সাংবাদিকদের মুখোমুখি অমিত মিত্র। নবান্নে। —নিজস্ব চিত্র।
আজ, মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারে শহরে আসছেন রাহুল গাঁধী। তার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রের ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে আর্থিক বঞ্চনার অভিযোগ ফের উস্কে দিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এ দিন নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র জানান, গত তিন বছরে রাজ্যের হকের ৮৭ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্র হয় কেটে নিয়েছে, অথবা দেয়ইনি। এই অর্থ পেলে রাজ্যের উন্নয়নের কাজ আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো বলে আক্ষেপও করেন অমিতবাবু।
এমন একটা দিনে অমিতবাবু এই অভিযোগ করলেন, যে দিন রাজ্য কর্মচারীদের সংগঠনগুলি একযোগে নিজেদের বকেয়া ডিএ-সহ বিভিন্ন দাবিদাওয়ার প্রসঙ্গ তুলে রাজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার কথা ঘোষণা করেছে। এই আন্দোলনে কো-অর্ডিনেশনের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তাদের বিরোধী সংগঠন নবপর্যায়।
রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা কেন দেওয়া হচ্ছে না, সরাসরি না হলেও তার জবাব একাধিক বার দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও জানিয়েছেন, এ সবের পিছনে রয়েছে বছরের গোড়াতেই কেন্দ্রের বিপুল পরিমাণ অর্থ কেটে নেওয়া। শুধু কর্মীদের বেতন-ভাতাই নয়, এর ফলে উন্নয়নের কাজও ব্যাহত হচ্ছে। ভোটের প্রচার মঞ্চেও কেন্দ্রের বঞ্চনার এই অভিযোগ তুলতে শুরু করে দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী।
রাহুল-আগমনের এক দিন আগে নেত্রীর সুরেই অমিত বলেছেন, “অত্যন্ত ক্ষোভ, রাগ এবং অভিমানের সঙ্গে প্রকাশ্যে এ কথা বলতে এসেছি।” তাঁর প্রশ্ন, “পশ্চিমবঙ্গ কি এতই ছোট? কেন্দ্র গ্রিসের ভেঙে পড়া অর্থনীতি উদ্ধারে অর্থ সাহায্য করল, আর এ রাজ্যের জন্য কানাকড়িও জুটল না!” তাঁর মন্তব্য, “কেন্দ্র আর্থিক-প্রহার করছে।”
এ দিন এই অভিযোগ তোলার পিছনে কি পরিকল্পিত রাজনীতি রয়েছে? অমিতের সাংবাদিক বৈঠকের পরে এই প্রশ্নই উঠেছে রাজ্যের সব রাজনৈতিক শিবিরে। কংগ্রেসেরও বক্তব্য, অনেক ভেবেচিন্তেই অমিত বিষয়টি তুলেছেন। কারণ, আজ কলকাতার সভায় কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে রাজ্যের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হবেন রাহুল। তা আন্দাজ করেই আগে থেকে আক্রমণের পথে গেল রাজ্য সরকার।
কী কী অভিযোগ তুলেছেন অর্থমন্ত্রী? তিনি জানান, বাম আমলের প্রায় ২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের জন্য তিন বছরে সুদে আসলে ৭৬ হাজার ৭০২ কোটি টাকা কেটে নিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রের আদায়কৃত বিক্রয় করের অংশ থেকে রাজ্যের প্রাপ্য ৩৭৮৩ কোটি টাকাও দেয়নি তারা। আয়কর, অন্তঃশুল্ক, পরিষেবা কর বাবদ এ রাজ্য থেকে যে পরিমাণ টাকা তুলে নিয়ে যায় দিল্লি, তার একটি নির্দিষ্ট অংশ রাজ্যের ফেরত পাওয়ার কথা। দেখা যাচ্ছে, শুধু চলতি আর্থিক বছরের প্রথম তিন মাসে ২৫০০ কোটি টাকা রাজ্যকে কম দিয়েছে কেন্দ্র। এ ছাড়াও জেএনএনইউআরএম-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দের ৪৩০০ কোটি টাকা ছাঁটাই করা হয়েছে।
রাজ্যের এই অভিযোগ উড়িয়ে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, ঋণ নিলে সুদ-আসল কেটে নেওয়া নতুন কিছু নয়। সমস্ত রাজ্যের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম প্রযোজ্য। একই সঙ্গে মন্ত্রকের দাবি, অর্থনীতির নিয়মেই সার্বিক কর আদায় কম হলে রাজ্যের প্রাপ্যও কমে যায়। রাজ্যের বিরুদ্ধে অর্থ মন্ত্রকের পাল্টা অভিযোগ, “যে সব প্রকল্পে টাকা খরচের পর নিয়ম মেনে ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছে রাজ্য, সেখানে বরাদ্দ আটকানো হয়নি। কিন্তু কিছু প্রকল্পে রাজ্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা খরচ করতে পারেনি। এ কথা সরকারের শীর্ষকর্তাদেরও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে পরিকল্পনা খাতের ৩০% বরাদ্দ ছাঁটাই করেছে কেন্দ্র। তাই বিভিন্ন প্রকল্পের প্রাপ্য টাকাও কমে গিয়েছে। এ জন্য শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, সব রাজ্যেরই বরাদ্দ ছাঁটাই হয়েছে।
টাকা নেই বলে অমিত মিত্র যে দিন কেন্দ্রের ঘাড়ে দায় চাপালেন, সে দিনই প্রেস ক্লাবে সাংবাদিক বৈঠক করে কর্মচারীদের ছ’টি সংগঠন একযোগে রাজ্যের বিরুদ্ধে বঞ্চনা-সহ নানা অভিযোগ তুলে যৌথ আন্দোলনের কথা ঘোষণা করেছে। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য শিকেয় তুলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামবে বলে জানিয়েছে রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটি ও নবপর্যায়-সহ ছ’টি সংগঠন। তাদের বক্তব্য, ৪২% মহার্ঘ ভাতা বাকি রেখে কর্মীদের বঞ্চনা করেছে রাজ্য। সরকারি কর্মীদের পিঠ ঠেকে গিয়েছে দেওয়ালে। তাই ভেদাভেদ ভুলে একসঙ্গে আন্দোলন নামার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কংগ্রেসের কর্মী সংগঠন মঞ্চে না এলেও নীতিগত ভাবে যৌথ আন্দোলনের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে। যদিও কংগ্রেস প্রভাবিত ওই সংগঠন কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ-এর নেতা মলয় মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “বাম আমলে সরকারের বিরুদ্ধে আমরা যখন আন্দোলন করেছি, তখন কো-অর্ডিনেশনের সমর্থকেরা আমাদের বিরুদ্ধে নানা সময়ে চড়াও হয়েছেন। তাই এখনই ওই সংগঠনের সঙ্গে একযোগে আন্দোলনে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy