Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সন্ন্যাসের ভাবনা কংগ্রেসে বীতশ্রদ্ধ মান্নানের

প্রথমে নারাজ হয়েও দলীয় নেতৃত্বের অনুরোধে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে দলের কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ হয়ে একেবারে রাজনীতি থেকেই সন্ন্যাস নিতে চাইছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান! তাঁর কথায়, “যে ভাবে দলের কাজকর্ম চলছে, সেটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।”

সঞ্জয় সিংহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৪ ০৩:৩০
Share: Save:

প্রথমে নারাজ হয়েও দলীয় নেতৃত্বের অনুরোধে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু লোকসভা ভোটের মুখে দলের কাজকর্মে বীতশ্রদ্ধ হয়ে একেবারে রাজনীতি থেকেই সন্ন্যাস নিতে চাইছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান! তাঁর কথায়, “যে ভাবে দলের কাজকর্ম চলছে, সেটা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।”

শেষ পর্যন্ত মান্নান যদি সত্যিই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, লোকসভা ভোটে একলা লড়তে নামার আগেই ফের ধাক্কা খেতে হবে কংগ্রেসকে।

তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে এ বার গোড়া থেকেই নারাজ ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা। প্রাক্তন বিধায়ক মান্নানও সেই মতের প্রবক্তা। জোট না-থাকায় স্বাভাবিক ভাবেই রাজ্যের ৪২টি আসনেই প্রার্থী দিতে হবে কংগ্রেসকে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী চেয়েছিলেন, কর্মী-সমর্থকদের উদ্বুদ্ধ করতে দলের পরিচিত সব নেতাই প্রার্থী হোন। কিন্তু মান্নান ছাড়াও দুই প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও মানস ভুঁইয়া তাতে রাজি হননি। পরে দিল্লিতে এই নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের লড়ার উপর জোর দেন কংগ্রেস সহ সভাপতি রাহুল গাঁধী। তার পরেও প্রদীপবাবু ও মানসবাবু না-লড়ার ব্যাপারে অনড় থাকলেও প্রার্থী হতে রাজি হন মান্নান। আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা না-হলেও শ্রীরামপুর কেন্দ্র থেকে তাঁর ভোটে দাঁড়ানোর কথা। মান্নানের সমর্থনে শ্রীরামপুরে দেওয়াল লেখাও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেওয়াল লিখন-সহ তাঁর প্রচারের যাবতীয় কাজ বন্ধ রাখতে কর্মীদের বলে দিয়েছেন মান্নান। তাঁর ক্ষোভের কথা বৃহস্পতিবার রাতেই দিল্লির কংগ্রেস নেতৃত্বকে মান্নান ই-মেল করে জানিয়েছেন বলে কংগ্রেস সূত্রের খবর।

দলের উপরে কেন ক্ষুব্ধ মান্নান? আগামী এপ্রিলে রাজনৈতিক জীবনের পঞ্চাশ বছর পূর্ণ করতে চলা প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়কের ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, হুগলি জেলার অন্যান্য আসনে জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব হিসাবে তাঁদের পাঠানো নাম মেনে নেওয়া হয়নি বলেই জানতে পেরেছেন তাঁরা। যেমন হুগলি আসনে পছন্দের প্রার্থী হিসাবে এক আইনজীবীর নাম পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁর বদলে বেছে নেওয়া হয়েছে অন্য এক জনকে। মান্নানের অনুগামীদের ক্ষোভ, বহু প্রলোভনেও তৃণমূলে যাননি এই বর্ষীয়ান নেতা। নানা ধরনের বঞ্চনা সহ্য করেও কংগ্রেসের হয়ে কাজ করে গিয়েছেন। এত সবের পরেও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে, এমন প্রার্থীদের মেনে নিয়ে তাঁদের হয়ে প্রচার চালানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়।

প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব অবশ্য মনে করছেন, দলের উপরে চাপ বাড়াতেই এমন চরম পথের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন মান্নান। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরীর মন্তব্য, “আমাকে ধমকে চমকে কোনও লাভ হবে না। আমি স্বজনপোষণের জন্য দল করি না। ভালবেসে দল করি।” মান্নান শিবিরের তোলা অভিযোগ খারিজ করে অধীরবাবুর বক্তব্য, মান্নানের সুপারিশ মেনে আরামবাগ আসনে তাঁদের পছন্দের লোককে প্রার্থী করা হয়েছে। কিন্তু জেলার সব আসনেই কোনও এক জন ব্যক্তির পছন্দের প্রার্থী দেওয়া সম্ভব নয়।

এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়, তা নিয়ে অনুগামীদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছেন মান্নান। তবে কংগ্রেস ছাড়লেও তৃণমূলে যে যোগ দিচ্ছেন না, তা-ও স্পষ্ট করে দিচ্ছেন তিনি। মান্নান বৃহস্পতিবার বলেছেন, “কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছি। কংগ্রেস ছেড়ে আমি অন্য কোনও

দলে যাব না। রাজনীতি করলে কংগ্রেসেই থাকব। কংগ্রেস ছেড়ে দিলে একেবারেই সরে যাব।” কিন্তু তাঁর এই সিদ্ধান্তকে তো দলের দুর্দিনে পলায়নী মনোবৃত্তির বহিঃপ্রকাশ বলেই দেখা হবে! মান্নানের বক্তব্য, “দুর্দিন বলেই তো নিজে দাঁড়াতে রাজি হয়েছি! কিন্তু যে ভাবে দলের কাজকর্ম চলছে, তা মেনে নেওয়া যাচ্ছে না।”

মান্নান একা নন। একই ধরনের ক্ষোভ নদিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর সিংহ ও তাঁর অনুগামীদেরও। শঙ্কর ভোটে দাঁড়াতে চাননি। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, কৃষ্ণনগর আসনের এ বার যা সমীকরণ, তাতে কংগ্রেস ঠিকমতো প্রার্থী বাছতে পারলে তৃণমূলের যাত্রাভঙ্গ করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যেই এক আইনজীবী ও এক শিক্ষাবিদের নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁদের কাউকেই না দিয়ে এক মহিলা প্রার্থীকে কৃষ্ণনগরে প্রার্থী করা হচ্ছে বলে খবর পেয়েছেন জেলা নেতৃত্ব। শঙ্করের বক্তব্য, “যা হচ্ছে, তা ভাল হচ্ছে না!”

ব্যারাকপুর আসনে কলকাতার এক কাউন্সিলরের বদলে ওই এলাকার এক নেতা, হাওড়ায় গত উপনির্বাচনের প্রার্থীর বদলে যুব কংগ্রেসের এক নেতা প্রার্থী তালিকায় এই সব নাম উঠে আসছে দেখে হতাশ ও ক্ষুব্ধ কংগ্রেসের একাংশ। ফলে ভোটের ময়দানে তো বটেই, ঘরের লড়াইও কঠিন হতে চলেছে কংগ্রেসের জন্য! যদিও প্রদেশের এর শীর্ষ নেতার আশা, “মান্নানদা বিচক্ষণ নেতা। তিনি নিশ্চয়ই ভাবনাচিন্তা না-করে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sanjay singha abdul mannan prodesh congress
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE