Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

দোলেও দূরপাল্লার বাস কম, বিরক্ত শিল্পাঞ্চল

দোল আসছে। শনিবার ও রবিবারের সরকারি ছুটি তো আছেই। দোল উপলক্ষ্য রাজ্য সরকার সোমবারও ছুটি ঘোষণা করেছে। তিন দিনের টানা ছুটি পেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়বার তাল ঠুকছেন শিল্পাঞ্চলবাসী। কিন্তু যাতায়াতের সমস্যায় শেষ পর্যন্ত সেই ইচ্ছে কতখানি পূরণ হবে তা নিয়ে অনেকেই ঘোর সন্দিহান।

সুশান্ত বণিক ও বিপ্লব ভট্টাচার্য
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০৪:১৯
Share: Save:

দোল আসছে। শনিবার ও রবিবারের সরকারি ছুটি তো আছেই। দোল উপলক্ষ্য রাজ্য সরকার সোমবারও ছুটি ঘোষণা করেছে। তিন দিনের টানা ছুটি পেয়ে ব্যাগ গুছিয়ে বেড়িয়ে পড়বার তাল ঠুকছেন শিল্পাঞ্চলবাসী। কিন্তু যাতায়াতের সমস্যায় শেষ পর্যন্ত সেই ইচ্ছে কতখানি পূরণ হবে তা নিয়ে অনেকেই ঘোর সন্দিহান।

দোলের সময়ে রাজ্যের অন্যান্য জায়গার মতই দুর্গাপুর ও আসানসোল শিল্পাঞ্চল থেকেও বহু মানুষ বীরভূমের শান্তিনিকেতনে বেড়াতে যান। কিন্তু শিল্পাঞ্চল থেকে শান্তিনিকেতন যাওয়ার জন্য সরকারি বাসের সংখ্যা মাত্র দু’টি। বেসরকারি বাস থাকলেও সন্ধ্যা ৬টার পরে তার দেখা পাওয়া যায় না। কাছেপিঠে থাকা অন্য পর্যটনকেন্দ্রগুলিতে যাওয়ার ক্ষেত্রেও রয়েছে যাতায়াতের প্রবল সমস্যা।

দুর্গাপুর থেকে বাঁকুড়ার মুকুটমনিপুরের দুরত্ব কমবেশি ১০০ কিমি দূরে। সেখানে থাকার জন্য সরকারি বাংলো থেকে বিভিন্ন বেসরকারি হোটেল সবই রয়েছে। কংসাবতী ও কুমারী নদীর এই মিলনস্থলে রয়েছে নৌকাবিহারের ব্যবস্থা। রয়েছে পরেশনাথ পাহাড়, ডিয়ার পার্কের মত দর্শনীয় স্থান। কিন্তু মুকুটমনিপুর যাওয়ার জন্য দুর্গাপুর কিংবা আসানসোল থেকে একটিও সরকারি বাস নেই। কয়েকটি বেসরকারি বাস থাকলেও সেগুলি চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত নয়। ফলে মুকুটমণিপুর যেতে হলে পর্যটকের ভরসা নিজের গাড়ি অথবা চড়া ভাড়া গুনে নেওয়া ভাড়া গাড়ি।

শিল্পাঞ্চল এলাকা থেকে পাহাড় ও জঙ্গল ঘেরা পুরুলিয়ার গড়পঞ্চকোটের দূরত্বও খুব বেশি নয়। এখানে বহু প্রাচীন গড়ের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও রয়েছে অনেকগুলি টেরাকোটার মন্দির। পাহাড়ের কোলে থাকা কাশীপুর রাজার তৈরি শিব মন্দিরটিও দেখার মতো। থাকার জন্য রয়েছে রাজ্য বন দফতরের অনেকগুলি কটেজ। কিন্তু গড়পঞ্চকোট যাওয়ার জন্য সারাদিনে সাকুল্য একটি সরকারি বাস চলে। বেসরকারি বাস রয়েছে তিনটি। বাস না পেলে ভরসা বরাকর বা কুমারডুবি রেল ষ্টেশন থেকে নেওয়া ভাড়ার গাড়ি। কিন্তু সেটাও আবার নিয়মিত মেলে না। শহরবাসীর দাবি, সকালের দিকে যদি বরাকর বা কুমারডুবি স্টেশনে থামা ট্রেনের সময় অনুযায়ী একটি বা দুটি বাস চালানো হলে সমস্যা কিছুটা মিটবে।

ছোটখাট পাহাড় ও টিলা ভর্তি বাঁকুড়ার বিহারীনাথও দু’একদিন বেড়াবার জন্য আদর্শ। এথানে থাকার জায়গা থাকলেও যাতায়াতের ব্যবস্থা মোটেও ভালো নয়। বিহারানাথে যাওয়ার জন্য কোনও সরকারি বাস নেই। বেসরকারী বাস থাকলেও নিয়মিত নয়। রানিগঞ্জ, বাঁকুড়া বা পুরুলিয়ার মধুকুন্ডা থেকে গাড়ি ভাড়া করে অথবা শেয়ারের ট্রেকারে চেপে অনেক ঝক্কির পরেই বিহারীনাথে পৌঁছানো সম্ভব।

আসানসোল থেকে পুরুলিয়ার অয্যোধা পাহাড়ের দুরত্ব ৮৫ কিমি। এখানে থাকার জন্য একাধিক জায়গাও রয়েছে। কিন্তু আসানসোল বা দুর্গাপুর থেকে সরাসরি অয্যোধা পাহাড়ে যাওয়ার জন্য নেই কোনও সরকারি ও বেসরকারি বাস। শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দাদের অয্যোধা পাহাড়ে যেতে হলে ঘুরপথে পুরুলিয়া হয়ে যেতে হয়। চারদিকে পাহাড়ঘেরা পুরুলিয়ার বড়ন্তিও ঘুরতে যাওয়ার ভাল জায়গা। পলাশ শিমুল মহুয়া গাছে ঘেরা এই জায়গা নিরিবিলিতে বিশ্রাম নেওয়া যায়। থাকার জন্য রয়েছে বেসরকারি হোটেল। বড়ন্তি যেতে হলে পুরুলিয়ার মুরাড্ডি স্টেশনে নেমে রিক্সা ছাড়া উপায় নেই। আর রিক্সা না পেলে স্টেশন থেকে হাঁটতে হবে প্রায় ৬ কিলোমিটার। ফলে নিজেদের গাড়ি ছাড়া এই এলাকায় নিশ্চিন্তে যাওয়া সম্ভব নয় বললেই চলে।

আসানসোল ও দুর্গাপুর-দুই শহরের মানুষেরই দীর্ঘদিনের দাবি, পাশের জেলাগুলির দর্শনীয় স্থানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো হোক। যাতায়াতের সমস্যার কথা স্বীকার রপে দক্ষিনবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহন সংস্থার চেয়ারম্যান তমোনাশ ঘোষ বলেন, “জওহরলাল নেহেরু আরবান রিনিউয়াল মিশনের বেশ কিছু বাস পাওয়ার কথা রয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন বেড়াবার জায়গায় যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হবে’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

holi bus sushanta banik biplab bhattacharya
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE