মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ, তৃণমূলের সভায় পরিচিত মুখ চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্ন ভট্টাচার্যকে এ বার নোটিস পাঠাল সিবিআই।
শুভাপ্রসন্নবাবুর কাছ থেকে একটি চালু না-হওয়া বৈদ্যুতিন চ্যানেল কিনেছিলেন সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন। কত টাকায় লেনদেন হয়েছিল, কী ভাবে চুক্তি হয়েছিল, সে সব নিয়ে এ দিন সবিস্তার নথি জমা দিতে বলা হয়েছে শুভাপ্রসন্নবাবুকে। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই ওই চিত্রশিল্পীকে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-র তদন্তকারীরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। এ বার ওই চ্যানেল-সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য হাতে পেতে চাইছে সিবিআই। জানা গিয়েছে, ৯ অক্টোবরের মধ্যে ওই চিত্রশিল্পীকে নথি জমা দেওয়ার জন্য নোটিস পাঠানো হয়েছে।
সারদার বিপর্যয়ের জন্য মিডিয়া ব্যবসায় লগ্নিকেই অন্যতম কারণ বলে দাবি করেছিলেন সুদীপ্ত সেন। বলেছিলেন, মিডিয়ায় টাকা ঢালতে গিয়েই তাঁর সর্বনাশ হয়েছে। সেই মিডিয়া ব্যবসা নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত করছে ইডি। এ বার সারদার মিডিয়া ব্যবসায় ‘বৃহত্তর ষড়যন্ত্রে’র খোঁজ শুরু করল সিবিআই। সে সূত্র ধরে পুজো শেষ হতে না হতেই ওই চিত্রশিল্পীর সঙ্গে রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানকেও সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি সংক্রান্ত নথি জমা করতে নোটিস পাঠান হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
অভিযোগ, সুদীপ্তকে চাপ দিয়ে একের পর এক চ্যানেল ও সংবাদপত্র কিনিয়েছিলেন সমাজের কিছু ‘প্রভাবশালী’ ব্যক্তি। পরে সেই সংবাদমাধ্যম নিজেদের সুবিধের জন্য ব্যবহার করতেন তাঁরা। অভিযোগ, কেনার সময়ে সংবাদমাধ্যম বা সংবাদপত্রের যে বাজারদর ছিল, চাপ দিয়ে সুদীপ্তকে তার চেয়ে অনেক বেশি টাকায় সেগুলো কিনতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাতে ‘প্রভাবশালী’দের ঘনিষ্ঠরা লোকসানে চলা ব্যবসা বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন। তদন্তকারীদের মতে, শুভাপ্রসন্নবাবুর নামও রয়েছে সেই লাভবানদের তালিকায়। নিউটাউন-ভাঙড় এলাকায় শিল্পী যে কর্মশালাটি গড়ে তুলেছেন, তার পিছনেও সারদার লগ্নি হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেলের ‘যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্য’ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন শুভাপ্রসন্নবাবু।
এই ব্যাপারে এ দিন চিত্রশিল্পীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে এক মহিলা ফোন ধরেন। পরিচয় শোনার পরে তিনি জানান, কী বিষয়ে চিত্রশিল্পীকে জিজ্ঞাসা করা হবে তা বলতে হবে। নোটিসের কথা উল্লেখ করা হলে তিনি বলেন, “আপনারা যা খবর পাচ্ছেন তা লিখে দিন, সিবিআই ডাকলে আমরা যাব।” সিবিআই কি সত্যি চিত্রশিল্পীকে ডেকে পাঠিয়েছে? মহিলার জবাব, “বলব না।”
তদন্তে নেমে সারদার আরও একটি চুক্তি নজরে এসেছে সিবিআইয়ের। সে সূত্রেই রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ আহমেদ হাসান ইমরানের কাছে নথি চাওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তিনি ‘কলম’ পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। পত্রিকাটি কয়েক কোটি টাকায় কেনেন সুদীপ্ত সেন। এর আগে ইডি ওই সাংসদকে দু’বার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ইমরানের সঙ্গেও এ দিন ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
এ দিকে, একটি সিমেন্ট কারখানা সংক্রান্ত নথিপত্র চেয়ে ৪ অক্টোবর নোটিস পাঠানো হয়েছে রাজ্যের বস্ত্রমন্ত্রী শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায়কেও। বস্ত্রমন্ত্রীর তরফে অবশ্য সিবিআইয়ের ওই নোটিসের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, শ্যামাপদবাবুর কাছ থেকে ২০০৯ সালে সুদীপ্ত সেন বাঁকুড়ায় ১৮ বিঘা জমি-সহ একটি সিমেন্ট কারখানা কিনেছিলেন। সূত্রের খবর, সিবিআইয়ের জেরায় সুদীপ্ত জানিয়েছিলেন, প্রায় চার কোটি টাকায় ওই কারখানা কিনেছিলেন তিনি। ইতিমধ্যে ইডি এই বিষয়ে বস্ত্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বস্ত্রমন্ত্রীর দাবি ছিল, তিনি ২ কোটি ৮১ লক্ষ টাকায় কারখানা বিক্রি করেছিলেন। শুধু কারখানা বিক্রির অঙ্কেই অসঙ্গতি নয়, জমির প্রশ্নেও বেশ কিছু জায়গায় অসঙ্গতি খুঁজে পেয়েছিলেন ইডির তদন্তকারীরা। এ বার সিবিআই তদন্তে নেমে সেই ধোঁয়াশা দূর করতে চুক্তি সংক্রান্ত নথি চেয়েছে বলে সূত্রের দাবি। যদিও রবিবার বিকেলে শ্যামাপদবাবু ফোনে জানান, এই ধরনের কোনও নোটিস তিনি পাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy