Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বিজেপির পাশেই মোর্চা

পাহাড় ছাড়াও সমর্থন ডুয়ার্সের দুই আসনে

দার্জিলিং রইল দার্জিলিঙেই। রাজ্যসভা ভোটে তৃণমূলকে সমর্থন করলেও লোকসভা নির্বাচনে ফের বিজেপির হাতই ধরল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সোমবার সকালে নয়াদিল্লিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যৌথ ভাবে মোর্চা জানিয়ে দিল, দার্জিলিং তো বটেই, এক ধাপ এগিয়ে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার আসনেও তারা বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থন করবে।

পাশে আছি। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের সঙ্গে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। সোমবার নয়াদিল্লিতে। —নিজস্ব চিত্র।

পাশে আছি। বিজেপি সভাপতি রাজনাথ সিংহের সঙ্গে মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। সোমবার নয়াদিল্লিতে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৪ ০৩:২২
Share: Save:

দার্জিলিং রইল দার্জিলিঙেই।

রাজ্যসভা ভোটে তৃণমূলকে সমর্থন করলেও লোকসভা নির্বাচনে ফের বিজেপির হাতই ধরল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। সোমবার সকালে নয়াদিল্লিতে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে যৌথ ভাবে মোর্চা জানিয়ে দিল, দার্জিলিং তো বটেই, এক ধাপ এগিয়ে জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার আসনেও তারা বিজেপি প্রার্থীদের সমর্থন করবে।

কেন তাঁরা ফের বিজেপির হাত ধরলেন, এ দিন নয়াদিল্লিতে তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। তিনি বলেন, “বিজেপি ক্ষমতায় আসবে। কংগ্রেস আসবে না। তাই বিজেপির সঙ্গে জোট গড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল।” সেই সঙ্গে তিনি ফের রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে পাহাড়ে বিভেদের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন। জিটিএ-তে কেন্দ্র টাকা দিলেও রাজ্য তার অংশ দিচ্ছে না বলেও তাঁর অভিযোগ। গুরুঙ্গের বক্তব্য, “তৃণমূল ভুলে যাচ্ছে, আমাদেরও পাহাড়ের মানুষের কথা ভাবতে হবে।” এ দিনের ঘোষণার পরে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিংহ খুশি। তিনি বলেন, “মোর্চা গত লোকসভা ভোটের মতো এ বারেও আমাদের সমর্থন করেছে। আমরা খুশি।”

তবে মোর্চার একাংশের বক্তব্য, এ ছাড়া বিমল গুরুঙ্গদের সামনে অন্য পথও খোলা ছিল না। এর একাধিক কারণ রয়েছে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা। প্রথমত, মোর্চা নেতৃত্ব মনে করছেন, ভাইচুং ভুটিয়াকে প্রার্থী করে তৃণমূলের একতরফা ঘোষণার পরে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছিল, পাহাড়ের একমাত্র আসনে প্রার্থী ঠিক করার কর্তৃত্বও কি দলের হাত থেকে চলে গিয়েছে! এ বারে বিজেপিকে সমর্থনের কথা ঘোষণার পরে পাহাড়ে মোর্চার প্রভাব নিয়ে যে সংশয় তৈরি হয়েছিল, তা কেটে যাবে। দ্বিতীয়ত, তৃণমূলের সঙ্গে সম্প্রতি সম্পর্ক ভাল হলেও গুরুঙ্গ বিলক্ষণ জানতেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কখনওই গোর্খাল্যান্ড সমর্থন করবেন না। অথচ গুরুঙ্গ নিজেই বলেন, তাঁর হৃদয়ে গোর্খাল্যান্ড। উল্টো দিকে, বিজেপি বরাবরই নীতিগত ভাবে ছোট রাজ্যের পক্ষপাতী। এ বারে তারা যদি ক্ষমতায় আসে, তা হলে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে তাদের উপরে চাপ বাড়াতে পারবেন মোর্চা নেতৃত্ব।

এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে অবশ্য মোর্চার তরফে বিজেপিকে সমর্থনের জন্য কোনও আগাম শর্ত আরোপ করেননি গুরুঙ্গ। তবে মোর্চার যে প্রতিনিধিদল দিল্লিতে রয়েছে, তার অন্যতম সদস্য তথা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা রাজু প্রধান বলেন, “পাহাড়বাসীর গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে যে আবেগ রয়েছে, নির্বাচনী ইস্তেহারে তার উল্লেখ করা হবে বলে বিজেপি নেতারা আশ্বাস দিয়েছেন।” যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ দাবি করেন, বাংলা ভাগের যে প্রশ্নই ওঠে না, সে কথা স্পষ্ট করে মোর্চাকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাহুলবাবু সোমবার বলেন, “গোর্খাদের সঙ্গে বিজেপির নিবিড় সম্পর্কই প্রমাণিত হল এই সিদ্ধান্তে। ফলে পাহাড়বাসীর উন্নতি ত্বরান্বিত হবে।”

পাহাড়ের রাজনীতি সম্পর্কে যাঁরা ওয়াকিবহাল, তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে দায়মুক্ত হল তৃণমূলও। গুরুঙ্গদের ‘হৃদয়ে গোর্খাল্যান্ড’-এর দায় আর তাদের বইতে হবে না। তবে একই সঙ্গে মোর্চার প্রভাবের সঙ্গে লড়াইও করতে হবে। মোর্চা সভাপতি গুরুঙ্গ এ দিনই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বললেন, “ভাইচুং যদি পাহাড়ে ১৫ হাজারের বেশি ভোট পান, তা হলে রাজনীতি ছেড়ে দেব।”

তৃণমূল নেতৃত্ব এখন তাই চাইছেন, পাহাড়ের নেতা-কর্মীরা সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ুন। সেই মতো পাহাড়ে পৌঁছে গিয়েছে দলনেত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের নির্দেশও। তাঁরা জানিয়ে দিয়েছেন, দার্জিলিং তো বটেই, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ার আসনেও জয় নিশ্চিত করতে লড়াই শুরু করে দিক দল। দলের উত্তরবঙ্গের কোর কমিটির চয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “দার্জিলিঙের উন্নয়নের জন্য আমাদের দলনেত্রী সব কিছু করছেন ও করবেন। কিন্তু বাংলা ভাগ হবে না। তা নিয়ে কোনও বোঝাপড়ার প্রশ্ন নেই। এখন মোর্চা কেন বিজেপির হাত ধরল, ওই দু-দলের মধ্যে কী গোপন বোঝাপড়া হল, সেটা ওঁরাই জানেন।” এর পরেই গৌতমবাবুর সংযোজন, “পাহাড়ে কে কত ভোট পাবেন, তা পাহাড়বাসী ঠিক করবেন। কারও একার কথায় পাহাড়ের ৬ লক্ষ ভোটার ওঠাবসা করেন না।”

এখন প্রশ্ন, দার্জিলিঙে বিজেপির প্রার্থী কে হবেন? গত বারের সাংসদ যশোবন্ত সিংহ দার্জিলিং থেকে লড়তে চান না। তাঁর ছেলেকে প্রার্থী করার কথা উঠেছে। কিন্তু মোর্চা চাইছে, এমন কাউকে প্রার্থী করা হোক, যাঁকে পাহাড়বাসী চেনেন। গুরুঙ্গদের প্রথম পছন্দ ছিলেন রাজীবপ্রতাপ রুডি। রুডির সঙ্গে মমতারও সম্পর্ক ভাল। গত কয়েক বছরে যশোবন্তের হয়ে রুডিই মোর্চাদের কাজ দেখেছেন। কিন্তু এ বার বিহারের ছাপড়া থেকেই লড়তে চান রুডি। সে ক্ষেত্রে বাপ্পি লাহিড়িকে প্রার্থী করানোর ব্যাপারেও বিজেপি রাজ্য নেতৃত্ব প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু মোর্চা নেতারা মনে করেন, বাপ্পি লড়লে ভাইচুং জিতে যেতে পারেন। বিজেপি নেতা ও রাজ্যসভার প্রাক্তন সাংসদ সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়ার নামও ভাবা হচ্ছে। অহলুওয়ালিয়া অবশ্য রাজ্যসভায় লড়তেই বেশি আগ্রহী। মোর্চা কিন্তু বুঝিয়ে দিয়েছে, রুডি না হলে অহলুওয়ালিয়াকে তাদের চাই। গত বারে অহলুওয়ালিয়াই যশোবন্তের নাম প্রস্তাব করেন। গুরুঙ্গ বলেন, “আগামী ২-৩ দিনের মধ্যেই সেটি চূড়ান্ত হয়ে যাবে।” মোর্চার সমর্থন সুনিশ্চিত হওয়ার পর বিজেপির মুখপাত্র মীনাক্ষী লেখিও দার্জিলিং থেকে লড়তে আগ্রহী।

রাহুলবাবুও কলকাতায় বসে একই কথা জানান। সেখানে রাজ্যের বাইরের কাউকে প্রার্থী করার সম্ভাবনাই প্রবল বলে তাঁর বক্তব্য। সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর তরফে তাঁকে এ দিন ফোন করা হয় বলে রাহুলবাবুর দাবি। মহাশ্বেতাদেবীর পালিতা কন্যা অঞ্জলি ওরাওঁ-কে আলিপুরদুয়ার থেকে বিজেপির প্রার্থী করার জন্য তাঁকে অনুরোধ করা হয় বলে রাহুলবাবু দাবি করেন। তাঁর কথায়, “এই অনুরোধ শুনে বলে দিয়েছি, অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি আমরা। নতুন করে ভাবনাচিন্তা অসম্ভব।” তবে মহাশ্বেতাদেবীর দাবি, তিনি বা তাঁর তরফে কেউ রাহুলবাবুকে ফোন করেননি। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “আমি নীরব ব্যক্তি। ফোন করিনি। আমার তেমন দরকার নেই। রাহুলবাবু কেন এ সব বলছেন, জানি না!”

দু’পক্ষের জোট পাকা হলে দেশের সর্বত্র বিজেপিকে জেতাতে গোর্খাদের প্রতি ফেসবুকে বার্তা দেন গুরুঙ্গ। যার অর্থ, এনডিএ শরিক হিসেবেই এখন কাজ করবে মোর্চা। গুরুঙ্গও বিজেপির প্রার্থীকে সমর্থনের জন্য দেহরাদূন বা অসমের গোর্খা অধ্যুষিত এলাকায় প্রচার করবেন। এ দিন সন্ধ্যায় লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গেও দেখা করেন গুরুঙ্গ।

ভাইচুং ভুটিয়া যদি পাহাড়ে ১৫ হাজারের বেশি ভোট পান, তা হলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব।
বিমল গুরুঙ্গ
মোর্চা সভাপতি

কে কী পাবেন, পাহাড়বাসীই ঠিক করবেন। কারও একার কথায় ৬ লাখ ভোটার ওঠবোস করে না।
গৌতম দেব
উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE