লোকসভা ভোটে রাজ্যে নিজেদের ৬টি আসনের মধ্যে পেয়েছিলেন চার। রণকৌশল আলোচনা করতে ৬ জনকে ডেকে পেলেন দুই! তবু এর মধ্যেও রাজ্যে দলের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে অন্য সব দলের আগেই পুরভোটের প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চাইছেন অধীর চৌধুরী। প্রশ্ন তবু থেকেই যাচ্ছে!
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির আপাতত লক্ষ্য, চিরাচরিত গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বের সমস্যা সরিয়ে রেখে জানুয়ারির পুরভোটের জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করা। ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের পথেই ভোটের প্রস্তুতি চালাতে চাইছেন তিনি। পুজোর মুখেই তাই দলের শীর্ষস্থানীয় ৬ নেতা-নেত্রীকে ডেকে প্রাথমিক আলোচনা সারতে চেয়েছিলেন। আলোচনা হয়েছে। পুরভোটের বোধন শুরু করার নির্দেশও জারি হয়েছে। কিন্তু ৬ জনকে একসঙ্গে পাশে পাননি প্রদেশ সভাপতি। বিধান ভবনে রবিবার এসেছিলেন শুধু সোমেন মিত্র ও মানস ভুঁইয়া।
লোকসভা ভোটের প্রার্থী বাছাইয়ের সময় ‘অপমানিত’ হওয়ার পর থেকে প্রদেশ কংগ্রেসের কোনও অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন না আব্দুল মান্নান। তাঁরই দায়ের-করা মামলার জেরে যে সারদা-কাণ্ডের জল এত দূর গড়িয়েছে, সেই স্বীকৃতিটুকু প্রদেশ কংগ্রেসের কেউ দিতে না চাওয়ায় এখন আরও ক্ষুব্ধ মান্নান। গরহাজিরা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে এ দিন তাঁর তির্যক মন্তব্য, “শুধু এক জন ম্যাডামকেই চিনি সনিয়া গাঁধী! আর কাউকে না!”
আসেননি প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা দাশমুন্সিও। ইদানীং প্রদেশ কংগ্রেসের সংস্রব এড়িয়েই চলছেন। তাঁর জেলা উত্তর দিনাজপুরে জেলা পরিষদের কংগ্রেস সদস্যদের একাংশ যে ভাবে তৃণমূলকে সমর্থন করে পরিষদই শাসক দলের হাতে তুলে দিয়েছেন, তাতে কংগ্রেসের বিড়ম্বনা আরও বেড়েছে। তার পরেও দীপা এ দিন বিধান ভবনমুখী হননি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগও করা যায়নি। কংগ্রেসের পরিষদীয় দলনেতা মহম্মদ সোহরাব শারীরিক কারণে কলকাতায় আসতে পারেননি। আর প্রদীপ ভট্টাচার্য ছিলেন জেলায়। তাঁর বক্তব্য, “বর্ধমানে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি ছিল। আমি অধীরকে বলেই গিয়েছিলাম।” অধীর দমছেন না এই অনুপস্থিতিতে। জানুয়ারিতে যে ১৭টি পুরসভার ভোট হবে, প্রার্থী চিহ্নিত করার কাজ এখন থেকে শুরু করতে বলেছেন।
লোকসভা ভোটের পরেও বিড়ম্বনা বেড়েই চলেছে কংগ্রেসে। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগদানে প্রবণতাও অব্যাহত। সম্প্রতি কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর কাছে গিয়ে ভাঙন নিয়েই উদ্বেগ জানিয়েছিলেন সোমেন-মানস। এবং তা নিয়ে দলের অন্দরে জলঘোলাও কম হয়নি! সেই দু’জনই অধীরের ডাকে সাড়া দেওয়ায় গোষ্ঠী-দ্বন্দ্বে জর্জরিত কংগ্রেসে ‘ইতিবাচক’ বার্তা গেল বলে দলের একাংশ মনে করছে। সোমেনবাবু ও মানসবাবু ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, “আমরা তো দলেরই সৈনিক! প্রদেশ সভাপতি ডাকলে যাব না কেন? দিল্লিতেও আমরা কারও বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে তো যাইনি!”
অধীর এখন তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশিই বিজেপির বিরুদ্ধেও সুর চড়াতে চাইছেন। জামাতের সঙ্গে রাজ্যের শাসক দলের যোগসাজশের কথা বিধানসভায় তুলবেন বলেছেন বিজেপির বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য। এ নিয়ে অধীরের বক্তব্য, “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে জামাতের যোগের অভিযোগ যেমন সামনে আসছে, তেমনই রাজ্যে ভিত্তি বাড়াতে চাইছে আরএসএসের মতো সংগঠন। দু’টোই বিপদ! পশ্চিমবঙ্গে জাতপাতের রাজনীতি ছিল না। এই বিপদের বিরুদ্ধে আমরা লড়ব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy