Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঢিলেঢালা প্রহরা, চেনা চরিত্র বহাল সীমান্তে

বর্ষা অন্তেও বিস্তার কমেনি পদ্মার। মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা ব্লকে বিস্তীর্ণ সেই পদ্মায় এখন রাত জাগা মাঝি-মল্লার চিংড়ি ধরার হিড়িক। এ পাড়ে নির্মলচরের আলেখপাড়ার বসত। প্রশস্ত নদীর বুক থেকে মাঝে মধ্যেই সেই মেছো-নৌকা এসে ভিড়ছে চরের ঘাটে। ওপারে জেগে আছে বাংলাদেশের রাজশাহী।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৩৯
Share: Save:

বর্ষা অন্তেও বিস্তার কমেনি পদ্মার।

মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলা ব্লকে বিস্তীর্ণ সেই পদ্মায় এখন রাত জাগা মাঝি-মল্লার চিংড়ি ধরার হিড়িক। এ পাড়ে নির্মলচরের আলেখপাড়ার বসত। প্রশস্ত নদীর বুক থেকে মাঝে মধ্যেই সেই মেছো-নৌকা এসে ভিড়ছে চরের ঘাটে। ওপারে জেগে আছে বাংলাদেশের রাজশাহী।

নির্মলচরের ফ্লাড শেল্টারে বসে থাকা বিএসএফ জওয়ান ঘাটে ভেড়া সেই সব নৌকাগুলো দেখিয়ে নির্বিকার গলায় বলছেন, “কেয়া মালুম, কৌন ইস্ দেশ কা হ্যায়!”

বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরে সীমান্ত জুড়ে ‘বিশেষ সতকর্তা’ জারি হয়েছে। তবে তা কার্যত কাগজে কলমেই থমকে রয়েছে। বুধবার, রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ২২১৭ কিলোমিটার বাংলাদেশ-সীমান্তের আনাচকানাচ ঘুরে উঠে এসেছে ঢিলেঢালা পাহারার এমনই গয়ংগচ্ছ ছবি। যা থেকে স্পষ্ট, চেনা চরিত্র নিয়ে সীমান্ত রয়েছে সীমান্তেই।

স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে সীমান্তরক্ষীদের টহলদারি, ‘পারাপারের গেট’-এ নিয়মমাফিক পরিচয়পত্র যাচাই কিংবা সকাল সন্ধ্যা কাঁটাতারের বেড়া পরীক্ষাউত্তর কিংবা দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সীমান্তের এই চেনা ছবি ধরা পড়লেও এই বিশেষ পরিস্থিতিতে বিএসএফের বাড়তি সতর্ককতার কোনও ছবি যে চোখে পড়েনি তা স্বীকার করেছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরাও।

দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগঞ্জের বটুন কিংবা মাধবপুর সীমান্তে পা দিয়ে যেমন বোঝা গিয়েছে, ‘ধাক্কা পাসপোর্ট’-এর (অবৈধ ভাবে সীমান্ত পারাপার) রমরমায় এ দিনও ভাটা পড়েনি। বিএসএফ-বিজিবি-র ‘বাড়তি নজরদারি’ সত্ত্বেও এ দিন ওই এলাকার পরিচিত দুই দালালের হাত ধরে যথারীতি সীমানা পেরিয়ে গিয়েছেন বহু অনুপ্রবেশকারী। সীমান্তে দাঁড়িয়ে সগর্বে ওই দালালরা এ দিনও জানিয়েছেন, এলাকাটা তাঁরা ‘হাতের তালুর মতো’ চেনেন। অদূরে হিলি সীমান্তের চেহারাটা আরও খোলামেলা। সেখানে বাগমারা গ্রামের বহু বাড়ির রান্নাঘর আর উঠোন ভেদ করে গিয়েছে সীমান্ত। সেই গ্রামের এক মহিলা মৃদু হেসে বলেন, “এ ভাবে কী অনুপ্রবেশ রোখা যায়!” কাঁটাতারহীন নদিয়ার কাছারিপাড়া সীমান্তেও ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’-এর জমি থেকে চাষ করে বাড়ি ফেরার পথে এক চাষি পাল্টা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, “বর্ডার পেরোতে অসুবিধা হবে কেন, কিছু হয়েছে নাকি?”

জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, দুই দিনাজপুর কিংবা দক্ষিণের নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ‘কড়া নজরদারি’র এমনই বহু ছবির হদিস মিলেছে এ দিন।

বিএসএফের শীর্ষ কর্তারা এ দিনও কলকাতায় দাবি করেছেন, শুধু প্রহরা বাড়ানো নয়, সীমান্তের কিছু এলাকায় বাড়তি কর্মী নিয়োগের কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু নদিয়া কিংবা মুর্শিদাবাদের অধিকাংশ ‘চৌকি’তে এক জনের বেশি বিএসএফ জওয়ানের দেখা মেলেনি। নদিয়ার হোগলবেড়িয়ার নাসিরেরপাড়া থেকে বাউসমারি কিংবা বা জলঙ্গি এলাকায় কোনও কাঁটাতারের বেড়া নেই। সেখানে বহু চৌকিতে কোথাও এক জন কোথাও বা শূন্য চৌকিও চোখে পড়েছে। বিএসএফ সূত্রে দাবি, বাড়তি কর্মী না থাকায় এই বিপত্তি। মুর্শিদাবাদের রানিনগর এলাকার এক বিএসএফ কর্তার জবাব, “সীমান্তে সবসময় কড়া নজরদারি থাকে। তেমনই চলছে।” তবে, ফরাক্কা থেকে লালগোলার খান্ডুয়া পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বর্ধমান কাণ্ডের পর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করে বিএসএফের ২০ নম্বর ব্যাটালিয়নের এক কর্তা বলেন, “নজরদারি বাড়ানো হয়েছে জলপথে। তবে জওয়ানের সংখ্যা বাড়েনি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE