Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

ইলাহাবাদ লাইনের ছোঁয়ায় অস্বস্তি শপথেও

কালীঘাটের মোকাবিলায় শেষ পর্যন্ত তবে ‘ইলাহাবাদ লাইন’ বিজেপি-র! রাজভবনের অভিভাবক হিসেবে কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর অভিষেকের পর এমন চর্চাই ঘুরপাক খাচ্ছে বিজেপি মহলে। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এ রাজ্যে এখন দলের ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর নাতি সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। তিনি আদতে ইলাহাবাদের সিভিল লাইন্সের বাসিন্দা। এ বার কলকাতার রাজভবনে নরেন্দ্র মোদী পাঠিয়েছেন ইলাহাবাদের ওই সিভিল লাইন্সেই সিদ্ধার্থের প্রতিবেশী ত্রিপাঠীকে!

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৪ ০৩:১৯
Share: Save:

কালীঘাটের মোকাবিলায় শেষ পর্যন্ত তবে ‘ইলাহাবাদ লাইন’ বিজেপি-র!

রাজভবনের অভিভাবক হিসেবে কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর অভিষেকের পর এমন চর্চাই ঘুরপাক খাচ্ছে বিজেপি মহলে। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এ রাজ্যে এখন দলের ভারপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর নাতি সিদ্ধার্থনাথ সিংহ। তিনি আদতে ইলাহাবাদের সিভিল লাইন্সের বাসিন্দা। এ বার কলকাতার রাজভবনে নরেন্দ্র মোদী পাঠিয়েছেন ইলাহাবাদের ওই সিভিল লাইন্সেই সিদ্ধার্থের প্রতিবেশী ত্রিপাঠীকে! এবং দায়িত্ব নিয়ে ত্রিপাঠী কৌশলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে সাংবিধানিক কর্তব্য স্মরণও করিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনাপ্রবাহেই ইলাহাবাদ লাইন-তত্ত্বের জন্ম!

ত্রিপাঠীর শপথে ছিলেন প্রতিবেশী সিদ্ধার্থনাথ। বিজেপি সূত্রের খবর, ২৮ জুলাই সিদ্ধার্থের নেতৃত্বেই তাঁদের প্রতিনিধিদল রাজ্যের ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে দরবার করতে রাজভবনে যাবে। রাজ্যপাল হিসেবে সেটাই হবে ত্রিপাঠীর প্রথম রাজনৈতিক স্মারকলিপি গ্রহণ। সিদ্ধার্থ বলেন, “ঘটনাচক্রে আমরা দু’জনেই ইলাহাবাদের বাসিন্দা। কেশরানাথজির আমন্ত্রণেই এসেছি। এর মধ্যে অন্য কিছু খোঁজার দরকার নেই!” তবে বিজেপি সূত্রের খবর, ত্রিপাঠীকে রাজ্যপাল করে নিয়ে আসার পিছনে সিদ্ধার্থের অবদানও কম নয়।

বিজেপি-র এই ‘ইলাহাবাদ লাইন’ যে মমতা-সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলছে, রাজ্যপালের শপথেই তার ইঙ্গিত মিলেছে। শপথ দেখতে ইলাহাবাদ থেকে শ’দুয়েক নেতা-কর্মী এসেছিলেন। ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ, সংগঠন-সম্পাদক অমলেন্দু চট্টোপাধ্যায় এবং কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ। শপথ শুরুর আগে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যপালের ব্যক্তিগত অতিথিদের সঙ্গে পরিচিত হন। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে বসে থাকা তিন বিজেপি নেতার দিকে ঘুরেও তাকাননি! মুখ্যমন্ত্রী এগিয়ে না আসায় সিদ্ধার্থ-রাহুল-অমলেন্দুরাও নমস্কার পর্যন্ত করেননি। মুখ্যমন্ত্রী যে বিজেপি নেতাদের এড়াতে চাইছেন, শপথ কক্ষেই তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়।

রাজ্যপাল পরে মুখ্যমন্ত্রী-সহ অভ্যাগতদের সঙ্গে চা-চক্রে মিলিত হন। সেখানেও প্রথম সারিতে ছিলেন বিজেপি-র তিন নেতা। কিন্তু কোনও মন্ত্রী তাঁদের পাশে বসার আগ্রহ দেখাননি! জায়গা না পেয়ে বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত এক বার বিজেপি নেতাদের সারিতে গিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু ভুল বুঝতে পেরেই উঠে পড়েন! ওই সারিতেই এক কোণে ছিলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। মণীশবাবুকে উঠতে দেখে তিনিও উঠে যান। অন্য জায়গা না পেয়ে বাধ্য হয়ে মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের সঙ্গে একই চেয়ারে ভাগাভাগি করে বসে পড়েন আশিসবাবু! আর বিজেপি নেতাদের সারিতে চেয়ার খালিই পড়ে থাকে!

চা-চক্রে এর পরে রাজ্যপালের সঙ্গে উপস্থিত হন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, অমিত মিত্র, ফিরহাদ হাকিম-সহ কয়েক জন। তখন আর চেয়ার খালি নেই। বাধ্য হয়েই ওই তিন মন্ত্রী বিজেপি নেতাদের সারিতে একসঙ্গে বসেন। কিন্তু তিন বিজেপি নেতার ঠিক পাশের চেয়ারটি তখনও খালি! শেষ পর্যন্ত দফতর-বিহীন মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র সেখানে বসেন। ছোঁয়াচ এড়াতে তৃণমূল নেতারা এমন আচরণ করলেও রাজ্যপাল চা-চক্রে পৌঁছেই সিদ্ধার্থনাথের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী ইশারায় রাহুলবাবুকে রাজ্যপালের কাছে এসে আলাপ করতে বলেন। পরপর দু’বার মুখ্যমন্ত্রী ডাকায় তিনিও রাজ্যপালের সঙ্গে ছবি তুলতে উঠে আসেন। তবে সে সময় মুখ্যমন্ত্রী উঠে দাঁড়াননি। কথাও বলেননি তাঁদের সঙ্গে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE