Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

সুমন-কাণ্ডের ছায়ায় দফতর পাল্টাল ব্রাত্যের, আস্থা পার্থয়

ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ব্রাত্য বসুর কাজে তিনি অখুশি নন। সেই ব্রাত্যকেই আচমকা শিক্ষা দফতর থেকে সরিয়ে পর্যটনমন্ত্রী করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! রাজ্যের নতুন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর তা করা হল স্বস্তিকা-কাণ্ডে পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়কে পুলিশি হেনস্থার এক দিনের মধ্যে। মুখে কেউ স্বীকার না-করলেও তৃণমূল সূত্রের খবর, সুমনকে যে ভাবে পুলিশ হয়রান করেছে, ব্রাত্য তা পছন্দ করেননি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৪ ০৩:০৯
Share: Save:

ঘনিষ্ঠ মহলে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে ব্রাত্য বসুর কাজে তিনি অখুশি নন। সেই ব্রাত্যকেই আচমকা শিক্ষা দফতর থেকে সরিয়ে পর্যটনমন্ত্রী করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়! রাজ্যের নতুন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

আর তা করা হল স্বস্তিকা-কাণ্ডে পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়কে পুলিশি হেনস্থার এক দিনের মধ্যে।

মুখে কেউ স্বীকার না-করলেও তৃণমূল সূত্রের খবর, সুমনকে যে ভাবে পুলিশ হয়রান করেছে, ব্রাত্য তা পছন্দ করেননি। মন্ত্রী ছাড়াও নাট্যব্যক্তিত্ব হিসেবে ব্রাত্য সুপরিচিত নাম। তিনি বিষয়টিকে এক শিল্পীর চোখে আর এক শিল্পীর হেনস্থা হিসেবেই দেখেছেন, যা দল ও সরকারের শীর্ষ স্তরের পছন্দ হয়নি। মঙ্গলবার ব্রাত্যকে তুলনায় কম গুরুত্বের পর্যটনমন্ত্রী করার মধ্যে শীর্ষ নেতৃত্বের সেই বার্তাই স্পষ্ট হল বলে ধারণা দলের অন্দরে।

কিন্তু এই রদবদল যদি ব্রাত্যর বিরুদ্ধে ‘শাস্তিমূলক’ ব্যবস্থাই হয়, তা হলে তাঁকে মন্ত্রিত্ব থেকে একেবারে সরিয়ে দেওয়া হল না কেন?

তৃণমূলের একাংশের ব্যাখ্যা, সে ক্ষেত্রে বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা বেশি হতো। সেই পরিস্থিতি এড়াতেই অনেকটা লাঠি না ভেঙে সাপ মারার মতো করে ব্রাত্যকে পর্যটন দফতরে এনে বসানো হয়েছে বলে ওঁদের দাবি। ব্রাত্যবাবু নিজে কী বলেন?

তিনি অবশ্য এ জাতীয় যাবতীয় জল্পনা নস্যাৎ করেছেন। মঙ্গলবার ব্রাত্য বলেন, “কে কী বলছেন, জানি না। কিছু দিন ধরেই চাইছিলাম, শিক্ষা দফতর থেকে আমাকে অব্যাহতি দিয়ে অপেক্ষাকৃত হালকা কোনও দায়িত্ব দেওয়া হোক। মুখ্যমন্ত্রী আমার আর্জি মঞ্জুর করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ।”

অন্য দিকে শিক্ষামন্ত্রীর চেয়ারে পার্থবাবুকে বসানোর মধ্যেও রাজনৈতিক ছক খুঁজে পাচ্ছে অভিজ্ঞ মহল। মাস চারেক আগে পার্থবাবুর কাছ থেকে শিল্প দফতর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী তা তুলে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের হাতে। পার্থবাবুর অধীনে থেকে যায় শুধু পরিষদীয় ও তথ্যপ্রযুক্তি। দলের বিভিন্ন স্তরে গুঞ্জন ওঠে, পার্থবাবুর প্রতি ‘অনাস্থা’ থেকেই এই সিদ্ধান্ত। তবে এ বার শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতরের ভার পেয়ে তাঁর ‘শাপমোচন’ হল বলে মনে করা হচ্ছে। কেন এই ‘পুরস্কার’?

তৃণমূল-সূত্রের দাবি, এর প্রথম কারণ হল পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ‘অপ্রতিবাদী’ চরিত্র। দ্বিতীয়ত, লোকসভা নির্বাচনে ডায়মন্ড হারবার কেন্দ্রে মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জেতাতে তাঁর অক্লান্ত উদ্যোগ। উপরন্তু মমতার বিধানসভা এলাকায় (ভবানীপুর) যখন তৃণমূলকে ছাপিয়ে বিজেপি সর্বাধিক ভোট পেয়েছে, তখন পার্থবাবু তাঁর এলাকায় (বেহালা পশ্চিম) দলীয় প্রার্থীকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে দিয়েছেন। এ সব সাফল্যের সঙ্গে জুড়েছে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়টি। দলের একাংশের বক্তব্য, ২০১৬-এর আগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে অন্তত ৩৫ হাজার শিক্ষক নেওয়ার কথা। তা করার জন্য দলের কাছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দক্ষতা ও বিশ্বস্ততা ব্রাত্য বসুর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ, পার্থবাবু তৃণমূলের অন্যতম শীর্ষ নেতা।

শিল্প দফতর হাতছাড়া হওয়ার পরেও পার্থবাবু মুখ খোলেননি।

এখন নতুন পদপ্রাপ্তির পরে তাঁর কী প্রতিক্রিয়া?

এ দিন পার্থবাবুর মন্তব্য, “শিক্ষা দফতরে ব্রাত্য অনেক ভাল কাজ করেছেন। আমি সেই কাজ ধরে রাখব। নতুন সম্ভাবনার দিকগুলিও খতিয়ে দেখতে হবে।” প্রসঙ্গত, এ দিনই নবান্নে পার্থবাবু ও ব্রাত্যবাবুকে এক সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী দীর্ঘ বৈঠক করেন। সেখানে পুরনো মন্ত্রীর কাজ ও নতুন মন্ত্রীর কর্তব্য নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে।

শিক্ষা দফতরের দায়িত্ব পাওয়া পার্থবাবুর কাছ থেকে অবশ্য এ দিন তথ্যপ্রযুক্তি দফতরটি নিয়ে নেওয়া হয়েছে। শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রই এখন এই দফতরটি সামলাবেন। এ দিন রাজ্য মন্ত্রিসভায় আরও কিছু রদবদল ঘটিয়েছেন মমতা। পর্যটন থেকে কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণে। ওই দফতরটি যাঁর হাতে ছিল, সেই সুব্রত সাহাকে দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে রাখা হয়েছে। সাবিত্রী মিত্রের কাছ থেকে নারী ও সমাজকল্যাণ দফতর নিয়ে দেওয়া হয়েছে শশী পাঁজাকে। সুব্রতর মতো সাবিত্রীও আপাতত দফতরহীন। এই রদবদলগুলোও রাজনৈতিক ভাবে কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়। কী রকম?

দলীয় সূত্রের ব্যাখ্যা: লোকসভা নির্বাচনের পরে মালদহ ও মুর্শিদাবাদে তৃণমূলের বিপর্যয় নিয়ে দলের মধ্যে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছে, মালদহের কৃষ্ণেন্দু-সাবিত্রী এবং মুর্শিদাবাদের সুব্রত তার শরিক। মালদহে কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে সাবিত্রীর বিবাদ রাস্তায় নেমে এসেছিল। দুই মন্ত্রী পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু করেন। আর এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের সিদ্ধান্তের ফলে কৃষ্ণেন্দুর প্রতি কিছুটা হলেও পাল্লা ভারী রইল বলে দলের একাংশের অভিমত। যার পিছনে এলাকায় কৃষ্ণেন্দুর সাংগঠনিক শক্তি ও অন্যান্য জোরের ভূমিকা দেখছে এই মহল। কৃষ্ণেন্দুবাবু এ দিন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা আমি নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের চেষ্টা করব।” অন্য দিকে সাবিত্রীর প্রতিক্রিয়া, “দিদি যা বলবেন, তা-ই করব। দল করি, দলের কথাই মেনে চলব।”

পাশাপাশি বহরমপুর লোকসভায় রেকর্ড ভোটে তৃণমূল প্রার্থীর পরাজয়ের পরে সেখানে দলের ভিতর থেকেই ‘সাংগঠনিক অসহযোগিতা’র নানা অভিযোগ উঠেছে। তিরের মুখে পড়েছেন জেলার একমাত্র মন্ত্রী সুব্রতবাবু। তৃণমূলের প্রাক্তন মন্ত্রী হুমায়ুন কবীর খোলাখুলি আঙুল তুলেছেন তাঁর দিকে। মন্ত্রিত্ব খোয়ানোর পরে সুব্রতবাবু অবশ্য বলেন, “মন্ত্রিত্ব নয়, দল আগে। তাই দল যা ভাল বুঝেছে, তা-ই করেছে।”

হুমায়ুনকে অবশ্য দল এখনও কিছু বলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bratya basu partha chattyopadhyay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE