Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

কোরপান খুনে জবানবন্দি দিতে রাজি ধৃত পড়ুয়া

বিরোধিতা করেছিলেন অভিযুক্তের আইনজীবী। কিন্তু অভিযুক্তই একান্তে বিচারককে জানালেন, তিনি গোপন জবানবন্দি দিতে চান। তার পরেই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ছাত্রাবাসে পিটিয়ে যুবক খুনের ঘটনায় ধৃত ছাত্র জসিমুদ্দিনের গোপন জবানবন্দি দেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করলেন বিচারক।

কোরপান শাহ

কোরপান শাহ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:২০
Share: Save:

বিরোধিতা করেছিলেন অভিযুক্তের আইনজীবী। কিন্তু অভিযুক্তই একান্তে বিচারককে জানালেন, তিনি গোপন জবানবন্দি দিতে চান। তার পরেই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ছাত্রাবাসে পিটিয়ে যুবক খুনের ঘটনায় ধৃত ছাত্র জসিমুদ্দিনের গোপন জবানবন্দি দেওয়ার আবেদন মঞ্জুর করলেন বিচারক।

বুধবার এই জবানবন্দি-নাট্যের সাক্ষী থাকল শিয়ালদহ আদালত। সরকারি আইনজীবী প্রথমে আদালতে আবেদন জানান, কোরপান শাহ নামে এক যুবককে নীলরতনের ছাত্রাবাসে কী ভাবে পিটিয়ে মারা হয়েছিল, সেই ব্যাপারে ধৃত ডাক্তারি পড়ুয়া জসিমুদ্দিনের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হোক। ধৃতের আইনজীবী পার্থ সাহা সঙ্গে সঙ্গে এই দাবির বিরোধিতা করেন। তিনি আদালতে অভিযোগ করেন, পুলিশ জোর করে তাঁর মক্কেলের গোপন জবানবন্দি নিতে চাইছে। ধৃত ডাক্তারি পড়ুয়া কী চান, নিভৃতে তা জেনে নেওয়ার জন্য তাঁকে নিজের কামরায় ডেকে পাঠান বিচারক। সেখানে বিচারকের প্রশ্নের জবাবে গোপন জবানবন্দি দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি জানান অভিযুক্ত ছাত্র।

পুলিশি হাজতের মেয়াদ শেষে এ দিন জসিমুদ্দিনকে আদালতে তোলা হয়েছিল। বিচারক তাঁকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ঘটনার এক মাস পরে, ১৬ ডিসেম্বর জসিমুদ্দিনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যে ছাত্রাবাসের ক্যান্টিনের দুই কর্মীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই দুই ক্যান্টিনকর্মী এখন পুলিশি হাজতে।

তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, পিটিয়ে হত্যার ওই ঘটনায় অভিযুক্ত সিনিয়র ছাত্রদের চিহ্নিত করা হয়েছে। লালবাজারের এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, “আমরা প্রায় ১৫০ জন ছাত্র-প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাঁদের মধ্যে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত হস্টেলের সিনিয়র ছাত্রেরাও ছিলেন। প্রাথমিক ভাবে তাঁরা ঘটনার সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন।” অন্যান্য অভিযুক্তকেও গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? পুলিশ জানায়, ওই সিনিয়র ছাত্রদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ হাতে এলে তবেই তাঁদের গ্রেফতার করা হবে। এ ব্যাপারে জসিমুদ্দিনের জবানবন্দি তাঁদের কাজে আসবে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।

একটি মোবাইল ফোন চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৬ নভেম্বর ভোরে নীলরতনের ছাত্রাবাসের মধ্যে মনোরোগী কোরপানকে পিটিয়ে মারা হয়। লালবাজার সূত্রের খবর, ওই খুনের তদন্তভার সোমবার এন্টালি থানার হাত থেকে গোয়েন্দা বিভাগের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দায়িত্ব নিয়েই ১০ সদস্যের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) তৈরি করে ফেলেছে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগ।

তদন্তকারীরা জানান, ঘটনাস্থলে পাওয়া পাঁচটি বাঁশের টুকরো এবং একটি কাঠের টুকরো ফরেন্সিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ওই কাঠ এবং বাঁশের টুকরো দিয়েই কোরপানকে পিটিয়ে মারা হয়েছিল তদন্তকারী অফিসারদের ধারণা। ওই ঘটনায় এ-পর্যন্ত এক ডাক্তারি পড়ুয়া-সহ তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরার মুখে ধৃতেরা জানিয়েছেন, সে-রাতে কোরপানকে মারধরের ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হস্টেলের বেশ কয়েক জন সিনিয়র ছাত্র। তাঁদের চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানাচ্ছে লালবাজার। কিন্তু তদন্তকারীরা বুধবার পর্যন্ত তাঁদের ধরার চেষ্টা করেননি বলে পুলিশেরই একাংশের অভিযোগ।

বস্তুত, বিশেষ তদন্তকারী দল গড়া হলেও অভিযুক্ত সিনিয়র ছাত্রদের শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পুলিশের নিচু তলার একাংশ। এই সংশয়ের কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, নীলরতন কাণ্ডে এ বার গ্রেফতার করতে হবে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র-সহ কিছু হবু চিকিৎসককে। কিন্তু তাঁরা হাসপাতালে শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তাই তদন্তকারীরা তাঁদের ছোঁবেন কি না, প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এই অবস্থায় জসিমুদ্দিনের গোপন জবানবন্দি কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে বলে পুলিশের একাংশের ধারণা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

korpan shah NRS hospital junior doctor jasimuddin
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE