Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

সামশেরগঞ্জে বিস্ফোরণ, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা

রাতদুপুরে বিকট শব্দ। পড়শিরা বাইরে বেরিয়ে দেখেন, একটি ঘরের পাকা ছাদ ও দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। বুধবার রাতে মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জ বাসুদেবপুর বাজারে পুলিশ ক্যাম্প থেকে ২০ মিটার দূরে সুনীল চৌধুরী নামে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ভাড়া দেওয়া গুদামে ওই বিস্ফোরণ হয়। খাগড়াগড় এবং মালদহের ইংরেজবাজার ও বৈষ্ণবনগরের মতো এ ক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

বিমান হাজরা
সামশেরগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৭ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:২১
Share: Save:

রাতদুপুরে বিকট শব্দ। পড়শিরা বাইরে বেরিয়ে দেখেন, একটি ঘরের পাকা ছাদ ও দেওয়াল ভেঙে পড়েছে। বুধবার রাতে মুর্শিদাবাদের সামসেরগঞ্জ বাসুদেবপুর বাজারে পুলিশ ক্যাম্প থেকে ২০ মিটার দূরে সুনীল চৌধুরী নামে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতার ভাড়া দেওয়া গুদামে ওই বিস্ফোরণ হয়। খাগড়াগড় এবং মালদহের ইংরেজবাজার ও বৈষ্ণবনগরের মতো এ ক্ষেত্রেও প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও। বিস্ফোরণের ৬ ঘন্টা পরে ঘটনাস্থলে যান সামশেরগঞ্জ থানার ওসি। এই সময় পেয়ে তদন্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বহু জিনিসই দুষ্কৃতীরা সরিয়ে ফেলেছে বলে দাবি করেছেন তৃণমূলেরই স্থানীয় নেতারা।

চৌধুরী পরিবারের সকলেই তৃণমূল করলেও স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক ভাল নয়। লোকসভা ভোটের আগে ফরাক্কায় প্রচারে এসে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্য জনসভার মঞ্চ থেকে চৌধুরী পরিবারের সকলকেই দলীয় পদ থেকে অপসারণের নির্দেশ দেন। তাঁদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে তৃণমূলের বিরুদ্ধে প্রচার চালানোর অভিযোগ উঠেছিল। জঙ্গিপুর লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল সভাপতি তথা সুতির বিধায়ক ইমানি বিশ্বাস এ দিন বলেন, “সুনীলবাবু ও তাঁর অনুগামীরা তৃণমূলের কর্মী। তবে সুনীলবাবু কোনও পদে নেই। তাঁর বাড়িতেই মজুত রাখা বোমা ফেটেছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সুনীলবাবু বছর কয়েক আগে ওই ঘরটি ভাড়া দিয়েছিলেন এক বিড়ি কোম্পানিকে। যদিও ঘরের চাবি থাকে সুনীলবাবুর কাছেই। সন্ধ্যার পর ওই ঘরটি চৌধুরী পরিবার তাঁদের গাড়ি রাখতে ব্যবহার করত। পাশেই রয়েছে পুলিশ ক্যাম্প, তৃণমূলের একটি কার্যালয়ও।

সুনীলবাবুর ভাই দীনেশ চৌধুরী বলেন, “বাইরে থেকে দাদার বাড়ির দিকে দুষ্কৃতীরা শক্তিশালী সকেট বোমা ছোড়ে। অন্ধকারে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে কারখানার দেওয়ালে লেগে এই বিস্ফোরণ ঘটেছে।” তাঁর দাবি, “তৃণমূলেরই কিছু নেতাদের ইন্ধনে দুষ্কৃতীরা এই কাজ করেছে।” জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকরও জানান , বাইরে থেকে ছোড়া বোমাতেই এই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে তাঁদের মনে হচ্ছে। তিনি জানান, পুলিশ অবশ্য সব দিকই খতিয়ে দেখছে।

যদিও সামশেরগঞ্জ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, “ওই গুদামেই মজুত ছিল প্রচুর বোমা। তা ফেটেই এই বিপত্তি।” কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি আমিরুল ইসলামের বক্তব্য, “চৌধুরীদের আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই বোমা তৈরির জন্য ওই ঘর ব্যবহার করত। তা ফেটে গিয়েছে।” তাঁর দাবি, পুলিশ এখন এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সামশেরগঞ্জের বিধায়ক সিপিএমের তোয়াব আলিও বলেন, “পাশেই পুলিশ ক্যাম্প। তবু তদন্তে গাফিলতি রয়েছে পুলিশের।”

বুধবার রাতের ওই বিস্ফোরণের পরে সামশেরগঞ্জ থানায় প্রথম খবর দেন যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সামিউল হক। তিনিও জানান, রাত প্রায় আড়াইটের সময় বিকট শব্দে ঘুম থেকে উঠে দেখেন পাশের রেললাইন দিয়ে কয়েকজন দৌড়ে পালাচ্ছে। তিনি বলেন, “গলি দিয়েও দু’জন লোককে যেতে দেখেছি।” তবে বিরোধীদের অভিযোগ, শাসক দলের ছত্রছায়ায় থাকায় পুলিশও চৌধুরী পরিবারের পাশেই থেকেছে।

ওই রাতেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বাসন্তীর ৪ নম্বর গরানবোস এলাকাতেও মজুত বোমা সরাতে গিয়ে বিস্ফোরণে এক দুষ্কৃতীর মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। জগদীশ মণ্ডল নামে ওই ব্যক্তির দেহের সন্ধান এখনও পায়নি পুলিশ। এক্ষেত্রেও অভিযোগের তির মধু মণ্ডল নামে তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতার দিকে। মধুবাবু সহ তিন জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে সুয়ো মোটো তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের দাবি, মধুবাবুর নির্দেশেই বোমা এক জায়গা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রাত ৮টা নাগাদ বিস্ফোরণ ঘটে। পুলিশ পৌঁছনোর আগেই জখম জগদীশকে নিয়ে যাওয়া হয় বাঙুরের কোনও এক চিকিৎসালয়ে। পুলিশ জানিয়েছে, সেখানেই মারা যান ওই যুবক। দেহ কোথায় লোপাট করা হল, তার খোঁজ করা হচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় জমি দখল নিয়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে গণ্ডগোলের জন্যই মধুবাবুর নির্দেশে বোমা মজুত করা হচ্ছিল। গোসাবার তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বলেন, “মধু আমাদের দলের লোক ঠিকই, কিন্তু ও ঘটনায় জড়িত নয়। পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করে দেখুক।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Samsherganj blast biman hazra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE