Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

কপিলের চিন্তা বাড়িয়ে পদ্ম হাতে মতুয়া কে ডি

‘বড়মা’র সংসারে এক লড়াই শেষ হওয়ার আগেই অন্য লড়াইয়ের শুরু! লোকসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিট পাওয়া নিয়ে ‘বড়মা’ অর্থাৎ মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি ঠাকুরের দুই ছেলে কপিলকৃষ্ণ এবং মঞ্জুলকৃষ্ণের মধ্যে টানাপোড়েন কম হয়নি। তা মেটার পথে বলেই ইঙ্গিত মিলছে।

সীমান্ত মৈত্র
বনগাঁ শেষ আপডেট: ০৯ মার্চ ২০১৪ ০৩:১৮
Share: Save:

‘বড়মা’র সংসারে এক লড়াই শেষ হওয়ার আগেই অন্য লড়াইয়ের শুরু!

লোকসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিট পাওয়া নিয়ে ‘বড়মা’ অর্থাৎ মতুয়া মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি ঠাকুরের দুই ছেলে কপিলকৃষ্ণ এবং মঞ্জুলকৃষ্ণের মধ্যে টানাপোড়েন কম হয়নি। তা মেটার পথে বলেই ইঙ্গিত মিলছে। কিন্তু তার মধ্যেই এ বার বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে পড়লেন ‘সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘ’-এর প্রাক্তন যুগ্ম সম্পাদক কৃষ্ণদাস বিশ্বাস। যিনি কে ডি বিশ্বাস নামেই সকলের কাছেই বেশি পরিচিত। তাঁকে লড়তে হবে ওই কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী কপিলকৃষ্ণের বিরুদ্ধেই। ফলে, বনগাঁর মতুয়া ভোট ভাগাভাগি হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা।

কিন্তু কপিলকৃষ্ণের বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়ে কি কে ডি কার্যত ‘বড়মা’রই বিরোধিতা করলেন না?

বছর তেষট্টির বিজেপি প্রার্থীর বক্তব্য, “বড়মাকে শ্রদ্ধা করি। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই বলে ভোটে দাঁড়িয়েছি।” কপিলকৃষ্ণ বা বীণাপাণিদেবী এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও এলাকার এক সিপিএম নেতার টিপ্পনী, “এ তো মনে হচ্ছে যেন মমতার ভাইপো অভিষেক প্রার্থী হয়েছেন। আর তাঁর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে পড়েছেন মুকুল রায়!”

এ বার ভোটের দামামা বাজার সঙ্গেই বীণাপাণিদেবীর ছোট ছেলে, তথা রাজ্যের ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের প্রতিমন্ত্রী মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর চেয়েছিলেন তাঁর বড় ছেলে সুব্রতকে বনগাঁ কেন্দ্রে তৃণমূলের তরফে প্রার্থী করা হোক। কিন্তু কপিলকৃষ্ণ নিজেই প্রার্থী হতে চান। এ নিয়ে দু’ভাইয়ের সম্পর্কে তিক্ততা বাড়ে। শেষ পর্যন্ত তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ওই কেন্দ্রে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কপিলকৃষ্ণকেই বেছে নেন। মঞ্জুলকৃষ্ণ শনিবারই জানিয়েছেন, দাদার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি মিটে গিয়েছে। তিনি দাদার হয়ে প্রচারে যোগ দেবেন। কিন্তু এ দিনই বিজেপি যে ভাবে তাঁদের প্রার্থী হিসেবে কে ডি-র নাম ঘোষণা করল, তাতে ভোটের আগে ঠাকুর পরিবার খুব নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে না বলেই মনে করছেন অনেকে।

বনগাঁ শহরের ঠাকুরপল্লির বাসিন্দা কে ডি। বিজেপি-র সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কের কথা এর আগে শোনা যায়নি। বেশ কয়েক বছর তিনি মতুয়া মহাসঙ্ঘের যুগ্ম সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি ওই মহাসঙ্ঘের কমিটি ভেঙে দেন সঙ্ঘাধিপতি কপিলকৃষ্ণ।

জেলা কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের টিকিটে ভোটে দাঁড়ানোর জন্য তাঁদের কাছে তদ্বির করেছিলেন কে ডি। জেলা তৃণমূল সূত্রেও খবর, তাদের টিকিটেও ভোটে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু কোনও পক্ষই তাঁকে প্রার্থী হিসেবে মেনে নেয়নি। কিন্তু তিনি বিজেপির প্রার্থী হয়ে দাঁড়ানোয় অবাক অনেকেই।

মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর অবশ্য বলেন, “কে ডি বিশ্বাস ব্যক্তিগত ইচ্ছায় ভোটে দাঁড়িয়েছেন। মতুয়াদের বলব ওঁকে ভোট না দিতে।” কিন্তু ভোট পাওয়া নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী কে ডি। অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতরের অবসরপ্রাপ্ত এই আধিকারিক বলেন, “আমি ২৬ বছর ধরে সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। মতুয়াদের সঙ্গে কাজ করে তাঁদের উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। বনগাঁ লোকসভা কেন্দ্রের মোট ভোটারের ৬১ শতাংশ এই ধর্মের মানুষ। তার প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পাব আমি।”

লড়াইটা জমবে বলেই মনে করছেন ভোটাররা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

motua boroma kapilkrishna kd biswas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE