Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আগে কেন এলেন না, প্রশ্ন বিমানকে

দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পায়ে হেঁটে চষে বেরালেন চৌমণ্ডলপুর আর মাখড়া। ‘সন্ত্রাসে’র চেহারা দেখে বারবার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন পুলিশ-প্রশাসনের উপরে। মাখড়ায় নিহত শেখ তৌসিফ আলির বাড়ি গিয়ে পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিলেন। পরে পাড়ুইয়ের হাটতলায় গিয়ে তোপ দাগলেন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর এই কর্মকাণ্ডের মাঝেই একটি প্রশ্ন তুলে দিলেন চৌমণ্ডলপুরের ফিরদৌসি বিবি।

মাখড়ায় নিহত শেখ তৌসিফের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন বাম প্রতিনিধি দল। —নিজস্ব চিত্র

মাখড়ায় নিহত শেখ তৌসিফের পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন বাম প্রতিনিধি দল। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:০৬
Share: Save:

দু’ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে পায়ে হেঁটে চষে বেরালেন চৌমণ্ডলপুর আর মাখড়া। ‘সন্ত্রাসে’র চেহারা দেখে বারবার ক্ষোভে ফেটে পড়লেন পুলিশ-প্রশাসনের উপরে। মাখড়ায় নিহত শেখ তৌসিফ আলির বাড়ি গিয়ে পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতিও দিলেন। পরে পাড়ুইয়ের হাটতলায় গিয়ে তোপ দাগলেন তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে। কিন্তু বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর এই কর্মকাণ্ডের মাঝেই একটি প্রশ্ন তুলে দিলেন চৌমণ্ডলপুরের ফিরদৌসি বিবি। সোমবার দুপুরে যিনি সরাসরি বিমানবাবুকেই জিজ্ঞাসা করে ফেললেন, “এত দিন আপনারা আসেননি কেন? অনেকেই তো আমাদের কাছে এলেন। আপনারা কেন তাঁদের পরে এলেন?”

দৃশ্যতই মৃদু অস্বস্তিতে পড়লেন বর্ষীয়ান বাম নেতা। তবে, জবাব এলো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। গ্রামের ওই সিপিএম সমর্থককে বিমানবাবু মনে করিয়ে দিলেন, “এটা ভুলে গেলে চলবে না এলাকায় প্রথম এসেছেন বামফ্রন্টের বিধায়ক দল। তখন আর কেউ আসেনি। এসেছিলেন সাংসদ। যাঁর নাম ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৪৪ ধারার যুক্তি দেখিয়ে পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করে গ্রামে ঢুকতে দেয়নি।” ঘটনা হল, তৃণমূল আমলে নিচুতলার বাম কর্মী-সমর্থকদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব আর তেমন ভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়ান না। আক্রান্ত হওয়ার পরে যেখানে বিজেপি-র মতো দুর্বল দলীয় সংগঠনের নেতারাও বারবার এলাকায় ছুটে আসছেন। দলের থেকে প্রয়োজনীয় ‘নিরাপত্তা’ না পেয়ে অনেকেই বিজেপি-র দিকে ঝুঁকেছেন। এ দিন এলাকায় বাম প্রতিনিধি দল নিয়ে গিয়ে বিমানবাবুও তার আঁচ পেয়েছেন। যেখানে বাসিন্দাদের একাংশও সরাসরিই বামফ্রন্ট চেয়ারম্যানকে জানিয়ে দেন, তাঁরা আগে বামফ্রন্টই করতেন। কিন্তু বর্তমানে নিজেদের বাঁচাতে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন।

এ দিন বাম প্রতিনিধি দল অবশ্য দুই গ্রাম ঘুরে বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিনিধি দলের ছিলেন মনোজ ভট্টাচার্য, রবিন দেব, নরেন চট্টোপাধ্যায়, মিহির বায়েন এবং জেলা বামফ্রন্টের নেতারা। চৌমণ্ডলপুরের পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা আজিফা বিবি এবং তাঁর ভাই সাবের আলি বিমানবাবুদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, “আতঙ্কে দিন কাটছে। রবিবার মাঝরাতেও কারা এসে দরজার কড়া নেড়েছে। আমরা ভয়ে কোথাও বের হতে পারছি না।” নবম শ্রেণির পড়ুয়া রেকশোনা খাতুন, পঞ্চম শ্রেণির মাম্পি খাতুনরা জানায়, এই রাজনৈতিক সংঘর্ষের এই আবহে তাদের স্কুলে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। উত্তরপাড়ার বাসিন্দা নাজমুন্নেশা বিবি নিজের ভাঙা বাঁ হাত প্রতিনিধি দলকে দেখিয়ে বলেন, “পুলিশ মেরে হাত ভেঙে দিয়েছে। আমি কী অপরাধ করেছিলাম?” চৌমণ্ডলপুরের আজিথা বিবি, খাইরুন্নেশা বিবি, জরিনা বিবি, মাখড়ায় তৌসিফের বাবা, শেখ আজহার, শেখ উসমানের মতো বহু বাসিন্দা প্রতিনিধি দলের কাছে এলাকায় তৃণমূল ও পুলিশি সন্ত্রাসের অভিযোগ করেন।

বাসিন্দাদের ক্ষোভের কথা শুনে বিমানবাবু বলেন, “আমরা শান্তির বার্তা দিতে এসেছি। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য আপনাদের পাশে আছি। ভবিষ্যতেও থাকবো।” তাঁর অভিযোগ, “পুলিশের একাংশ তৃণমূলের কথায় পরিচালিত হচ্ছে। দলদাসের ভূমিকা পালন করছে পুলিশ।” পরে পুলিশি জুলুমের বিরুদ্ধে পাড়ুইয়ের হাটতলায় বিমানবাবুরা প্রতিবাদ সভাও করেন। প্রায় আড়াই হাজার কর্মী-সমর্থক হাজির ছিলেন। সভায় বাম নেতারা এলাকার নিরীহ গ্রামবাসীর উপর পুলিশি নির্যাতন বন্ধ করে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার দাবি তোলেন। সভায় বিমানবাবু বলেন, “রাজ্যে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বামফ্রন্টের কোনও বিকল্প নেই। বিজেপি সাম্প্রদায়িক শক্তি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকারই তাদের এ রাজ্যে ডেকে এনেছে।” দুই শক্তির বিরুদ্ধে কর্মী-সমর্থকদের একজোট হয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি।

সংঘর্ষ শেষের চৌমণ্ডলপুর-মাখড়ার অবশ্য একটাই দাবি, এলাকায় শান্তি ফিরুক জলদি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

makhra choumandalpur cpm biman basu parui
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE