Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
পলাশি

রাজ্যের একমাত্র ‘স্পোর্টস মাদ্রাসা’ তৈরি হচ্ছে নদিয়ায়

ব্লক ও জেলা স্তরে দৌড় প্রতিযোগিতায় নজরকাড়া সাফল্য মিলেছিল। কিন্তু গেল বছর পনেরোর ওয়াহাব শেখ মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় রাজ্য স্তরে তেমন সাফল্য পায়নি। এখন সংসারের নিত্য অনটনের সঙ্গে যুঝতে গিয়ে ওয়াহাবকে কার্যত ছেড়ে দিতে হয়েছে খেলাধুলো।

মনিরুল শেখ
কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫২
Share: Save:

ব্লক ও জেলা স্তরে দৌড় প্রতিযোগিতায় নজরকাড়া সাফল্য মিলেছিল। কিন্তু গেল বছর পনেরোর ওয়াহাব শেখ মাদ্রাসা ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় রাজ্য স্তরে তেমন সাফল্য পায়নি। এখন সংসারের নিত্য অনটনের সঙ্গে যুঝতে গিয়ে ওয়াহাবকে কার্যত ছেড়ে দিতে হয়েছে খেলাধুলো। প্রতিশ্রুতিমান ওয়াহাব এখন দু’বেলা পেটের ভাত জোগাড় করতেই দৌড়ে বেড়াচ্ছে। নদিয়ার প্রান্তিক লোকালয় চাপড়ার বেলতলা হাই মাদ্রাসার পড়ুয়া ওয়াহাব একা নয়, তার সহপাঠী সেন্টু ও সানিরুল শেখদেরও একই অবস্থা। উপযুক্ত অনুশীলন ও সংসারে নিত্য অভাব এদের ক্রীড়াবিদ হওয়ার স্বপ্নে জল ঢেলে দিয়েছে।

অকালে হারিয়ে যাওয়া ক্রীড়াবিদদের জন্য রাজ্যে প্রথম ‘পশ্চিমবঙ্গ স্পোর্টস মাদ্রাসা ইনস্টিটিউশন’ তৈরি হচ্ছে নদিয়ার পলাশীতে। যুদ্ধক্ষেত্রের অদূরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে কয়েক কিলোমিটার ভিতরে প্রায় তেত্রিশ বিঘে জমির উপর ওই প্রতিষ্ঠান তৈরির কাজ শুরু হয়েছে মাস খানেক আগে। মাস সাতেক আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কা‌লীগঞ্জের পাগ‌লাচণ্ডীর সভায় ওই ‘ইনস্টিটিউশন’ গড়ার কথা করে‌ন। সেই মত চলতি আর্থিক বছরে এই খাতে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও মাদ্রাসা বিষয়ক দফতর প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বরাদ্দ করে। কিছু দিন আগে ওই টাকার অর্ধেক হাতে পায় নদিয়া জেলা পরিষদ। ওই প্রতিষ্ঠান তৈরির জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেছে জেলা পরিষদ। দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদার সংস্থা কাজও শুরু করেছে। প্রকল্পের বিস্তারিত রিপোর্ট তৈরির কাজও শেষ হয়েছে দিন কয়েক আগে। জেলার সংখালঘু বিষয়ক দফতরের আধিকারিক নাভেদ আখতার ইতিমধ্যে ওই প্রতিষ্ঠানের জমি খতিয়ে দেখেন। স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিষদীয় সচিব তৃণমূলের নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই ইনস্টিটিউশন গড়তে আট কোটি টাকা খরচ হবে। সব টাকা ধাপে ধাপে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর দেবে।’’

রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লার বক্তব্য, “নদিয়ার ওই প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজ জোরকদমে চলছে। আশা করি ২০১৫ সালের মাঝামাঝি নাগাদ কাজ শেষ হবে।”

পশ্চিমী দেশগুলিতে ক্রীড়াক্ষেত্রে উত্‌সাহী পড়ুয়াদের স্কুল স্তর থেকে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও এ দেশে সেরকম কোনও কিছুর চল নেই। তাই নির্মীয়মান এই ‘স্পোর্টস ইনস্টিটিশন’কে ঘিরে স্বপ্ন দেখছেন জেলার ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ।

এই প্রতিষ্ঠানের বিশেষত্ব কী? সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রতিষ্ঠানে একই ছাদের তলায় হস্টেল ও স্কুল থাকবে। পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা ওই প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা ও খেলাধুলার প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগ পাবে। প্রায় চারশো পড়ুয়ার স্থান সংকুলান হবে এমন পরিকাঠামো যুক্ত হস্টেল নির্মাণ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে আবাসিক করার পিছনে দফতরের এক উচ্চ পদস্থ কর্তার যুক্তি, অনেকক্ষেত্রে পড়ুয়ারা মাদ্রাসা থেকে খেলাধুলোর প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়ি ফিরে রুজি রোজগারের ধান্দায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সকাল-সন্ধ্যায় বাড়িতে অনুশীলনের কোনও সুযোগ মেলে না। তাছাড়া অনেকে নিয়মিত স্কুলেও আসতে পারে না। সেই কারণেই আবাসিকের করার ভাবনা। হস্টেলে থেকে পড়ুয়ারা নিরবচ্ছিন্ন অনুশীলনের সুযোগ পাবে। পড়ুয়াদের অনুশীলনের জন্য তৈরি করা হবে উন্নত মানের ট্র্যাক, লং ও হাই জাম্পের জন্য জাতীয় মানের পরিকাঠামোও তৈরি করা হবে। এছাড়াও প্রশিক্ষণরত ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ইনস্টিটিশনের অন্দরেই থাকবে জিম ও সুইমিং পুল। শুধু অ্যাটলেটিকই নয়, ফুটবল ও ক্রিকেটের মত খেলারও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, “গ্রাম-গঞ্জে অনেকের মধ্যে সেনা-আধা সেনা বা পুলিশে চাকরি করার ঝোঁক রয়েছে। ওই ইনস্টিটিউশনে তাঁদেরও সকালের দিকে দৌড়-ঝাঁপের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।” মাদ্রাসা শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, ওই প্রতিষ্ঠানকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ক্রীড়া দফতরের সাহায্য নেওয়া হবে।

স্কুল স্তরে খেলাঘুলাকে উত্‌সাহ দিতে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের এই উদ্যোগে খুশি জেলার একাধিক হাই মাদ্রাসার খেলাধুলার শিক্ষকরা। চাপড়ার বেলতলা হাই মাদ্রাসার শিক্ষক রমেশচন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “আমাদের মাদ্রাসার অনেক পড়ুয়ারাই বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতায় জে‌লা স্তরে ভাল ফল করে। কিন্তু উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে তারা রাজ্য বা জাতীয় স্তরে এঁটে উঠতে পারে না। এই ধরনের প্রতিষ্ঠানে এই হারিয়ে যাওয়া প্রতিভাদের ঠাঁই হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sports madrasah nadia manirul sheikh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE