিয়ে সব বামপন্থী শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেছেন লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়ও। এ সবের বাইরে সফির সহধর্মিণী রুখসানা ভাগ করে নিয়েছেন তাঁর ব্যক্তিগত জীবনের স্মৃতি।

পিডিএসের রাজ্য সম্পাদক এবং সফির দীর্ঘ দিনের সহযোদ্ধা সমীর পূততুণ্ড এ দিন শুরুতেই বলেছিলেন, “এটা সাধারণ স্মরণসভা নয়। পিডিএসের তরফে যাদের কাছে পৌঁছতে চেয়েছি, সব সময় পারিনি, তাদের সকলকে আজ মোটামুটি এক জায়গায় আনা গিয়েছে।” এই সূত্র ধরেই সফির স্মৃতিচারণ উপলক্ষে ঐক্যের বার্তা দিয়েছেন সব বক্তাই। আবার তার মধ্যেই সিদ্দিকুল্লা মনে করিয়ে দিয়েছেন, “জীবদ্দশায় সফির গুরুত্ব বোঝার চেষ্টা হয়নি। তিনি যে গণতান্ত্রিক পথের কথা বলতেন, কমিউনিস্ট নেতৃত্ব তাকে মর্যাদা দিতে পারেননি।” রেজ্জাক বলেছেন, “গ্রাম থেকে উঠে এসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের দায়িত্ব পেয়েছিলেন সফি। তার পরে সাংসদ হয়ে কমিউনিস্ট পার্টিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই দক্ষতা ও যোগ্যতা তাঁর ছিল। হয়তো বেশি ছিল বলেই পার্টির সঙ্গে বিরোধ বেধেছিল!” বিমানবাবু অবশ্য এ সবের বিশেষ জবাব দেননি। শুধু বক্তৃতার শেষ লগ্নে উল্লেখ করেছেন, “গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পিডিএস এক রকম। আবার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না, এমন শক্তির সঙ্গে একত্রে পিডিএস অন্য রকম!” সিঙ্গুর-পর্বে তৃণমূলের সঙ্গে পিডিএসের এক মঞ্চে থাকার দিকেই ইঙ্গিত ছিল তাঁর।

তৃণমূলের সঙ্গে এক সময় পিডিএস আন্দোলনের শরিক থাকা এবং সফির প্রতি তৃণমূল নেত্রীর শ্রদ্ধা সত্ত্বেও সভায় শাসক দলের কেউ ছিলেন না। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় আসার কথা ছিল। কেন আসেননি, তার জবাবে পার্থবাবু বলেন, “সৈফুদ্দিন আমার অত্যন্ত প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় নেতা। বহু আলোচনায় যেমন তাঁর সঙ্গে থেকেছি, তাঁর শেষ যাত্রায় শ্রদ্ধাও জানিয়েছি। এখানেও আমন্ত্রণ পেলে যেতাম।” তৃণমূল সূত্রের খবর, স্মরণসভার আমন্ত্রণপত্র পার্থবাবুর নামে পাঠানো হয়নি। তা গিয়েছিল দলের রাজ্য সভাপতির কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Saifuddin Choudhury condolence left front
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE