Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

সাহায্যের প্রতিশ্রুতি রাখেনি রেল, ক্ষোভ

প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি রেল। ফলে, তাদের এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা। এমনই অভিযোগ ঘাটশিলার বাসিন্দা হাবুল গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিবারের।লোকাল ট্রেনের শৌচাগার বন্ধ থাকায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন থেকে নেমেছিলেন ঘাটশিলার বাসিন্দা হাবুলবাবু।

ঝাড়গ্রামে বড় শ্যালকের বাড়িতে হাবুলবাবু ও তাঁর স্ত্রী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

ঝাড়গ্রামে বড় শ্যালকের বাড়িতে হাবুলবাবু ও তাঁর স্ত্রী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৮ মার্চ ২০১৪ ০৪:০৭
Share: Save:

প্রতিশ্রুতি দিয়েও কথা রাখেনি রেল। ফলে, তাদের এখন সর্বস্বান্ত হওয়ার দশা। এমনই অভিযোগ ঘাটশিলার বাসিন্দা হাবুল গঙ্গোপাধ্যায়ের পরিবারের।

লোকাল ট্রেনের শৌচাগার বন্ধ থাকায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রেন থেকে নেমেছিলেন ঘাটশিলার বাসিন্দা হাবুলবাবু। তার চরম মাসুল দিতে হয়েছিল তাঁকে। খড়্গপুর স্টেশনে ঢোকার কিছুটা আগে চলন্ত ট্রেনে ওঠার সময় পড়ে গিয়ে তাঁর দু’টি পা-ই কাটা যায়। ওই ঘটনার পর এক মাস কেটে গিয়েছে। বছর বাষট্টির ওই বৃদ্ধের অস্ত্রোপচার এবং তার পরবর্তী চিকিৎসায় জলের মতো টাকা চলে যাচ্ছে। কিন্তু, খোদ রেল প্রতিমন্ত্রী অধীর চৌধুরীর আশ্বাস সত্ত্বেও এখনও রেলের তরফে কোনও সাহায্যই মেলেনি বলে ক্ষোভ হাবুলবাবুর পরিবারের।

দুর্ঘটনার পরে উলুবেড়িয়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। দু’দফায় ২২ দিন সেখানে ভর্তি ছিলেন। বৃদ্ধের পরিবারের দাবি, ইতিমধ্যেই তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রায় চার লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। অভাবী হাবুলবাবুর পরিজনেরাই ধারদেনা করে চিকিৎসার খরচ জুগিয়েছেন। আপাতত ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবায়, বড় শ্যালকের বাড়িতে রয়েছেন হাবুলবাবু। উলুবেড়িয়ার ওই হাসপাতালের কর্মীরা এক দিন অন্তর ঝাড়গ্রামে এসে ড্রেসিং করে দিয়ে যান। এ জন্যও সপ্তাহে গড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়। এর সঙ্গে রয়েছে ওষুধ ও পথ্যের খরচ।

সব মিলিয়ে দিশেহারা অবস্থা হাবুলবাবুর স্ত্রী বেলাদেবীর। তাঁর ক্ষোভ, “দুই মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পরে সঞ্চয় কিছুই ছিল না। আত্মীয়রাই সাহায্য করছেন। কিন্তু, এ ভাবে কত জনের কাছে হাত পাতব? রেল প্রতিমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু, আজও রেলের তরফে কোনও সাহায্য জুটল না।”

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সস্ত্রীক হাবুলবাবু টাটানগর-খড়্গপুর মেমু লোকালে চেপে খড়্গপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। ডায়াবিটিসের রোগী হাবুলবাবুকে ঘনঘন বাথরুম যেতে হয়। কিন্তু, দূরপাল্লার ওই লোকাল ট্রেনের সব কামরায় শৌচাগার থাকলেও সেগুলির দরজা ঝালাই করে বন্ধ করা ছিল। খড়্গপুর স্টেশনের কিছুটা আগে ট্রেন থামতেই ওই বৃদ্ধ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়েছিলেন। তার পরেই ঘটে ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।

তাঁকে প্রথমে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ। হাবুলবাবুর বড় শ্যালক গোবিন্দ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, খড়্গপুরে রেল হাসপাতাল থাকা সত্ত্বেও তাঁর ভগ্নীপতিকে সেখানে নিয়ে যাননি রেল কর্তৃপক্ষ। বরং মহকুমা হাসপাতাল থেকে তাঁকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে পাঠনো হয়। পরে আত্মীয়েরাই হাবুলবাবুকে উলুবেড়িয়ার ওই হাসপাতালে ভর্তি করান। গোবিন্দবাবু জানালেন, হাবুলবাবু ওই হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি থাকার সময়ে তাঁরা খড়্গপুরে রেলকর্তাদের সঙ্গে করলে হাবুলবাবুকে হাওড়ার রেল হাসপাতালে ভর্তি করাতে বলা হয়।

গোবিন্দবাবু বলেন, “আইসিইউ থেকে কী ভাবে ভগ্নীপতিকে সরানো হবে, তা জানতে চাওয়ায় আর দায়িত্ব নিতে চায়নি রেল। উনি উলুবেড়িয়ার হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়ে এক রেলকর্মী তাঁকে দিয়ে সাদা কাগজে সই করাতে যান। কিন্তু, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বাধায় স্বাক্ষর করেননি হাবুলবাবু।” ৪ মার্চ হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে ঝাড়গ্রামে আসেন হাবুলবাবু। কিন্তু, পায়ে সংক্রমণ হওয়ায় ফের ১০ মার্চ উলুবেড়িয়ার হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ১৮ মার্চ ছাড়া পেয়েছেন।

রেল কর্তৃপক্ষ কিন্তু হাবুলবাবুর পরিবারের অভিযোগ মানতে নারাজ। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সৌমিত্র মজুমদার বলেন, “আর্থিক সাহায্য বলতে রেল বলেছিল হাবুলবাবুর চিকিৎসার ভার নেবে। এবং সেটা করা হবে রেলের হাসপাতালে। এই নির্দেশ পেয়েই খড়্গপুর ডিভিশন থেকে অফিসারেরা গিয়েছিলেন উলুবেড়িয়ার বেসরকারি হাসপাতালে। রেলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, হাওড়া রেল হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে। হাবুলবাবুর পরিবারের লোকজন বলেছিলেন, চিন্তা করে জানানো হবে।” সৌমিত্রবাবুর দাবি, কিছুই জানানো হয়নি। পরে যোগাযোগ করায় পরিবারের এক জন খড়্গপুরে ডিআরএম অফিসে গেলেও কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তার পরে আর কেউ রেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। চাইলে এখনও তাঁরা ডিআরএম অফিসে গিয়ে কথা বলতে পারেন, আশ্বাস সৌমিত্রবাবুর।

আপাতত অবশ্য চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে হাবুলবাবুর পরিবারের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম। শ্যালকের বাড়িতে স্ত্রী বেলাদেবীর সাহায্যে কোনও মতে বিছানায় উঠে বসে বললেন, “ঘাটশিলায় ছোট্ট একটা মনোহারি দোকান চালাই। আমি তো পঙ্গু হয়ে গেলাম। আত্মীয়স্বজনের ঋ

ণ শোধ করব কী ভাবে, জানি না।” আর বেলাদেবী বলেন, “শুনেছি, আমার স্বামীর পায়ের বিনিময়ে ওই ট্রেনের শৌচাগারগুলি এখন খুলে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আর কারও যেন এ রকম না হয়!”

(সহ প্রতিবেদন: অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kingshuk gupta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE