Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পুজোর আগে কলকাতায় যায় কওসর, কবুল জেরায়

পুজোর তিন দিন আগে কলকাতায় গিয়েছিল কওসর। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে ধৃত রাজিয়া বিবি জেরায় এমনটাই জানিয়েছে বলে সিআইডি-র একটি সূত্রের দাবি। বৃহস্পতিবার কলকাতার ভবানী ভবনে টানা জেরার সময়েই রাজিয়া এ কথা কবুল করে বলে সূত্রটি দাবি করেছে। যদিও ঠিক কেন কওসর বর্ধমান থেকে কলকাতায় গেল, তা স্পষ্ট হয়নি।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১১
Share: Save:

পুজোর তিন দিন আগে কলকাতায় গিয়েছিল কওসর। খাগড়াগড় বিস্ফোরণে ধৃত রাজিয়া বিবি জেরায় এমনটাই জানিয়েছে বলে সিআইডি-র একটি সূত্রের দাবি।

বৃহস্পতিবার কলকাতার ভবানী ভবনে টানা জেরার সময়েই রাজিয়া এ কথা কবুল করে বলে সূত্রটি দাবি করেছে। যদিও ঠিক কেন কওসর বর্ধমান থেকে কলকাতায় গেল, তা স্পষ্ট হয়নি। সিআইডি অফিসারদের একাংশের ধারণা, সম্ভবত দু’টি লক্ষ্য ছিল কওসরের। এক, পুজোয় কোথায় কেমন ভিড় হয়, নিরাপত্তার ব্যবস্থা কতটা আঁটোসাটো, মণ্ডপে ঢোকা-বেরনোর রাস্তা কেমন, সে সব খুঁটিয়ে দেখে আসা। দুই, বিস্ফোরক তৈরির জন্য রাসায়নিক কেনা।

সিআইডি সূত্রের খবর, মাস দুয়েক ধরে অন্তত সাত-আট বার বর্ধমানের খাগড়াগড় থেকে আইইডি (ইম্প্রোভাইজ্ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) পাচার করেছে কওসর। প্রতি বারই দু’বস্তা করে পাচার হয়েছে। প্রতিটি বস্তায় ৫০-৫৫টা আইইডি ধরে। অর্থাৎ অন্তত সাতশো আইইডি শুধু খাগড়াগড় থেকেই পাচার করা হয়েছে। বিস্ফোরণের আগের দিন, সপ্তমীতে শেষ বার বস্তা নিয়ে গিয়েছিল কওসর। তবে কলকাতার এক বা একাধিক পুজোমণ্ডপ জঙ্গিদের লক্ষ্য ছিল কি না, তা নির্দিষ্ট করে জানা যায়নি।

কওসর এবং তার মতো জঙ্গি কার্যকলাপে যুক্ত আরও কিছু লোকজনের খোঁজে এ দিন নানা জায়গায় হানা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। বাবুরবাগের যে বাড়িতে কওসরের মূল ডেরা ছিল বলে গোয়েন্দারা মনে করছেন, হবিবুর নামে বীরভূমের এক যুবককে দিয়ে সেটি ভাড়া নেওয়ানো হয়েছিল বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন। কিন্তু হবিবুর কে, সে ব্যাপারে এখনও নিশ্চিত হতে পারেননি তাঁরা। বীরভূমে কীর্ণাহারে কওসরের শ্বশুরবাড়ি। তার শ্যালক কদর শেখ নাম ভাঁড়িয়ে হবিবুর সেজে বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল কি না, তা জানার চেষ্টা চলছে।

বাবুরবাগের ওই বাড়িটির মালিক হাজি রেজ্জাক মোল্লা ও খাগড়াগড়ের বাড়ির মালিক হাসান চৌধুরীকে এ দিন বর্ধমান থানায় ডেকে পাঠানো হয়। তাদের বর্ণনা শুনে হবিবুরের স্কেচ আঁকানো হয়েছে বলে সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জেনেছেন, স্থানীয় কিছু মোয়াজ্জেমের সঙ্গে পরিচিতির কথা বলেই দু’টি বাড়ি ভাড়া নিয়েছিল কওসরেরা। হাসান চৌধুরী বলেন, “ঈদ-উল-ফিতরের পরে এক সন্ধ্যায় শাকিল বাড়ি ভাড়া নেওয়ার আর্জি নিয়ে আমার কাছে আসে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তোমায় আমার কাছে কে পাঠিয়েছে? সে জানায়, মোয়াজ্জেমদের কাছ থেকে সন্ধান পেয়েছে। তাকে অবিশ্বাস করার কারণ দেখিনি।” যদিও স্থানীয় মোয়াজ্জেমরা তা অস্বীকার করেছেন বলে সিআইডি-র একটি সূত্রের খবর।

স্পেশ্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্ট সব্যসাচীরমণ মিশ্রের নেতৃত্বে সিআইডি-র একটি দল এ দিন খাগড়াগড়ে গিয়ে পুরো এলাকা ঘুরে দেখে। কিছু পাড়াপড়শিকে ডেকে দোতলার জঙ্গি বাসিন্দাদের কথা জানতে চাওয়া হয়। পরে বাবুরবাগের বাড়ির দোতলায় উঠে খুঁটিনাটি পরীক্ষা করেন অফিসারেরা। এলাকায় ঘুরে তাঁরা শোনেন, নীল-কালো একটি মোটরবাইক ওই বাড়িতে যাওয়া-আসা করত, সেটির নম্বর ছিল নদিয়ার। আর একটি লাল মোটরবাইকও আসত, সেটিতে কোনও নম্বর ছিল না। যে দুই যুবক মোটরবাইক নিয়ে আসত তাদের এক জন শ্যামবর্ণ, দাড়ি ছিল। অন্য জনের ভাল চেহারা, রং ফরসা। দু’জনেই বেশির ভাগ সময়ে হেলমেট পরে থাকত। যাঁর কাছ থেকে মুদির জিনিসপত্র কিনত ওই দু’জন, সেই দোকানদারের থেকেও কিছু তথ্য সিআইডি সংগ্রহ করে।

বুধবার মাঝরাতেও বর্ধমান শহরে গোদা এবং লাকুরডি এলাকায় দু’টি জায়গায় তল্লাশি চালানো হয়েছিল। মঙ্গলকোটের শিমুলিয়ায় যেখানে রাজিয়া এবং আলিমা জঙ্গি প্রশিক্ষণ দিতে যেত বলে খবর, বুধবার রাতে সেখান থেকেও এক জনকে আটক করে সিআইডি। তবে ইউসুফ নামে সেখানকার যে মাদ্রাসা-শিক্ষককে খোঁজা হচ্ছে, এ দিনও তার হদিস মেলেনি। নদিয়ার করিমপুর এলাকার বারবাকপুরেও এক মাদ্রাসায় তিনি পড়াতেন এবং আলিমাদের সূত্র ধরেই শিমুলিয়ার এসেছিলেন বলে গোয়েন্দারা জেনেছেন।

বিস্ফোরণে হত শাকিলের মোবাইলের কললিস্টে বর্ধমানের বাদশাহি রোডের বাসিন্দা রেজাউল শেখের নাম পাওয়া গিয়েছিল। ধৃত দুই মহিলার অন্যতম আলিমাকে জেরা করে সিআইডি জানতে পারে, তাদের আদি বাড়ি মুর্শিদাবাদের রঘুনাথগঞ্জে খোদারামপুরের ভূতবাগানপল্লিতে। রেজাউল ও তার বাবা মন্টু শেখ ওরফে আব্দুল লতিফের খোঁজে সেই বাড়িতেও বুধবার রাতে হানা দেয় সিআইডি-র একটি দল। রেজাউলের এক ভাই রঘুনাথগঞ্জ থানায় সিভিক ভলান্টিয়ার হিসেবে কাজ করেন।

তিনি বলেন, “আমার মা ও ভাইয়েরা ওর সম্পর্কে যা জানত সব সিআইডি-কে বলেছে।”

খাগড়াগড়-কাণ্ডে মোবাইলের সূত্র ধরেই উঠে এসেছে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের রাজমিস্ত্রি আব্দুল মোমিনের নাম। বুধবার রাতে সেই বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়। মোমিনের স্ত্রী-পুত্র সেখানে থাকলেও তার খোঁজ মেলেনি। ওই রাতেই সিআইডি বহরমপুরের ইন্দ্রপ্রস্থ এলাকায় একটি বাড়িতেও তল্লাশি চালায়। এ দিন সকালে ফের সিআইডি-র একটি দল মোমিনের বাড়িতে গিয়ে দেখে, তালা ঝুলছে। মোমিনের এক শ্যালক খাগড়াগড়ের মাদ্রাসায় পড়াতেন। খাগড়াগড়ের ওই মাদ্রাসা সূত্রে জানানো হয়েছে, ঈদুজ্জোহার কারণে ছুটি থাকায় তাদের সব শিক্ষার্থী বাড়ি গিয়েছে। তারা কেউ পলাতক নয়। ছুটি শেষেই তাদের ফেরার কথা।

অন্য মামলায় আগেই ধরা পড়েছিল, এমন কারও কারও সঙ্গে অভিযুক্তদের যোগাযোগ থাকতে পারে বলেও অনুমান করা হচ্ছে। বাংলাদেশের জেল ভেঙে পালিয়ে আসা, মালেক বিপুল চৌধুরি নামে কুষ্টিয়ার এক মাদক পাচারকারীকে পুজোর আগেই বিমানবন্দর এলাকা থেকে ধরা হয়েছিল। এ দিন তাকে জেল থেকে বার করে নিজেদের হেফাজতে নেয় বিধাননগর পুলিশ। জানা গিয়েছে, কিছু দিন মুর্শিদাবাদের লালগোলায় ডেরা বেঁধেছিল সে। রাত পর্যন্ত বিধাননগর উত্তর থানায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

(সহ-প্রতিবেদন: সুনন্দ ঘোষ ও বিমান হাজরা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE